টিম ডিরেক্টর হিসেবে বিশ্বকাপে সম্মান পাননি জানিয়ে খালেদ মাহমুদ বললেন, জাতীয় দলে আর কোনোদিন কাজ করতে চান না তিনি।
Published : 07 Apr 2024, 04:50 PM
বিশ্বকাপের পর নানা সময়ে হতাশা ও বিরক্তির কথা বলেছেন খালেদ মাহমুদ। এবার বলা যায় ক্ষোভের বিস্ফোরণই ঘটালেন তিনি। বিসিবির এই পরিচালকের দাবি, গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে টিম ডিরেক্টর হিসেবে প্রাপ্য সম্মান তিনি পাননি। এই পদে বা অন্য কোনো ভূমিকায় জাতীয় দলের সঙ্গে আর কোনোদিন যুক্ত হবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিলেন সাবেক এই অধিনায়ক।
টিম ডিরেক্টর হিসেবে জাতীয় দলের সঙ্গে কয়েক দফায় কাজ করেছেন খালেদ মাহমুদ। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে তাকে এই দায়িত্বে দেখা যায়নি বেশ কিছুদিন। তবে বিশ্বকাপে আবার এই পদ দিয়ে তাকে দলের সঙ্গে পাঠানো হয় ভারতে।
বিশ্বকাপ চলার সময় তিনি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কয়েক দফায় বলেন, আগের চেয়ে এবার তার কাজের ধরন ভিন্ন এবং সরাসরি ক্রিকেট নিয়ে বা দল সংক্রান্ত ব্যাপারে কোনো ভূমিকা তার নেই। বিশ্বকাপের পর কয়েক দফায় বলেছেন, এরকম কাজহীন দায়িত্ব তিনি চান না।
এবার নিজের অবস্থান আরও বিস্তারিত তুলে ধরলেন তিনি। এখন তার ব্যস্ততা চলছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী লিমিটেডের কোচ হিসেবে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, জাতীয় দলে আরও কখনও কাজ করতে চান না।
“আমি মনে হয় এখন আর সমাধান নই বাংলাদেশ ক্রিকেটের। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের আরও ভালো সমাধান আছে। আমি আর আগ্রহী নই। আরও ভালো কিছু করার আছে আমার। গত বিশ্বকাপে যা করেছি, আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সঙ্গে কাজটা যায় না আসলে। হয়তো বা আমি অত বড় কোচ নই, হয়তো অত কিছু জানিও না ক্রিকেট নিয়ে, তারপরও আমি মনে করি আমার সম্মান আছে। গত বিশ্বকাপে সেই সম্মানটা পাইনি। আমার তা প্রাপ্য নয়। আমি এটা করতে চাই না আর কোনোদিনও।”
“আমি ওসব পদে (টিম ডিরেক্টর) যেতে চাই না। নিজের জীবন নিয়ে আমি খুবই খুশি। আবাহনীতে কাজ করি, বিপিএলে কাজ করি, রাজশাহীতে ক্রিকেট একাডেমিতে কাজ করি। খুবই খুশি আমি। দেশের ক্রিকেটের কোনো উন্নয়নে যদি কোনো সহায়তা করতে হয়, অবশ্যই করব। কিন্তু জাতীয় দলের অ্যাসাইনমেন্টগুলো হয়তো আমার জন্য ঠিক নয়। আমি যেটা বললাম, আই ডোন্ট ডিজার্ভ দ্যাট।”
জাতীয় দলে আর কাজ করতে না চাওয়ার কথা অবশ্য আগেও বলেছেন খালেদ মাহমুদ। পরে আবার ঠিকই তাকে দেখা গেছে দায়িত্ব নিতে।
সেটা অস্বীকার করছেন না তিনি নিজেও। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানের অনুরোধে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে দাবি তার। একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব পালন করায় বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত সাবেক এই ক্রিকেটার এবার বোর্ড সভাপতিকে অনুরোধ করলেন, তাকে যেন আর জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা না হয়।
“অনেক বার বলেছি (জাতীয় দলে ফিরব না)… মিডিয়ার সামনেই বলেছি। তবে আমি সবসময় একটা কথা মানি, পাপন ভাই (বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান) প্রেসিডেন্ট, মানে আমার অধিনায়ক। উনি যখন বলবেন ফাইন লেগে ফিল্ডিং করতে হবে, আমাকে ছুটে গিয়ে ফাইন লেগেই ফিল্ডিং করতে হবে। তবে আমার মনে হয়, পাপন ভাই আর বলবেন না আমাকে ফাইন লেগে যেতে। আমি মনে করি আমি এখন আর কোনো সমাধান নই।”
“এত বড় বড় কোচরা আসছে, যারা হাইলি পেইড, তাদের মাঝে আমি খুব ছোট একটা মানুষ। ওখানে না যাওয়াটাই ভালো আমার মনে হয়। আমি এখন আর ২৮-২৯ বছরের বালক নই, বড় হয়েছি। সুতরাং নিজের সম্মানটা আমার নিজেরই রাখতে হবে। এটা ঠিক, পাপন ভাইকে এখনও সেই সম্মানটা করি এবং উনার কথা ফেলতে পারব না। কিন্তু আমি বিনয়ের সঙ্গে উনাকে অনুরোধ করব, আমাকে যেন অনুরোধ না করেন এখানে আর কাজ করার জন্য।”
খালেদ মাহমুদের কথায় অভিমানের সুর স্পষ্ট। টিম ডিরেক্টরের দায়িত্বে কি অপমানিতও হতে হয়েছে তাকে? এই প্রশ্নে তিনি আবার বললেন নিজের সম্মানের কথা।
“ইনসাল্ট কথাটা বলব না। আমি তো ক্রিকেট পছন্দ করি। ক্রিকেট আমার ভালোবাসা, আমার প্যাশন। তবে আমি মনে করি যে, একটা জায়গায় যখন কাজ করেছি, সেই জায়গাটায় যখন না পাই কাজ করতে, এতগুলো সফর করার পর আমার কাজটা পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে আমাকে আর ওই পদে রাখার কোনো মানে হয় না আসলে। যদি আমি সেই কাজ না করতে পারি, তাহলে কেন করব? হোয়াই!”
“আমি তো সফর করতে যাই না বাংলাদেশ দলের সঙ্গে। টুর পার্টি হতে চাই না। বিদেশ অনেক ঘুরেছি। বিদেশ ঘোরার আমার কোনো ইচ্ছাই নাই। আমি মনে করি, আমি এসবের উর্ধ্বে। হাথুরুসিংহে হয়তো বিশ্বের সেরা কোচ হতে পারে, দ্যাট ডাজন্ট ম্যাটার টু মি। আমার কাছে… বাংলাদেশে আমি সম্মানীয় কোচ, ক্রিকেটাররা আমাকে অনেক সম্মান করে। আমার একটা ইয়ে আছে… আমি নিজের সম্মান আর হারাতে চাই না।”