Published : 05 May 2025, 09:53 AM
ক্রিজ ছড়ে একটু বেরিয়ে জায়গা বানিয়ে মার্কো ইয়ানসেনকে লং অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দিলেন রিশাভ পান্ত। ধারাভাষ্যে মুরালি কার্তিক বললেন, “এই রিশাভ পান্তকেই তো আমরা চিনি। আশা করি, এটা চলতে থাকবে এলএসজির জন্য…।” ছক্কায় রানের খাতা খোলার পর আরও দুটি চার এলো পান্তের ব্যাট থেকে। কিন্তু এরপর আর চলতে পারলেন না লাক্ষ্নৌ সুপার জায়ান্টস (এলএসজি) অধিনায়ক। আউট হয়ে গেলেন অদ্ভুতভাবে।
শুরুর ছক্কাটির মতোই আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে ক্রিজ ছেড়ে জায়গা বানিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন পান্ত। এবার তার হাত থেকে ব্যাট ছুটে যায় স্কয়ার লেগের দিকে, বল উড়ে যায় ঠিক উল্টো দিকে। ডিপ পয়েন্ট সীমানার একটু ভেতরে সহজ ক্যাচ নেন শাশাঙ্ক সিং।
এবারের আইপিএলে পান্তের দুঃস্বপ্নের পথচলা তাতে দীর্ঘয়িত হলো আরও একটু। এই ম্যাচের আগের তিন ইনিংসে তার রান ছিল ৩, ০, ৪। এবার দুই অঙ্ক ছুঁলেও আউট হয়ে গেলেন স্রেফ ১৮ রানেই।
এটিই অবশ্য মৌসুমে তার তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। ১০ ইনিংস খেলে দুই অঙ্ক ছুঁতেই পেরেছেন স্রেফ চারবার!
যে ছয় ইনিংসে দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগের আউট হয়েছেন, একটিতেও পাঁচ রানও করতে পারেননি। দুই বার আউট হয়েছেন শূন্যতে, দুইবার দুই রানে।
এমনিতে খারাপ সময় যে কারও আসতেই পারে। কোনো মৌসুমে কেউ খুব খারাপও করতে পারেন। তবে পান্তের ক্ষেত্রে আরেকটি প্রসঙ্গও এসে যায়। তার পারিশ্রমিক!
আইপিএলের মতো আসরের ধরনটিই এমন। মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের প্রসঙ্গ এখানে নানাভাবে উঠে আসে, তা পারফরম্যান্স ভালো হোক বা খারাপ।
পান্তের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি প্রযোজ্য। কারণ তিনি তো আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার! নিলাম থেকে তাকে পেতে এবার ২৭ কোটি রুপি খরচ করেছে এলএসজি। তার কিপিং, ব্যাটিং, আগ্রাসন, নেতৃত্ব, তারকাখ্যাতি, সব কিছু মিলিয়েই তার জন্য মরিয়া হয়ে কোষাগার ঢেলে দিয়েছে মালিকপক্ষ।
মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক মানেই পারফরম্যান্সের নিশ্চয়তা নয়। বরং অতীতে অনেকবারই দেখা গেছে, বিস্ময় জাগানিয়া পারিশ্রমিক অনেক সময়ই বোঝা বা বড় চাপ হয়ে এসেছে অনেক ক্রিকেটারের জন্য। প্রত্যাশার চাপে তারা ভেঙে পড়েছেন। এবার পান্তকেও এখনও পর্যন্ত রাখা যায় সেই কাতারে।
এলএসজির ১১ ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে। ১০ ইনিংস খেলে পান্তের রান ১২৮, গড় ১২.৮০। ফিফটি কেবল একটি। তার ব্যাটিংয়ের মূল বিশেষত্ব যেটি, সেখানেও তিনি বিবর্ণ। স্ট্রাইক রেট মাত্র ৯৯.২২!
ফিফটি করেছেন স্রেফ একটি। সেই ম্যাচেও খুব বিধ্বংসী ছিলেন না। চারটি করে চার ও ছক্কা মারলেও ৬৩ রান করেছিলেন ৪৯ বলে।
তার দলের অবস্থাও খুব সুবিধের নয় আপাতত। প্রথম আট ম্যাচের পাঁচটি জিতে প্লে-অফে খেলার পথে বেশ এগিয়ে ছিল এলএসজি। কিন্তু এখন টানা তিন পরাজয়ে পয়েন্ট তালিকায় তারা নেমে গেছে সাত নম্বরে। প্রাথমিক পর্বে ম্যাচ বাকি আছে আর কেবল তিনটি। নিজের ম্যাচগুলি জেতার পাশাপাশি অন্যান্য সমীকরণ পক্ষে এলেই কেবল প্লে-অফে খেলতে পারে তারা।
দলের ও নিজের ব্যাটিং ফর্ম যে পান্তের ভেতরে প্রভাব ফেলেছে, তা ফুটে উঠেছে তার কথায়ও। আগের ম্যাচে চার রানে আউট হওয়ার পর ফর্ম নিয়ে প্রশ্নে বেশ বিরক্তিই প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
“দল যখন ভালো খেলছে না, তখন এটা নিয়েই ভাবা উচিত। কারণ এটা তো দলীয় খেলা। হ্যাঁ, অনেক সময় একজন ক্রিকেটার পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন বটে। তবে বারবার যদি কোনো একজনের দিকে আঙুল তোলা হয়, আমার মনে হয় সেটা খুব ঠিক নয়।”