নারী ওয়ানডে ক্রিকেটের ৫১ বছরের পথচলায় ১ হাজার ৩৯০ ম্যাচের ইতিহাসে প্রথম দেখা গেল এমন কিছু।
Published : 19 Jun 2024, 11:26 PM
জয়ের জন্য শেষ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন পাঁচ রান, মানে ছক্কা মারতেই হবে। চার মারলে ম্যাচ টাই। স্নায়ুর চাপকে জয় করে তখন পুজা ভাস্ত্রাকার করলেন দারুণ একটি স্লোয়ার ডেলিভারি। ১৩৫ রানে ক্রিজে থাকা লরা উলভার্ট বলে ব্যাট ছোঁয়াতেই পারলেন না। বিরোচিত ব্যাটিংয়ে দলকে অসাধারণ এক জয়ের কিনারায় নিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পারলেন না দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। ভারত জিতে গেল চার রানে।
চার রানের এই জয় ভারতের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে কম ব্যবধানের জয়। তবে ম্যাচটি অনন্য হয়ে গেছে আরেকটি ‘চার’ দিয়ে। দুই দলেরই দুজন ব্যাটার সেঞ্চুরি করেছেন। নারী ওয়ানডে ক্রিকেটের ৫১ বছরের পথচলায় ১ হাজার ৩৯০ ম্যাচে এই প্রথম এক ম্যাচে দেখা গেল চার সেঞ্চুরি।
বেঙ্গালুরুতে বুধবার রান উৎসবের ম্যাচটিতে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে স্মৃতি মান্ধানা করেন ১২০ বলে ১৩৬। ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর অপরাজিত থাকেন ৮৮ বলে ১০৩ রান করে। অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের শতরানে ভারত ৫০ ওভারে তোলে ৩ উইকেটে ৩২৫ রান।
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক উলভার্ট অপরাজিত থাকেন ১৩৫ বলে ১৩৫ রান করে। পাঁচে নেমে ৯৪ বলে ১১৪ রান করেন মারিজান ক্যাপ। তবে রেকর্ড রান তাড়ার সম্ভাবনা জাগিয়েও তারা আটকে যায় ৬ উইকেটে ৩২১ রানে।
নারী ওয়ানডেতে এক ম্যাচে তিন সেঞ্চুরির নজিরই ছিল স্রেফ একটি। সেই ম্যাচেও ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৮ সালে ব্রাইটনে ইংল্যান্ডের হয়ে সেঞ্চুরি করেন ট্যামি বাউমন্ট ও সারাহ টেইলর, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে করেন লিজেল লি।
এবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার এই ম্যাচে মোট রান হয়েছে ৬৪৬, নারী ওয়ানডের ইতিহাসে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৬৭৮ রানের রেকর্ড হয়েছিল ২০১৭ সালে; সেবার ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের ৩৭৩ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ৩০৫ রান।
বেঙ্গালুরুর চিন্নাসোয়ামি স্টেডিয়ামে বুধবার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। ৩৮ রানের উদ্বোধনী জুটির পর শেফালি ভার্মা আউট হন ২০ রানে। দ্বিতীয় উইকেটে দায়ালান হেমালাথাকে (২৪) নিয়ে ৬২ রানের জুটি গড়েন মান্ধানা।
তৃতীয় উইকেটে ঝড় তোলেন মান্ধানা ও হারমানপ্রিত। ১৩৬ বলে ১৭১ রানের জুটি গড়েন দুজন।
মান্ধানা ফিফটি করেন ৬৭ বলে। পরে রানের গতি বাড়িয়ে শতরানে পৌঁছে যান ১০৩ বলেই। শেষ পর্যন্ত ১৮ চার ও ২ ছক্কায় ১২০ বলে ১৩৬ করে তিনি বিদায় নেন ৪৬তম ওভারে। ৮৪ ম্যাচে স্টাইলিশ এই বাঁহাতি ব্যাটারের সপ্তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি এটি।
হারমানপ্রিত পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৫৮ বলে। পরের পঞ্চাশে তার বল লাগে কেবল ২৯টি। অভিজ্ঞ ব্যাটারের ষষ্ঠ ওয়ানডে শতরান এটি।
শেষ দিকে রিচা ঘোষ করেন ১৩ বলে ২৫ রান। হারমানপ্রিতের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ২৬ বলে ৫৪ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ায় ওপেনার উলভার্ট একপ্রান্ত থেকে রান করে যান, আরেকপ্রান্তে উইকেট পড়ে নিয়মিত। ৬৭ রানে তারা হারায় তিন উইকেট।
চতুর্থ উইকেটে দলকে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফেরান উলভার্ট ও ক্যাপ। অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মিলে ১৮৪ রান যোগ করেন ১৭০ বলে।
৬৯ বলে ফিফটি করা উলভার্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১১৯ বলে। ৯৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে তার অষ্টম সেঞ্চুরি এটি।
৫৩ বলে পঞ্চাশের দেখা পাওয়া ক্যাপ পরের পঞ্চাশে ছুটে যান কেবল ৩২ বল খেলে। ম্যাচ জমে ওঠে দারুণভাবে।
১১ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৪ রান করে ক্যাপ বিদায় নিলেও ন্যাডাইন ডি ক্লার্ককে নিয়ে ভারতকে চাপে রাখেন উলভার্ট। এই জুটিতে আসে ৪১ বলে ৬৯ রান।
শেষ দিকে ৭ বলে যখন প্রয়োজন ১৭ রান, অভিষিক্ত পেসার আরুন্ধাতি রেড্ডির বলে ছক্কা মেরে দেন ডি ক্লার্ক। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১১ রানের।
শেষ ওভারে পুজার প্রথম দুটি বলই ছিল ফুল টস। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন উলভার্ট, পরেরটিতে ডি ক্লার্কের ব্যাটের কানায় লেগে রান আসে চারটি।
পরের বলে পুজার স্লোয়ারে ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান ডি ক্লার্ক (২২ বলে ২৮)। পরের বলে নতুন ব্যাটারকেও বিদায় করেন পুজা। পঞ্চম বলে আসে সিঙ্গেল। এরপর শেষ বলের কঠিন চ্যালেঞ্জে পেরে ওঠেননি উলভার্ট।
চার রানের এই জয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ভারত। সিরিজের প্রথম ম্যাচে মান্ধানার শতরানের পর আশা সোভানার চার উইকেটে ভারত জিতেছিল ১৪৩ রানে।
সিরিজের শেষ ম্যাচ রোববার বেঙ্গালুরুতেই। এরপর চেন্নাইয়ে একটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে দুই দল।