ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া উইকেট নিয়ে হেরাথ ও মিরাজকে কৃতিত্ব দিলেন শান্ত

প্রথম সেঞ্চুরি, প্রথম ম্যান দা ম্যাচ, প্রথম উইকেট, প্রথম ম্যান অব দা সিরিজ, সব মিলিয়ে স্মরণীয় এক সিরিজ কাটালেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 04:30 AM
Updated : 15 May 2023, 04:30 AM

নাজমুল হোসেন শান্তকে যখন বোলিংয়ে আনা হলো, সেটি ছিল একরকম শেষ চেষ্টা। ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো আঁকড়ে রাখার চেষ্টা যেন। তাতেই মিলল বেঁচে থাকার নতুন অবলম্বন। মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভেঙে শান্তই জিইয়ে রাখলেন বাংলাদেশের সম্ভাবনা। সেই উইকেটের হাত ধরেই শেষ পর্যন্ত এলো রোমাঞ্চকর জয়। ম্যাচের পর উচ্ছ্বসিত শান্ত কৃতিত্ব দিলেন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ ও দীর্ঘদিনের সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজকে। 

শান্তর জন্য সিরিজটি ছিল অনেক ‘প্রথম’ অর্জনের। প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি দ্বিতীয় ম্যাচে। ওয়ানডেতে প্রথমবার ম্যাচ সেরা হওয়ার স্বাদও পান। তবে বড় চমক দেন তিনি শেষ ম্যাচে। প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের দেখা পান, যখন উইকেটটি দলের ভীষণ জরুরি। ব্যাটিং-ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে প্রথমবার ম্যান অব দা সিরিজের স্বীকৃতিও পান তিনি। 

৪২তম ওভারে যখন তাকে বোলিংয়ে আনলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল, জয় তখন আয়ারল্যান্ডের নাগালে। ৯ ওভারে প্রয়োজন স্রেফ ৫২ রান, উইকেট বাকি তখনও ৭টি। হ্যারি টেক্টর ও লর্কান টাকারের জুটি আইরিশদের এগিয়ে নিচ্ছিলেন দাপুটে ব্যাটিংয়ে। 

কিন্তু শান্তর ওই ওভারেই আউট হয়ে যান আগের ম্যাচে অসাধারণ সেঞ্চুরি করা টেক্টর। বাংলাদেশের মিইয়ে আসা সম্ভাবনা আবার উঁকি দেয় খানিকটা। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানের অসাধারণ বোলিংয়ে উইকেট আসতে থাকে একের পর এক। শান্ত শুধু ব্রেক থ্রু এনে দেননি, আঁটসাঁট তিন ওভার বোলিংয়ে আটকে রাখেন আইরিশদের। 

নিয়মিত ৫ বোলারের বাইরে বিকল্প বোলার বলতে ছিলেন কেবল শান্তই। নিয়মিত বোলার না হলেও টুকটাক হাত ঘোরাতে জানেন তিনি। তার ওই তিন ওভার ম্যচের প্রেক্ষাপটে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি কাজ চালিয় নেন বলেই অভিষেকে খরুচে বোলিং করা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে পুরো ১০ ওভার করাতে হয়নি অধিনায়কের। 

শেষ পর্যন্ত হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত শেষ ওভারে বাংলাদেশ ৫ রানে জিতে নিশ্চিত করে সিরিজ জয়। 

৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক মুস্তাফিজ হলেও মোড় বদলে যায় শান্তর উইকেটেই। নিরীহ এক লেংথ বল উড়িয়ে মেরে ক্যাচ তুলে দেন ৪৫ রান করা টেক্টর, মিড উইকেটে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন কুমার দাস।

শান্তর উইকেট এতটা গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ ছিল যে, ম্যান অব দা সিরিজের পুরস্কার নিতে গিয়ে তার কথোপকথনের প্রায় পুরোটায় থাকল বোলিংয়ের প্রসঙ্গই! তিনি সবার আগে কৃতজ্ঞতা জানালেন দলের স্পিন বোলিং কোচের প্রতি। 

“আমি স্রেফ নিজের প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি। গত কয়েক দিনে রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে অনেক অনুশীলন করেছি। আমার স্পিন বোলিং কোচকে তাই ধন্যবাদ। আমি খুবই খুশি।” 

