ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপ
জয়ে শুরুর পর টানা দুই হারে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
Published : 22 Oct 2024, 11:30 PM
জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ১৮ বলে ৩৭ রান। বল হাতে ছুটছিলেন ইশান মালিঙ্গা। ডেলিভারির ঠিক আগ মুহূর্তে 'ডেড বল' ডাকলেন আম্পায়ার। সেই বলকে লং অফ দিয়ে ছক্কায় ওড়ালেন আবু হায়দার। কিন্তু বল তো 'ডেড!' আবু হায়দার তা মানতে নারাজ। মাঠের বাইরে তেতে উঠল গোটা বাংলাদেশ দল। চতুর্থ আম্পায়ারের কাছে গেলেন অধিনায়ক আকবর আলি। খেলা বন্ধ থাকল বেশ কিছুক্ষণ। টিভি দেখে 'ডেড' বলের কারণ বোঝা গেল না। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তেও বদল এলো না। এরপর আর বড় শট খেলতেই পারলেন না আবু হায়দার। বাংলাদেশ পারল না লক্ষ্যের ধারেকাছে যেতেও।
শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৯ রানে হেরে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। বিদায়ের শঙ্কায় থাকা লঙ্কানরা শেষ পর্যন্ত সেমি-ফাইনালে উঠল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে।
হংকংকে হারিয়ে শুরুর পর আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে টানা হেরে গ্রুপ থেকে বিদায় নিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতায় ঠাসা ক্রিকেটারে গড়া বাংলাদেশ 'এ' দল।
ওমানের আল আমেরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মঙ্গলবার ১৬২ রানের লক্ষ্যে ২০ ওভারে বাংলাদেশ করতে পারে ১৪২।
বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুটা যেরকম ছিল, তাতে আবু হায়দারের ওই না পাওয়া ছক্কা বা তার ক্যামিও ইনিংসের অপেক্ষায় থাকারই কথা নয় দলের। পারভেজ হোসেন ইমন ও সাইফ হাসান দলকে এনে দেন ঝড়ো শুরু। পেশিতে টান লেগে সাইফ মাঠ ছাড়ার পরও বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল যথেষ্টই সহজ। কিন্তু মোহাম্মদ নাঈম শেখ, তাওহিদ হৃদয়, আকবর আলি, শামীম হোসেনরা একের পর এক ফিরেছেন দলকে ডুবিয়ে। পথহারা দল নাটকীয় কিছুর সম্ভাবনা জাগায় আটে নামা আবু হায়দারের তিন ছক্কায়। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হেরে যায় পরিষ্কার ব্যবধানেই।
কার্যত কোয়ার্টার-ফাইনালে পরিণত হওয়া এই ম্যাচে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ আশা জাগানিয়া। প্রথম ওভারে একটি ছক্কা মারেন পারভেজ হোসেন ইমন। তৃতীয় ওভারে অফ স্পিনার সাহান আরাচিগেকে একটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন তিনি। এই ওভারে একটি ছক্কা মারেন সাইফ হাসানও।
প্রথম ৩ ওভারে আসে ৩৮ রান। কিন্তু পরের ওভারে ইমন (১০ বলে ২৪) বিদায় নেওয়ার পর ধীরে ধীরে পথ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
পায়ে টান লাগায় পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মাঠ ছেড়ে যান সাইফ (২০ বলে ২৯)। তিনে নেমে যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ে ৮ রান করতে মোহাম্মদ নাঈম শেখ খেলেন ১৫ বল। এরপর বাংলাদেশকে আরও চেপে ধরেন লেগ স্পিনার দুশান হেমান্থা।
