রেজাউর রহমান রাজার বোলিং তোপে সহজ জয়ে শুরু। তৌহিদ হৃদয়ের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ছুটতে থাকল জয়রথ। আঙুলের চোটে হৃদয় ছিটকে যাওয়ার পর এগিয়ে এলেন ইমাদ ওয়াসিম। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সিলেট স্ট্রাইকার্স পেল টানা পঞ্চম জয়। বিপিএলের এবারের আসরে এখন পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল নতুন এই ফ্র্যাঞ্চাইজি।
মিরপুর শের-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢাকার প্রথম পর্বের চার ম্যাচেই দাপুটে জয় পায় সিলেট। তাদের সামনে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি প্রতিপক্ষ দলগুলো। তবে পঞ্চম ম্যাচে সোমবার সিলেটের কঠিন পরীক্ষাই নেয় ঢাকা ডমিনেটর্স। তবে অভিজ্ঞতায় ভর করে চট্টগ্রামে সেই পরীক্ষায় উৎরে যায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
টুর্নামেন্টের প্রথম পাঁচ দিনে টানা চার ম্যাচ খেলার চ্যালেঞ্জের পর পাঁচ দিনের বিরতি পায় তারা। অনেক সময় এমন বিরতি ভালো খেলতে থাকা যে কোনো দলের ছন্দপতনের কারণ হয়। এখানে সেই শঙ্কাও জাগলেও শেষ পর্যন্ত দলগত পারফরম্যান্সের ছাপ রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সিলেট।
ইমাদ, রুবেল হোসেন, নাজমুল ইসলামরা ঢাকাকে ১২৮ রানে আটকে রাখেন। রান তাড়ায় নাজমুল হোসেন শান্ত, জাকির হাসানরা ভালো কিছু করতে ব্যর্থ হন। ফলে আসরে প্রথমবারের মতো কিছুটা চাপে পড়ে তারা। ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব বর্তায় মুশফিকুর রহিম, থিসারা পেরেরাদের কাঁধে।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে দেন মুশফিক। পরে ঝড়ো ফিনিশিংয়ে ৪ বল আগেই জয় নিশ্চিত করেন থিসারা। বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে মুশফিককে কিছুটা সঙ্গ দেন ইমাদ। এই পাকিস্তানি অলরাউন্ডারের হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
আগের চার ম্যাচে জয়ের কারিগর ছিলেন রাজা, হৃদয়, জাকির, শান্তর মতো তরুণ ক্রিকেটাররা। প্রতিটি জয়ের পরই এই তরুণরা বলে আসছিলেন দল থেকে পাওয়া স্বাধীনতার কথা। নির্ভার ও মুক্ত হয়ে খেলার সুযোগটা লাগিয়ে নিজেদের উজার করে দেন তারা। এতেই ধরা দিতে থাকে একের পর এক জয়। ঢাকার বিপক্ষে তরুণদের খানিকটা নিষ্প্রভ দিনে অভিজ্ঞরা দেখালেন, তারাও আছেন মাথার ওপর ছায়া হয়ে।
ঢাকাকে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে সেই কথাগুলোই তুলে ধরেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার জয়ী ইমাদ ওয়াসিম। তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে দলীয় রসায়ন জমেছে সিলেটের।
“খুবই ভালো (ড্রেসিংরুমের পরিবেশ)… এটি অসাধারণ শুরু। প্রতিটি দলই শুরুর চার-পাঁচ ম্যাচ জিততে চায়। সৌভাগ্যবশত আমরা সবকটি জিতেছি।”
“ভালো বিষয় হলো, প্রত্যেকেই অবদান রাখছে। ফাস্ট বোলাররা, স্পিনাররা, টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা, মিডল অর্ডার-লোয়ার অর্ডার, সবাই। এখনও পর্যন্ত আমাদের দলীয় সমন্বয় দারুণ। আমাদের দলটাও খুব ভালো। বিশেষ করে স্থানীয় ক্রিকোটরদের কথা বলতে হবে… শান্ত, হৃদয়, মুশফিক, মাশরাফিরা অসাধারণ পারফর্ম করছে।”
এই দলকে মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রয়েছেন বিপিএল ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি। ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে আকবর আলি খোলামেলাই বলেছেন, প্রথম দিনের টিম মিটিংয়ের পরই সবার বুক চওড়া হয়েছে মাশরাফির অভয়ে।
জাকির-হৃদয়রাও জানিয়েছেন, তাদের ওপর মাশরাফি তথা দলের পূর্ণ সমর্থনের কথা। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ইমাদ দ্বিতীয়বারের মতো মাশরাফির নেতৃত্বে খেলছেন। প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনিও।
“মানুষটি (মাশরাফি) বাংলাদেশের হয়ে ২০ বছর খেলেছেন। তার কাছে আপনি কী প্রত্যাশা করবেন! ক্রিকেটের কিংবদন্তি তিনি। অসাধারণ নেতা, দারুণ মানুষ। ক্রিকেটের ভেতর-বাহির সব তার জানা। ২০০০ সাল থেকে ক্রিকেট খেলছেন তিনি।”
“তিনি কতটা ভালো, তা ব্যাখ্যা করার মতো উপযুক্ত ভাষা আমার জানা নেই। ব্যাপারটা হলো শ্রদ্ধাবোধের। তাকে বড় ভাইয়ের মতোই সম্মান করি। তিনি আমাদের নেতা, তিনি যা বলেন, আমরা অনুসরণ করি। ব্যাপারটা হলো খেলা উপভোগ করা। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মধ্যে সেরা মানুষদের একজন তিনি।”
প্রথম চার ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় শীর্ষে উঠে গিয়েছিলেন মাশরাফি। কিন্তু ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে থাকলেও প্রথম ১৯ ওভার বোলিংই করেননি তিনি। ফিল্ডিংয়ের সময়ও তার দৌড়ানো বা থ্রোয়িংয়ে দেখা যায় স্পষ্ট অস্বস্তি।
পরে অবশ্য শেষ ওভার বোলিং করেন তিনি। ওই ওভারে টানা ইয়র্কার করে নাসির হোসেন ও তাসকিন আহমেদকে কোনো বাউন্ডারিই মারতে দেননি তিনি। আগে কেন বোলিং করেননি সিলেট অধিনায়ক, সেই কৌতুহল তাই জাগল। সংবাদ সম্মেলনে কারণে জানালেন ইমাদ।
“না না…(মাশরাফির) কোনো চোট নেই। আমরা খুবই ভালো বোলিং করছিলাম। তাই আমাদের টানা করানো ছাড়া তার বোলিংয়ের সুযোগ ছিল না। দুর্দান্ত নেতা তিনি, অসাধারণ মানুষ। আজ ২০তম ওভার বোলিং করেছেন তিনি, টি-টোয়েন্টিতে যা সবচেয়ে কঠিন। ওই ওভারে ইয়র্কার করেছেন, যা দারুণ।”
“ওখানে যদি ১৫-১৬ রান দিয়ে আসত, তাহলে আমরা ম্যাচটি হেরে যেতে পারতাম। কিন্তু মনে হয় তিনি ৬-৭ রানের (আসলে ৪) মতো দিয়েছেন। তার কাছ থেকে এমন কিছু ছিল দারুণ।”