বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকতে পারে, এখন সমাধান হয়ে গেছে’, দাবি বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের।
Published : 05 Jan 2025, 07:29 PM
এই মুখ খুলছেন, আবার এই চুপ। বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীনের (ফাহিম) ব্যাপারটি ছিল এরকম। টিভি সাক্ষাৎকারে বেশ কিছু অভিযোগ ও অসন্তুষ্টির কথা জানানোর পর মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন তিনি। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও কথা বলতে চাইছিলেন না। পরে অবশ্য নাজমুলের সব অভিযোগের বিস্তারিত জবাব তিনি দিলেন নিজের জায়গা থেকে। আপাতত সমস্যার সমাধান হয়েছে বলেও দাবি করলেন বিসিবি প্রধান।
বিপিএলের সিলেট পর্ব শুরুর আগে রোববার দুজনই সিলেটে আসেন। দুপুরের দিকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসেন নাজমুল আবেদীন, বিকেলের দিকে আসেন ফারুক আহমেদ। তাদের দুজনের দ্বন্দ্ব আর নানা গুঞ্জন নিয়ে তখন চলছে তোলপাড়।
বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীনের একটি সাক্ষাৎকার রোববার যমুনা টিভিতে প্রচারিত হয়, যেখানে তিনি বিসিবি সভাপতি নিয়ে কিছু ক্ষোভ-অভিযোগ-অসন্তুষ্টির কথা জানান। বোর্ডে থাকার চেয়ে বাইরে থাকা ভালো এমন কথাও বলেন নাজমুল।
বিসিবি সভাপতি পরে সিঠের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, নাজমুলের কথায় তিনি বোর্ড থেকে পদত্যাগের ইঙ্গিত পাননি। তার সঙ্গে অসাদচারণের খবরও উড়িয়ে দিলেন বোর্ড প্রধান।
“দুর্ব্যবহার তো একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। আপনাকে ছোট্ট একটা কথা বললে এটা কি দুর্ব্যবহার? এটা তো আপেক্ষিক একটা ব্যাপার।”
‘পদত্যাগ করতে চাননি। বলেছেন, কাজ করা কঠিন। পদত্যাগ করতে চান, এমন কিছু শুনিনি। যাই হোক, ফাহিম ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। নতুন বোর্ড বলতে তো ফাহিম ভাই আর আমাকেই বোঝায়। বাকি সবাই তো পুরনো। যখন কাজের মাত্রা বেশি, লোক সংখ্যা কম তখন অনেক দিকে নজর দিতে হয়। সেক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। ওখান থেকেই উনি হয়ত চিন্তা করেছেন যে, কাজ ঠিকমতো করতে পারছেন না।”
কয়েকদিন আগে সূত্রের বরাত দিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সচিব শাসিয়েছেন বিসিবি সভাপতিকে। এই বিষয়ে এতদিন মন্তব্য করতে না চাইলেও এবার নাজমুল আবেদীনের প্রসঙ্গে সেটিও জানিয়ে দিলেন বোর্ড প্রধান। পাশাপাশি বললেন, নাজমুলের সঙ্গে সমস্যার সমাধান আপাতত হয়ে গেছে।
“টিকিটের চাপ ছিল… সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দিনটি আমার সেরা সময় ছিল না। আপনারা সবাই জানেন, আরেকটি ঘটনাও ঘটেছে প্রেসিডেন্ট বক্সে। আমি বলেছিলান, ‘নো কমেন্ট’, এখনও বলছি ‘নো কমেন্ট’, তবে ছিল (ঘটনা)। সব মিলিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি ছিল… তখন একটা কথা এসেছে। কার সাথে কী বলেছি… তবে একটা প্রতিষ্ঠানের ভেতর মতের অমিল খুব স্বাভাবিক। এখানে দোষের কিছু দেখি না। তবে সংবাদমাধ্যমে এগুলো চলে এলে, তা দোষের আমি মনে করি। আগে নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।’
“ফাহিম ভাই আমার বয়োজ্যেষ্ঠ, সিনিয়র মানুষ। আমারও সিনিয়র প্লেয়ার। মানে, অনেক সিনিয়র। সেদিক বিবেচনা করে উনি হয়ত মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন। এখন ফাহিম ভাই আজকে আর কোনো কথা বলতে চাননি। আমার পাশেই ছিলেন। আমরা বিষয়টি সমাধান করেছি, মোট কথা।”
