ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বৃষ্টির দাপটের দিনে ঝড় তুললেন সাইফ হাসান, নাঈম ইসলাম, জিসান আলম।
Published : 17 Apr 2025, 07:43 PM
সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা। প্রকৃতির বাগড়ার চোখরাঙানি মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টির মতোই উইকেট হারাতে থাকল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। তাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েই হয়তো একটু পর আকাশ থেকেও ঝরতে শুরু করল পানি। লম্বা সময় বন্ধ থাকল খেলা।
তবে স্বস্তি বেশিক্ষণ রইল না শিরোপাপ্রত্যাশী ক্লাবটির। পুনরায় খেলা শুরু হলে ডাকওয়ার্থ লুইস স্টার্ন (ডিএলএস) পদ্ধতিতে সহজ লক্ষ্য পেল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। সাইফ হাসানের ঝড়ে অনায়াসেই জিতে গেল তারা।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বৃহস্পতিবারের অন্য দুই ম্যাচেও হানা দেয় বৃষ্টি। চার ঘণ্টার বেশি খেলা বন্ধ থাকার পর অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে হারায় আবাহনী লিমিটেড।
সুাপার লিগ পর্ব শুরুর দিন নাঈম ইসলামের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে জয় পায় গুলশান ক্রিকেট ক্লাব।
সাইফের ঝড়ো ফিফটি
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ২৯.৪ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রান করতে পারে মোহামেডান। এরপর নামা বৃষ্টিতে ৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকে খেলা।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২২ ওভারে ৯৩ রানের লক্ষ্য পায় রূপগঞ্জ। সাইফ হাসানের ঝড়ো ফিফটিতে ১৩.২ ওভারে জিতে যায় তারা।
১২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে নেমে গেল মোহামেডান। সমান ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট পাওয়া রূপগঞ্জ এখন পাঁচে।
টেস্ট খেলতে চার জনের চলে যাওয়া, তাওহিদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা, তাসকিন আহমেদের চোট মিলিয়ে একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন করতে হয় মোহামেডানের।
রূপগঞ্জ থেকে সমঝোতায় ঐতিহ্যবাহী দলটিতে যোগ দিয়ে প্রথম ম্যাচে তেমন কিছু করতে পারেননি তৌফিক খান। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা আনিসুল ইসলাম ভালো শুরু করলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ৭ চারে ৩৪ বলে ৩৫ রান করে আউট হন ২৭ বছর বয়সী ওপেনার।
রনি তালুকদার, ফরহাদ হোসেন, মাহমুদউল্লাহরা হতাশ করলে অল্পে থেমে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে মোহামেডান। বৃষ্টির কারণে অবশ্য অলআউট হতে হয়নি তাদের।
দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম।
লম্বা সময় বন্ধ থাকার পর সহজ লক্ষ্যে প্রথম ওভারে তানজিদ হাসানের উইকেট হারায় রুপগঞ্জ। এরপর আর উইকেট পড়তে দেননি সাইফ ও সৌম্য সরকার।
৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ বলে ৫৫ রান করেন সাইফ। ৪ চারে ৩৩ বলে ৩৬ রানের অপরাজিত থাকেন সৌম্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ২৯.৪ ওভারে ১১৭/৭ (তৌফিক ১৮, আনিসুল ৩৫, রনি ০, ফরহাদ ১৫, আরাফাত ২, মাহমুদউল্লাহ ১২, আরিফুল ১৬*, নাসুম ০, আবু হায়দার ৭*; শরিফুল ৬.৪-৩-১৪-১, হালিম ৫-০-২৯-০, তানভির ৮-১-৩৭-৩, টিপু ৬-০-২১-১, রিজওয়ান ৩-০-৯-২, মেহেদি ১-০-২-০)
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: (লক্ষ্য ২২ ওভারে ৯৩) ১৩.২ ওভারে ৯৪/১ (তানজিদ ০, সাইফ ৫৫*, সৌম্য ৩৬*; নাসুম ৪-০-৩০-১, ইবাদত ২-০-২০-০, আরাফাত ২-০-১৩-০, মুস্তাফিজ ২-০-১৩-০, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-৭-০, আবু হায়দার ০.২-০-১০-০)
ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ডিএলএস পদ্ধতিতে ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তানভির ইসলাম
দারুণ জয়ে শীর্ষে আবাহনী
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে অগ্রণী ব্যাংককে ৪ উইকেটে হারায় আবাহনী। আগে ব্যাট করে অগ্রণী ব্যাংক ২৪.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ১০৯ রান করার পর বন্ধ হয়ে যায় খেলা।
