‘বাজবল’ নিয়ে আলোচনা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যতই অপছন্দ করুক, এই শোরগোল থামছে না। বরং ইংল্যান্ড থেকে ছড়িয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বে এটি জায়গা করে নেবে বলেই মনে করেন মার্ক বাউচার। দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ ও উইকেটকিপিং কিংবদন্তির ধারণা, টেস্ট ক্রিকেটে সব দলই আস্তে আস্তে খেলার ধরন হিসেবে বেছে নেবে ‘বাজবল।’
Published : 12 Jul 2022, 11:36 AM
ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর এবারের ইংলিশ গ্রীষ্মে যে ঘরানার ক্রিকেট খেলছে, সেটিকেই বলা হচ্ছে ‘বাজবল।’ প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর যুক্তরাজ্য সম্পাদক অ্যান্ড্রু মিলার। পরে তা ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ম্যাককালামের ডাকনাম ‘বাজ’-এর সঙ্গে তার কৌশল ও মানসিকতাকে মিলিয়ে এই শব্দের জন্ম।
এবারের গ্রীষ্মে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্ট ও ভারতের বিপক্ষে এক টেস্ট- সবকটিতেই ভয়ডরহীন ও আগ্রাসী টেস্ট ক্রিকেট খেলতে দেখা গেছে ইংলিশদের। টেস্ট ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা চার টেস্টে আড়াইশর বেশি রান তাড়া করে জিতেছে তারা।
ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে প্রথম ইনিংসে বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলেও শেষ ইনিংসে ৩৭৮ রান তাড়ায় স্রেফ তিন উইকেট হারিয়ে জিতে গেছে তারা ওভারপ্রতি প্রায় ৫ রান করে তুলে। এই গ্রীষ্মে গড়ে তারা তুলেছে ওভারপ্রতি ৪.৬ রান করে। টেস্ট ক্রিকেটে এই পরিসংখ্যান বিস্ময়কর, এই মানসিকতা চমকপ্রদ। ‘বাজবল’ তাই এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে চর্চিত শব্দ।
ম্যাককালাম যদিও নিজে কদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই টার্ম তার কাছে ‘সিলি’ মনে হয় এবং স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন, এটি নিয়ে তার বিন্দুমাত্র কৌতূহল নেই। তবে তিনি না চাইলেও এটিকে ঘিরে উত্তেজনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
বাউচার যেমন বেশ রোমাঞ্চিত এটি নিয়ে। সামনে তার দলকে সামলাতে হবে এই ‘বাজবল।’ লম্বা সফরে এখন ইংল্যান্ডে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা দল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে আগামী মাসে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে ম্যাককালাম ও বাউচারের দল।
ইংল্যান্ড সফরে দলের প্রস্তুতি ম্যাচের আগে টন্টনে বাউচার বললেন, টেস্ট ক্রিকেটে এই ঘরানাই এখন জনপ্রিয় হবে। অবশ্য এটিও মনে করিয়ে দিলেন, এভাবে খেলতে পক্ষে থাকতে হবে কন্ডিশন।
“লাল বলের ক্রিকেট সম্ভবত এই পথেই এগোচ্ছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আবির্ভাবের পর টেস্ট ক্রিকেটে রান রেট বেড়েছে। কোনো কোনো সময় অবশ্যই কন্ডিশনের কারণে এভাবে খেলা সম্ভব হবে না, তবে কন্ডিশন পক্ষে থাকলে আমি নিশ্চিত, অনেক ব্যাটিং লাইন আপই চাইবে এভাবে খেলে বোলারদের চাপে রাখতে।”
“ইংল্যান্ডকে এভাবে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে কন্ডিশন। ব্যাপারটি হলো স্মার্ট থাকা এবং ওইদিনের কন্ডিশন বুঝে কাজ করা। ইংল্যান্ড আমাদের দেখিয়েছে যে, এটা কতটা কাজে দিয়েছে। এটিই আসলে ব্যাপারটিকে ত্বরান্বিত করেছে। আমি মনে করি, টেস্ট ক্রিকেট এই পথেই এগোচ্ছে।”
ইংলিশ মৌসুমে এবার সবগুলো টেস্টেই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ছিল দারুণ। কন্ডিশনও খুব বেশি ব্যাটিং প্রতিকূল ছিল না। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ছিল, যে বল দিয়ে খেলা হয়েছে। এই মৌসুমের ডিউক বলগুলি সাধারণ সময়ের মতো অতটা সুইং সহায়ক নয়। ২০ ওভারের পরপরই এটি নরম হয়ে যাচ্ছে, তাতে সুইং ও মুভমেন্ট লম্বা সময় ধরে মিলছে না।
তবে পারিপার্শ্বিকতার সহায়তা যেমনই থাকুক, ইংল্যান্ডের মানসিকতা পরিষ্কার। খেলোয়াড়ী জীবনে ম্যাককালামের কাছে আগ্রাসনই ছিল শেষ কথা। কোচ হিসেবেও তার কৌশলের কেন্দ্রে আছে একই মানসিকতা। ম্যাককালামকে খুব ভালো করে চেনেন বলেই বাউচার অবাক হননি ‘বাজবল’ দেখে।
“আমরা জানি ব্রেন্ডন (ম্যাককালাম) কীভাবে খেলত। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে কোচ থাকার সময়ও তাকে ঘিরে আলোচনা আমরা শুনেছি যে, সে সত্যিই এতটা আগ্রাসী খেলার ধরন বেছে নিতে চেয়েছিল। এটা দেখতে খুবই রোমাঞ্চকর। এই খেলাগুলো আমি অনেকটুকু দেখেছি এবং ইংল্যান্ড সত্যিই খুব ভালো খেলেছে।”
নিউ জিল্যান্ড ও ভারত এই ‘বাজবল’ ক্রিকেটে চমকে গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকা আরেকটু বেশি প্রস্তুত থাকবে বলে মনে করেন বাউচার।
“আমাদের জন্য হয়তো এটা একটু বাড়তি সুবিধা থাকবে যে, আমরা এটাকে দেখেছি এবং জানি যে, তারা মাঠে নেমে এই ঘরানার ক্রিকেট খেলবে। গোটা দুই ব্যাপার এখানে মাথায় রাখতে হবে যে, এটি (বাজবল) করার মতো উপযুক্ত ক্রিকেটার দলে থাকতে হবে এবং কন্ডিশনও পক্ষে থাকতে হবে।”
“আমরা ইংল্যান্ডে এসে এবার দেখলাম যে প্রতিটি দিনই বেশ গরম পড়ছে। দারুণ আবহাওয়া, উইকেট তাই কিছুটা নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে। কিছু আলোচনা আমাদের হয়েছে যে, তাদের আগ্রাসী ক্রিকেটকে পাল্টা আক্রমণ করতে হবে এবং এই মানসিকতা রাখতে হবে। আগ্রাসী থাকার কথা আমরা সবসময়ই বলে আসছি, পাশাপাশি স্মার্ট থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। এখানেও সমীকরণ চলে আসছে যে, আমরা কতটা স্মার্টনেস দেখাতে পারি।”