অধিনায়ক আকবর আলি ছক্কার মারার পর উইকেট বিলিয়ে দেন ওই ওভারেই আলগা করে তুলে মেরে। উইকেট বিলিয়ে দেন শামীম হোসেনও। বড় ভরসা তাওহিদ হৃদয় টিকে ছিলেন তখনও। কিন্তু ৫০টি আন্তর্জাতিক ম্য্যাচ খেলার অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও উইকেট উপহার দেন ১৩ বলে ১২ রান করে।তরুণ অলরাউন্ডার মাহফুজুর রহমান রাব্বিও উল্লেখ করার মতো কিছু করতে পারেননি।
পঞ্চদশ ওভারে ১০৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
বল হাতে খরুচে আবু হায়দার এরপর ম্যাচ জমিয়ে তোলেন ব্যাট হাতে। ষোড়শ ওভারে ছক্কা মারেন টানা দুটি, পরের ওভারে আরেকটি।
পরের ওভারেই ওই ‘ডেড বল’ বিতর্ক। ঠিক কী কারণে আম্পায়ার এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তা পরিষ্কার নয়। ধারাভাষ্যকাররাও বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা বলছিলেন, কোনো খেলোয়াড় মাঠের বাইরে থাকলে ‘ডেড বলের’ পরিবর্তে ‘নো বল’ ডাকা উচিত ছিল।
বাকি সময়ে একটি চারের বেশি মারতে পারেননি আবু হায়দার। শেষ পর্যন্ত ২৫ বল ৩ ছক্কা ও একটি চারে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ তিন ওভারে প্যাড পরে মাঠে ফেরার জন্য তৈরি ছিলেন সাইফ হাসান। কিন্তু উইকেট না পড়ায় ক্রিজে ফেরার সুযোগ তিনি পাননি।
এর আগে বোলিংটাও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। রাকিবুল ও রাব্বি ছাড়া বাকিরা রান দেন ওভারপ্রতি আটের ওপরে।
শ্রীলঙ্কার প্রথম পাঁচ ব্যাটারই রান পান কম-বেশি। পাঁচে নেমে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৬ বলে সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন পাভান রাথনায়েকে। চার নম্বরে আরাচিগে ২৫ বলে করেন ৩০ রান। ওপেনার লাহিরু উদারা ২১ বলে করেন ৩৫।
ম্যাচের সেরা অবশ্য তাদের কেউ নন। ষষ্ঠ বোলার হিসেবে বোলিংয়ে এসে ৪ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পুরস্কারটি পান লেগ স্পিনার হেমান্থা।
হৃদয়-ইমনসহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ৮ জন ক্রিকেটারকে দলে নিয়ে ইমার্জিং এশিয়া কাপে খেলতে যায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল। প্রথম ম্যাচে হংকংকে হারিয়ে শুরুটা ভালো করলেও, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বিদায় নিল তারা।
এদিনের প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের কাছে হারলেও, সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নেয় আফগানিস্তান ‘এ’ দল। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সমান ৪ পয়েন্ট। নেট রানরেটে এগিয়ে গ্রুপ সেরা হয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ ও হংকংয়ের ২ পয়েন্ট করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দল: ২০ ওভারে ১৬১/৭ (ইয়োশোধা ২৩, উদারা ৩৫, নুয়ানিদু ১৯, আরাচিগে ৩০, রাথনায়েকে ৪২, রামেশ ৬, উইক্রামাসিংহে ৪*, হেমান্থা ০*; রিপন ৪-০-৩৬-২, আবু হায়দার ৩-০-৩১-০, রাকিবুল ৪-০-২৫-০, রাব্বি ৪-০-১৯-১, রাজা ৪-০-৩৫-২, সাইফ ১-০-১৫-১)
বাংলাদেশ ‘এ’ দল: ২০ ওভারে ১৪২/৭ (সাইফ ২৯ রিটায়ার্ড হার্ট, ইমন ২৪, নাঈম শেখ ৮, হৃদয় ১২, আকবর ৯, শামীম ৪, রাব্বি ৭, আবু হায়দার ৩৮*, রাকিবুল ০, রাজা ৫*; নিমেশ ৪-০-৩০-১, রামেশ ৩-০-১৯-১, আরাচিগে ১-০-২২-০, মালিঙ্গা ৪-০-২২-১, রানসিকা ৪-০-২৬-১, হেমান্থা ৪-০-২৩-৩)
ফল: শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দল ১৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: দুশান হেমান্থা