প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা পয় খেলা শুরু হলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২২ ওভারে ১৫৭ রান। জিসান আলমের ঝড়ের পর বাকিদের কার্যকর অবদানে ১৬ বল বাকি থাকতে জিতে যায় আবাহনী।
১২ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে আবার টেবিলের শীর্ষে উঠে গেল আবাহনী। সমান ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগের ছয় দলের মধ্যে সবার নিচে অগ্রণী ব্যাংক।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই প্রিতম কুমারের উইকেট হারায় অগ্রণী ব্যাংক। আরেক ওপেনার ইমরানউজ্জামানও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
তিন নম্বরে নেমে দারুণ ব্যাটিং করেন ইমরুল কায়েস। খেলা বন্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত ৫২ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
পুনরায় খেলা শুরু হলে কঠিন লক্ষ্যে প্রথম ওভারেই জোড়া ধাক্কা খায় আবাহনী। পারভেজ হোসেন ও শাহরিয়ার কোমল ফেরেন খালি হাতে।
তিন নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণ করেন জিসান। ৩ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মেরে মাত্র ২৭ বলে ৪৬ রান করেন তরুণ ব্যাটসম্যান।
মোহাম্মদ মিঠুন, এসএম মেহেরব হাসান, মোসাদ্দেক হোসেনরা তেমন কিছু করতে পারেননি।
সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে মাত্র ২৮ বলে ৪৫ রান যোগ করে দলকে জয় এনে দেন শামসুল ইসলাম অনিক ও মাহফুজুর রহমান রাব্বি। অনিক ১৮ বলে ২৫ ও রাব্বি ১২ বলে করেন ২০ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ২৪.৪ ওভারে ১০৯/৩ (ইমরানউজ্জামান ২৯, প্রিতম ৮, ইমরুল ৪৮*, অমিত ১৫, মার্শাল ৪*; এনামুল ৫-১-১৯-০, রকিবুল ৪.৪-১-১১-১, মোসাদ্দেক ৪-০-২৬-০, মৃত্যুঞ্জয় ৫-০-৩১-১, মেহেরব ৪-০-১৭-০, রাব্বি ২-০-৫-১)
আবাহনী লিমিটেড: (লক্ষ্য ২২ ওভারে ১৫৭) ১৯.২ ওভারে ১৫৭/৬ (পারভেজ ০, কোমল ০, জিসান ৪৬, মিঠুন ১৮, মেহেরব ৩০, মোসাদ্দেক ১২, অনিক ২৫*, রাব্বি ২০*; রবিউল ৪-০-৩০-২, আরিফ ৩-০-৩৩-০, মেহেদি ৩-০-২২-০, তাইবুর ৫-০-২৮-২, নাঈম ২.২-০-৩১-১, শুভাগত ২-০-১০-১)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ডিএলএস পদ্ধতিতে ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জিসান আলম
গুলশানকে জেতালেন নাঈম
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ৪ উইকেটে হারায় গুলশান ক্রিকেট ক্লাব। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ২৩.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ১১০ রান করে গাজী গ্রুপ।
পরে গুলশানের সামনে ২২ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬২ রান। নাঈম ইসলামের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ২ বল বাকি থাকতে জিতে যায় প্রিমিয়ার লিগের নবাগত দল।
১২ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে উঠে এসেছে গুলশান। সমান ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে চারে গাজী গ্রুপ।
কঠিন লক্ষ্যে শুরুতে ঝড় তোলেন মেহেদি হাসান। ১ চার ও ৫ ছক্কায় মাত্র ২৪ বলে ৪৩ রান করেন 'মেকশিফট' এই ওপেনার। আরেক ওপেনার আলিফ হাসানের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ বলে ৩৫ রান।
চার নম্বরে নেমে মাত্র ৩২ বলে ফিফটি করেন নাঈম। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ বলে ৫৬ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ২৩.৩ ওভারে ১১০/৩ (মুনিম ২৯, এনামুল ১, সাদিকুর ৩৬, শামসুর ৩২*, সাব্বির ১০*; মেহেদি ২-০-১৪-০, ফরহাদ ৩-০-১৮-০, নিহাদ ৩-০-১৫-১, শাহাদাত ৮.৩-০-২৫-১, সানি ৩-০-১০-০, নাঈম ৩-০-১৪-০, পায়েল ১-০-১৩-০)
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: (লক্ষ্য ২২ ওভারে ১৬২) ২১.৪ ওভারে ১৬৫/৭ (আলিফ ৩৫, মেহেদি ৪৩, খালিদ ১২, নাঈম ৫৬*, সাকিব ০, সানি ৯, ফরহাদ ৩, শাকিল ১, নিহাদ ২*; হাশিম ৫-০-৪২-২, শামিম ৫-০-৩৭-১, পারভেজ ৪-০-২৯-৩, ওয়াসি ২.৪-০-২৬-০, তোফায়েল ৪-০-২৩-১, সালমান ১-০-৭-০)
ফল: গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ডিএলএস পদ্ধতিতে ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাঈম ইসলাম