টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলকে শুভকামনা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিশেষ আয়োজনে ক্রিকেটময় সময় কাটালেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু।
Published : 15 May 2024, 09:24 PM
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের ফুল টস বল ছক্কায় ওড়ালেন নিগার সুলতানা। দুই হাত উঁচিয়ে উল্লাসে মেতে উঠলেন বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু। নিগারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উদযাপন করলেন পিটার হাস নিজেও। অন্য ক্রিকেটাররাও একে একে এগিয়ে গেলেন তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে।
বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ক্রিকেট মাঠে বুধবার এমন ক্রিকেটানন্দের এক বিকেল কাটালেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই কূটনীতিক। এই বছর ছেলে ও মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুই দলকে শুভকামনা জানাতে বিশেষ এই আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
আগামী ১ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হবে ছেলেদের এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ। আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশেই হবে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
এই প্রথম কোনো বৈশ্বিক ক্রিকেট আসর আয়োজন করছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার বিশেষ এই আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের দেশে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে স্বাগত জানান পিটার হাস ও ডনাল্ড লু। রাতে দেশ ছাড়ার ব্যস্ততা থাকায় ছেলেদের দলের কেউ অবশ্য এখানে উপস্থিত হতে পারেননি।
মেয়েদের দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা, সহ-অধিনায়ক নাহিদা আক্তারসহ ১১ ক্রিকেটার ছিলেন এই বিশেষ অনুষ্ঠানে। আম্পায়ার সাথিরা জাকিরও ছিলেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে। বিসিবির প্রতিনিধি হয়ে আসেন নারী বিভাগের প্রধান হাবিবুল বাশার। এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের সহ-সভাপতি সাফওয়ান সোবহান, বসুন্ধরা কিংস ফুটবল ক্লাবের সভাপতি ইমরুল হাসানও ছিলেন এই আয়োজনে।
এমনিতে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট খুব একটা প্রচলিত খেলা নয়। তবে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে খেলাটির প্রচার-প্রসারের চেষ্টা করছে তারা। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে একটি বেলা কাটানোর এই আয়োজন ছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যস্ততা শেষ করে পড়ন্ত বিকেলে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সবুজ গালিচায় পা রাখেন পিটার হাস ও ডনাল্ড লু। তাদের গায়ে তখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি। নিগার, নাহিদারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে তাদের স্বাগত জানান।
এরপর শুভেচ্ছা বিনিময় ও পরিচয় পর্ব। বাঁহাতি ওপেনার মুর্শিদা খাতুনকে কিছু একটা বলেন পিটার হাস। তা শুনে হাসির রোল পড়ে যায় চারপাশে।
বিসিবি ও বসুন্ধরা গ্রুপকে একটি করে স্মারক ব্যাট উপহার দেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই কূটনীতিক। পরে বিসিবির পক্ষ থেকে ছেলেদের একটি টেস্ট জার্সি ও মেয়েদের একটি রঙিন জার্সি উপহার দেওয়া হয় পিটার হাস ও ডনাল্ড লুকে।
এরপর মজার ক্রিকেট পর্ব। প্যাড-হেলমেট পরে ব্যাটিংয়ে নেমে যান পিটার হাস ও ডনাল্ড লু। নাহিদা, রাবেয়া খান, রিতু মনি, সুলতানা খাতুনদের বোলিংয়ে বেশ কিছুক্ষণ ব্যাটিং করেন তারা। উইকেটের মাঝে দুজনের রানের জন্য দৌড় দেখে মাঠে আরেকদফা হাসির জোয়ার বয়ে যায় মাঠজুড়ে।
একবার তো নিজেই রান আউট হয়ে লু জিজ্ঞেস করে বসেন, ‘আমি রান আউট হয়েছি? নাকি সে (পিটার হাস)? আমি কেন আউট!’ আম্পায়ার সাথিরা তখন হাসি দিয়ে যেন জানান, ‘দুজনের কেউই আউট নন। ব্যাটিং চালিয়ে যান।’
১৫ মিনিটের ক্রিকেট ম্যাচের শেষ দিকে প্যাড-হেলমেট খুলে বোলিংও করেন পিটার হাস। জ্যোতির কাছে ছক্কা হজমের পর আর খেলা চালিয়ে নেননি। হাসিমুখে ক্রিকেটারদের সঙ্গে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তারা।
পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নারী ক্রিকেটের অগ্রগতিতে সাথিরার ভূমিকার প্রশংসা করেন ডনাল্ড লু। চোখে-মুখে আনন্দের ছটা নিয়ে নিগারদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার অনুভূতিটাও জানান যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“মেয়েদের দলের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে অনেক আনন্দিত। বাংলাদেশ ক্রিকেটপাগল দেশ। আমরা এই উন্মাদনার অংশ হতে পেরে খুশি। ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করব আমরা। মেয়েদের বিশ্বকাপ আয়োজন করবে বাংলাদেশ। ছেলেদের দলের জন্য অনেক শুভকামনা। আমরা আশা করি, আমাদের দেশ থেকে তারা জয় নিয়ে ফিরবে।”
“আজকের আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসিকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি। তিনি বিশ্বের একজন কিংবদন্তি। এই দেশের সব শ্রেণির মেয়েদের ক্রিকেট খেলার প্রতি আকৃষ্ট করতে তিনি এক অনুপ্রেরণার নাম।”
পিটার হাস ও ডনাল্ড লু-র ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখে অভিভূত নিগার। তাদেরকে খেলাটির ব্যাপারে মৌলিক ধারণা দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“ভিন্নরকম একটা অভিজ্ঞতা হলো। আমরা সবাই খুব উপভোগ করেছি। তারা তো সেভাবে জানে না ক্রিকেটের ব্যাপারে। অনেক আগ্রহ দেখলাম তাদের। অনেক প্রশ্ন করছিল ক্রিকেট নিয়ে। তাদের খুব রোমাঞ্চিত দেখলাম যে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। সেগুলো নিয়েই কথা বলছিলাম।”