ব্রিজবেনে অসাধারণ এক স্পেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্মরণীয় জয় এনে দেওয়া পেসার শামার জোসেফ ছিটকে গেছেন আইএল টি-টোয়েন্টি থেকে।
Published : 30 Jan 2024, 09:43 AM
অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ শেষেই দুবাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল শামার জোসেফের। দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের প্রথম স্বাদ পাওয়ার কথা তার দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে। কিন্তু এখন তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে দেশে। ব্রিজবেনে যে টেস্টে অসাধারণ এক স্পেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন তিনি, সেই টেস্টেই পাওয়া চোটে আইএল টি-টোয়েন্টি থেকে ছিটকে গেছেন ২৪ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার।
ব্রিজবেন টেস্টের ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় মিচেল স্টার্কের একটি ইয়র্কার ছোবল দেয় শামারের পায়ের অগ্রভাগে। এরপর আর ব্যাটিং চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। ফিজিও ও সতীর্থের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। পরে স্ক্যান করিয়ে কোনো চিড় ধরা পড়েনি। তবে খেলার মতো অবস্থায় তিনি আপাতত নেই।
দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তার অভিযান শুরু হবে তাই আগামী মাসে পাকিস্তান সুপার লিগে। গ্যাবায় বিরোচিত পারফরম্যান্সের পরই তাকে দলে নিয়েছে পেশাওয়ার জালমি।
স্টার্কের বলে ওই চোট পাওয়ার পর সেদিন আর বোলিং করতে পারেননি শামার। চিড় ধরা না পড়লেও প্রচণ্ড ব্যথা থাকায় পরদিনও তার মাঠে যাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু দলীয় চিকিৎসকের পরামর্শমতো দলকে উৎসাহ দিতে তিনি মাঠে যান। পরে ব্যথানাশক ইনজেকশন দিয়ে খেলতেও নেমে যান। এরপর তো আগুনে এক স্পেলে ৭ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উপহার দেন অবিস্মরণীয় এক জয়। ২৭ বছরের খরা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় ক্যারিবিয়ানরা।
সেদিন ব্যথাকে হারিয়ে ডিনার ব্রেকের আগে টানা ১০ ওভারের স্পেল করেন তিনি। সেই স্পেল চালিয়ে যান বিরতির পরও। ১৪০ কিলোমিটার গতি ছাড়িয়ে একসময় ১৪৫ কিলোমিটারের আশেপাশে গতিতে বল করতে থাকেন, এমনকি স্পেলের শেষ দিকে পৌঁছে যান ১৫০ কিলোমিটারের কাছে।
এই টেস্টের ম্যান অব দা ম্যাচ তো বটেই, ম্যান অব দা সিরিজও হন তিনিই। আগের টেস্টে অভিষেক ম্যাচে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, অবদান রেখেছিলেন ব্যাট হাতে।
টেস্ট অভিষেকের সময়ই তার উঠে আসার গল্প সাড়া ফেলে ক্রিকেট দুনিয়ার। গায়ানার এক দুর্গম গ্রাম, নিকটবর্তী শহর থেকে যেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায় নদীপথ ও কখনও কখনও পথটুকু পাড়ি দিতে দুই দিনও লেগে যায়, যেখানে টেলিফোন ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ছিল না ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত, যে গ্রামের জনসংখ্যা স্রেফ সাড়ে তিনশ, সেখান থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার গল্পটিই হার মানায় রূপকথাকে। তবে শামার স্রেফ সেখানেই থেমে থাকেননি। পারফরম্যান্সেও ইতিহাস গড়েছেন আবির্ভাবের সিরিজে।
এমন পারফরম্যান্সের পর বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে তাকে নিয়ে টানাটানি পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আইএল টি-টোয়েন্টি ও পিএসএল থেকে যেমন ডাক পেয়েছেন। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্য অনেক তারকার মতো তিনি জাতীয় দল বাদ দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বুঁদ হবেন না বলে সরাসরিই জানিয়ে দেন ব্রিজবেন টেস্ট শেষে।
“ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে সবসময়ই প্রস্তুত থাকব আমি। সরাসরি এটা বলতে কোনো ভয় নেই আমার। এরকম সময় আসতে পারে, যখন টি-টোয়েন্টি আসবে এবং টেস্ট ক্রিকেটও থাকবে একই সময়… আমি সবসময়ই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে তৈরি থাকব, যত টাকার হাতছানিই আমার সামনে আসুক না কেন।”
টেস্ট সিরিজ শেষে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সীমিত ওভারের সিরিজে শামারের থাকার কথা ছিল না আগে থেকেই।