পরে আরেক দফায় সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলেন বিসিবি সভাপতি।
“আমি মনে করি, খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই… আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আর যদি কোনো অসন্তুষ্টি থাকে… একটা দল যখন খেলে, দলের মধ্যে সবাই যে সবার বেস্ট ফ্রেন্ড, তা নয়। তবে ওটা যদি বড় না হয়, যদি আমরা ঠিক করে ফেলতে পারি, তাহলে ভালো। অসন্তুষ্টি কারও মধ্যে থাকলে, যে ব্যাপারে অসন্তুষ্টি, তা আলোচনা করে ফেললে ভালো হয়। অনেক সময় হয় কী, যেহেতু আমরা দুজনই নতুন পরিচালক, বেশির ভাগ কাজ দুজনই করার চেষ্টা করেছি। সেক্ষেত্রে, একটু যোগাযোগের ঘাটতি হতে পারে।”
“অনেক সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়েছে… সবাইকে বারবার ডাকব, আবার মতামত নেব… কিছু সিদ্ধান্ত খুব জরুরি। সেক্ষেত্রে কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকতে পারে। আপনি যার কথা বলছেন (নাজমুল আবেদীন) তার সঙ্গে আমি আজকে আলাপ করেছি। আমার মনে হয়, ব্যাপারটি সমাধান হয়ে যাবে। কারণ, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে… কথাটি আমি বাংলাদেশ দলকেও বলেছি, দল কী করছে, এসব নিয়ে আমরা যত পারি কম মন্তব্য করব। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এটা খুব একটা অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি।”
বোর্ডের ভেতর অন্তর্কোন্দলের কথা উড়িয়ে দিলেন ফারুক। দেশ ও দলের কথা ভেবে সবাইকে একই লক্ষ্যে কাজ করতে বললেন তিনি।
“দ্বন্দ্ব তো নেই বোর্ডে। সাড়ে চার মাসে কিছু হয়নি। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে কিছু সমস্যা হয়ই…।”
“আশা করব, যতটুকু করা যায় সবাই মিলে… একট কথা কী, আমাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়া। আমাদের সবার মূল লক্ষ্য দেশ ও দল। এটা যদি আমরা মাথায় রাখি, সব সমস্যা কিন্তু সমাধান করে ফেলতে পারি। কারণ ওগুলো আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা, আমি মনে করি। আশা করব, এরকম কিছু আগামী হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার পরও ছোটখাটো অসন্তুষ্টি থাকবেই। সেসব আমরা যতটুকু পারি, বড় কোনো সমস্যা না হলে ঠিক করে নিতে পারব।”
দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও বোর্ডের স্থায়ী কমিটিগুলো গঠিত হয়নি। এটা নিয়ে ক্ষোভের কথাও বলেছিলেন নাজমুল আবেদীন। বোর্ড প্রধান বললেন, কমিটি তৈরি করা হয়ে গেছে। দেরির কারণ জানিয়ে তিনি বললেন, দ্রুতই শুরু হবে কার্যক্রম।
“আমাদের বোর্ডে এখন যে কজন পরিচালক আমরা আছি, তা দিয়ে ২৩টি স্থায়ী কমিটি পূর্ণ করা খুব কঠিন। মনে করেছিলাম, কোনো এক সময় আমরা অন্তবর্তীকালীন কমিটি করতে পারব, যাতে করে দুই-তিনটি, পাঁচটি-সাতটি-দশটি পরিচালক নিতে পারব। কিন্তু ওটা হয়নি, কারণ জেলা ও বিভাগীয় কমিটিগুলো আমরা করতে পারিনি। সেটা একটা কারণ। মাঝখানে কাউকে নিতে পারিনি। সেজন্যই দেরি হচ্ছে।”
“এখন একজন একাধিক কমিটি নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি। এটা (কমিটি তৈরি) করে শেষ সময়ে পরিচালকদের বলেছি এটা দেখতে। যদি কোনো ইনপুট থাকে, যার যেটা কাজ, যে কজন নিয়ে সম্ভব, চালু করে দিন। এটা হয়ে যাবে। কয়েকবার বলেছি যে আগামী সপ্তাহে হবে, কিন্তু হয়নি। এবার এটা সত্যি সত্যি হয়ে যাবে, কারণ লিখেছি ফেলেছি। চূড়ান্ত ইনপুট নিয়ে হয়ে যাবে।”