ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের নবম রাউন্ডে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করা সাইফ হাসান পরে বোলিংয়ে নিয়েছেন দুটি উইকেট।
Published : 06 Apr 2024, 07:35 PM
দুর্দান্ত এক শতকে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিলেন সাইফ হাসান। পরে টিপু সুলতানের দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি সাইফও বল হাতে রাখলেন অবদান। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে অনায়াসে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে দুইয়ে উঠল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার ৭৩ রানে জিতেছে শেখ জামাল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের নবম রাউন্ডে ২৯৩ রানের লক্ষ্যে ৩৫ বল বাকি থাকতেই ২১৯ রানে গুটিয়ে গেছে প্রাইম ব্যাংক।
৯ ম্যাচে শেখ জামালের সপ্তম জয় এটি। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবেরও সমান ৭ জয়। শ্রেয়তর নেট রান রেটের সৌজন্যে টেবিলের দুইয়ে শেখ জামাল। সমান ম্যাচে ৬ জয়ে চার নম্বরে তামিম ইকবালের প্রাইম ব্যাংক।
অলরাউন্ড নৈপুণ্যে শেখ জামালের নায়ক সাইফ। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরিতে ১২০ বলে ১১৫ রান করেন তিনি। ১২ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন ২৫ বছর বয়সী ওপেনার। পরে বল হাতে তিনি নেন তামিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
প্রাইম ব্যাংককে আটকে রাখায় বড় অবদান টিপুর। ৫৩ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন ২৫ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার। লিগের প্রথম ম্যাচে গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমির বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করেন সাইফ ও সৈকত আলি। প্রথম ওভারে হাসান মাহমুদের বলে বাউন্ডারি মারেন সাইফ। পরের ওভারে রেজাউর রহমান রাজার বলে মারেন দুটি চার। পঞ্চম ওভারে হাসানের বলে পরপর তিনটি চার মারেন সাইফ।
পাওয়ার প্লেতে ৫০ রান পায় শেখ জামাল। অষ্টাদশ ওভারে ৯১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন রুবেল হোসেন। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৫৫ বলে ৪৩ রান করেন সৈকত।
দ্বিতীয় উইকেটে ফজলে মাহমুদের সঙ্গে ৯৩ রানের জুটি গড়েন সাইফ। ৬২ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া ওপেনার পরের পঞ্চাশ করেন ৪৫ বলে। অলক কাপালির বলে কাভার ড্রাইভে চার মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
৪২ রান করা ফজলে মাহমুদ রান আউট হলে ভাঙে জুটি। চার নম্বরে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। পরে হাসান মাহমুদের স্লোয়ার ডেলিভারি ক্রিজের অনেকটা ভেতরে গিয়ে খেলার চেষ্টায় হিট উইকেট হন সাইফ।
অল্প সময়ের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারানো দলকে আরও একবার এগিয়ে নেন ইয়াসির আলি চৌধুরি ও জিয়াউর রহমান। ৪৫ বলে দুজন মিলে গড়েন ৬৫ রানের জুটি। দলকে নিয়ে যান তিনশর কাছাকাছি। ২২ বলে ২৭ রান করেন ইয়াসির। ২ চার ও ৩ ছক্কায় জিয়ার ব্যাট থেকে আসে ৩২ বলে ৩৯ রান।
বড় লক্ষ্যে ইতিবাচক শুরু করেন তামিম ও পারভেজ হোসেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তরুণ বাঁহাতি ওপেনার পারভেজ। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ বলে ২২ রান করে ষষ্ঠ ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তিনি।
তিন নম্বরে নেমে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করতে ব্যর্থ হন শাহাদাত। ১৬ রান করতে ২৯ বল খেলেন তিনি। দুটি উইকেটই নেন রবিউল ইসলাম। নতুন বলে টানা ১০ ওভারের স্পেলে ৩৯ রান দেন এই অফ স্পিনার।
অভিজ্ঞ ওপেনার তামিমও ফিরতে পারতেন অল্পেই। পুরো ইনিংসে তার অন্তত ৩টি ক্যাচ ছাড়ে শেখ জামালের ফিল্ডাররা। দুইবার জীবন পেয়ে ৫৩ বলে পঞ্চাশ করেন তামিম। লিগের সবশেষ ৬ ম্যাচে এটি তার পঞ্চম ফিফটি। কিন্তু সেঞ্চুরি নেই একটিও।
পঞ্চাশ পেরিয়ে আরও একবার বেঁচে যান প্রাইম ব্যাংক অধিনায়ক। তবে এরপর আর টিকতে পারেননি। তৃতীয় জীবন পাওয়ার পরপরই সাইফের বলে পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দেন তামিম।
তামিমের বিদায়ে ভাঙে জাকির হাসানের সঙ্গে গড়া ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫২ রানের জুটি। টেস্ট সিরিজ শেষে ফেরা জাকির ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৫ বলে করেন ৩৩ রান। দেড়শ পার হওয়ার পরপর টিপুর প্রথম শিকার হন জাকির। এরপর অলক ও শেখ মেহেদি হাসান দ্রুত ফিরলে পরাজয় একরকম নিশ্চিত হয়ে যায় প্রাইম ব্যাংকের।
শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কিছুটা লড়াই করেন মোহাম্মদ মিঠুন। তবে তার ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৬ বলে ৪২ রানের ইনিংসে পরাজয়ের ব্যবধানই শুধু কমে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৯২/৬ (সাইফ ১১৫, সৈকত ৪৩, ফজলে মাহমুদ ৪২, সোহান ৭, ইয়াসির ২৭, জিয়াউর ৩৯, তাইবুর ০*; হাসান ১০-১-৬৪-৩, রাজা ৮-০-৬৮-১, নাজমুল ৯-১-৪২-০, মেহেদি ১০-০-৩৪-০, রুবেল ৮-০-৫৩-১, অলক ৫-০-২৩-০)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৪.১ ওভারে ২১৯ (তামিম ৬৯, পারভেজ ২২, শাহাদাত ১৬, জাকির ৩৩, মিঠুন ৪২, অলক ০, মেহেদি ৪, নাজমুল ৮, হাসান ১৪,, রাজা ৩*, রুবেল ১; সাইফ ৯-০-৪৪-২, রবিউল ১০-০-৩৯-২, শফিকুল ২-০-১৬-০, টিপু ১০-০-৫৩-৪, রিপন ২.২-০-১১-০, ইয়াসির ১.৪-০-১৫-০, জিয়াউর ২-০-১৬-০, তাইবুর ৭.১-০-২৩-২)
ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৭৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাইফ হাসান