সংস্কারের অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। ‘ফতুল্লা স্টেডিয়াম’ নামেই মাঠটি অধিক পরিচিত। এই স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক মান পুনরায় ফেরাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অর্থায়নে মঙ্গলবার দুপুরে এই মাঠের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিসিবি পরিচালক আকরাম খান, তানভীর আহমেদরা।
পরে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি’র পরিচালক আকরাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নের স্বার্থে আন্তর্জাতিক এই ভেন্যু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি। এর মধ্যে কাজও শুরু হয়ে গেছে।’ আগামী মৌসুমে সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
২০০০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের পাশে নির্মিত স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ এই মাঠে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে কেনিয়ার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সবশেষ ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের কয়েকটি ম্যাচ হয় ২৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে।
এরপর থেকে সংস্কারের অভাবে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামটি কেবল নামেই ‘আন্তর্জাতিক’ হিসেবে রয়ে গেছে। মূল মাঠের ডিজিটাল স্কোরবোর্ড অকেজো, ফ্ল্যাডলাইট সব চুরি হয়ে গেছে। দর্শক ছাউনি ও আসন প্রায় সবই ভাঙা। প্রেস বক্সে নেই বসার মত অবস্থা, ভিআইপি গ্যালারি ও খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমও ব্যবহারের অনুপযোগী।
এর আউটার স্টেডিয়াম কচুরিপানায় ভরপুর, একপাশে হয় সবজির চাষ। বর্ষা মৌসুমে থৈ-থৈ পানি গড়িয়ে আসে মূল মাঠেও। এমনকি স্টেডিয়ামের নামফলকের লেখাটিও উঠে গেছে।
এই বিষয়ে বিসিবি বলছে, সংস্কার করে অন্তত খেলার উপযোগী করার উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। পরবর্তীতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ (এনএসসি,বি) সামগ্রিক সংস্কারের কাজ করবে। এজন্য বিসিবি’র পক্ষ থেকেও চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
আকরাম খান বলেন, ‘এই স্টেডিয়ামে আমাদের অনেক স্মৃতি আছে। এখানে আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট ছাড়াও অনেক বড় বড় ম্যাচ খেলেছি। যে কোনো কারণেই হোক মাঠটিকে পুরোপুরি আমরা পাচ্ছিলাম না। খেলারও উপযোগী ছিল না।’
“যদিও সংস্কার কাজটি এনএসসির করার কথা। কিন্তু ওনাদের কাজটি করতে সময় লাগবে। তাই বিসিবি সভাপতি বোর্ডের টাকায় উন্নয়ন কাজটা করার সিদ্ধান্ত নেন। এই মৌসুমে না হলেও পরের মৌসুমে এই মাঠকে একটা আন্তর্জাতিক মানে তৈরি করে দিতে পারব। এটা করতে পারলে খেলোয়াড়রা ভালো সুযোগ পাবে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপকার হবে।”
খেলোয়াড়দের সুবিধার জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্যান্য আরও মাঠ নিয়েও বিসিবির কাজ করার ভাবনা রয়েছে বলে জানান এই পরিচালক।
খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটিকে খেলার উপযোগী করতে অন্তত ৬ ফুট উচু করতে হবে বলে জানান বিসিবির আরেক পরিচালক ও মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ডিএনডি এলাকার ভেতরে হওয়ার কারণে মাঠটিতে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। ডিএনডির জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সরকার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। আমরাও মাঠটিকে উচু করছি। সুতরাং মাঠে আর জলাবদ্ধতার সমস্যাটা থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই স্টেডিয়ামটির ওপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের করা নিরীক্ষা অনুসরণ এবং এনএসসির সাথে পরামর্শ করেই উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যাতে পরবর্তীতে এনএসসি সামগ্রিক সংস্কার কাজের উদ্যোগ নিলে কোনো প্রকার সমস্যা তৈরি না হয়।’
এসময় তানভীর জানান, স্টেডিয়ামটিতে নিয়মিত খেলা শুরু হলে তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের দিকেও আলাদা নজর দিবে কর্তৃপক্ষ। মাঠটি দেখভালের জন্য এনএসসির একজন প্রশাসক ও বিসিবির পক্ষ থেকে একজন ভেন্যু ম্যানেজার থাকবেন।