একসময় বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নিয়মিতই বোলিং করতেন শান্ত। সেই দিনগুলি থেকেই মিরাজের সঙ্গে খেলে আসছেন তিনি। তার বোলিংয়ের অ্যাকশন ও ধরন অনেকটা মিরাজের মতোই। শান্ত জানালেন, সচেতনভাবেই তিনি মিরাজকে অনুসরণের চেষ্টা করেন।

“বোলিংয়ে যাওয়ার আগেই অধিনায়ক আমাকে বলে রেখেছিলেন যে, আমার বোলিং করা লাগতে পারে। এটা ছিল প্রাথমিক পরিকল্পনা। তবে মিরাজ আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন বোলিংয়ের সময়। উইকেটে স্পিনারদের জন্য কিছুটা সহায়তা ছিল। আমি সেই পরামর্শ অনুসরণ করেছি।” 

“সত্যি বলতে, আমি তার অ্যাকশন অনুসরণ করি। চেষ্টা করে যাচ্ছি। বলছি না যে, পুরোপুরি অনুসরণ করতে পারি। তবে চেষ্টা করছি।” 

ধারাভাষ্যকার অ্যালান উইলকিন্স জিজ্ঞেস করলেন, এখন তাহলে অলরাউন্ডার শান্তকে দেখা যাবে কি না! তিনি অবশ্য তা হেসেই উড়িয়ে দিলেন। তবে নিয়মিত বোলিং না পাওয়া নিয়ে অধিনায়কের সঙ্গে মজা করতে ছাড়লেন না। 

“প্রতিদিনই আমি অধিনায়ককে বলি যে, আমাকে বোলিং দেওয়া উচিত আপনার।” 

“এখনও অলরাউন্ডার নই, অনেক কাজ করতে হবে। তবে হয়তো এখন তিনি (অধিনায়ক) বিশ্বাস করবেন যে আমি বল করতে পারি!” 

একটু পর অধিনায়ক মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে মজা করেই পাল্টা জবাব দিলেন তামিম ইকবাল। 

“সে বলেছে আমি তার বোলিংয়ে ভরসা রাখি না। কিন্তু আমার অধিনায়কত্বে সে টেস্টে বোলিং করেছে, ওয়ানডেতে করেছে। আমার অধিনায়কত্বেই প্রথম উইকেট পেয়েছে… (হাসি)।” 

তবে শান্ত যেমন মিরাজকে কৃতিত্ব দিয়েছেন, তামিমও তেমনি মিরাজকে দেখেই বোলিংয়ে আনেন শান্তকে। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে তিন বিশেষজ্ঞ স্পিনার থাকলেও এই ম্যাচে ছিল স্রেফ একজন। সেই মিরাজ দারুণ বোলিং করেন (১০-১-৩৮-১)। উইকেটে স্পিনারদের বল একটু গ্রিপও করছিল। শান্তকে বোলিংয়ে আনার পরিকল্পনা না থাকলেও পরে ভাবনা বদলান অধিনায়ক। 

“৪০ ওভার পর্যন্ত আমার ভাবনাও ছিল না। তবে যেভাবে মিরাজ বোলিং করছিল, সেটাই আমাকে বাধ্য করেছে শান্তকে বোলিংয়ে আনতে। যেভাবে মিরাজ বোলিং করেছে… আর এই পাশে একটু বড় ছিল মাঠ। এজন্যই তাকে বোলিংয়ে এনেছি এবং সে দুর্দান্ত করেছে।” 

প্রথম উইকেট নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও শান্তর হৃদয়ের কাছে অবশ্য প্রথম সেঞ্চুরি। কোনটিকে বেছে নেবেন, এই প্রশ্নে তার ভাবতে হলো না একটুও। 

“অবশ্যই প্রথম সেঞ্চুরি (বেছে নেব)। কারণ ব্যাটসম্যান হিসেবে সবসময়ই স্বপ্ন থাকে সেঞ্চুরি করার। আমার জন্য তাই এটা দারুণ। আশা করি, এই ফর্ম ধরে রাখতে পারব।”