উপমহাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে ধারাভাষ্যকক্ষে যাওয়া মানে ধরে নেওয়া হয় ক্রিকেট মাঠ থেকে দূরে সরা। দিনেশ কার্তিকও সেই আয়োজন সেরে নিচ্ছেন বলেই ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। তবে এবারের আইপিএলে তিনি দেখালেন, তার ক্যারিয়ার ‘ফিনিশড’ নয়, বরং ফিনিশার হিসেবে তিনি এখন নতুন উচ্চতায়। ২২ গজে ঝড় তুলে এই কিপার-ব্যাটসম্যান স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ভারতীয় দলে খেলতে চান আবারও।
Published : 17 Apr 2022, 12:53 PM
এমনিতে ফিনিশার হিসেবে কার্তিকের একরকম পরিচিতি ছিলই। শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ বলে তার সেই ছক্কায় শিরোপা জয় কে ভুলতে পারে! প্রভাববিস্তারী ইনিংসও তিনি বেশ কিছু খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও আইপিএলে। তবে এবারের আইপিএলে নিজেকে ছাড়িয়ে এবং আগের সব ধারণা মাড়িয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি।
পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ১৪ বলে ৩২ রান করে এবারের আইপিএল শুরু তার। এরপর কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ৭ বলে ১৪, রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ২৩ বলে ৪৪, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ২ বলে ৭। এই সব ম্যাচেই তিনি ছিলেন অপরাজিত।
প্রথমবার আউট হন পঞ্চম ম্যাচে এসে, চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে। তবে সেদিনও করেন ১৪ বলে ৩৪।
দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে শনিবার তো ছাড়িয়ে যান আগের ৫ ম্যাচের ইনিংসকেও। দ্বাদশ ওভারে উইকেটে গিয়ে কিছুটা সময় নেন শুরুতে। ১৭ ওভার শেষেও তার রান ছিল ২০ বলে ২৪। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানের এক ওভারে চারটি চার ও দুই ছক্কায় নেন ২৮ রান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৩৪ বলে ৬৬ রান করে!
সব মিলিয়ে ৬ ইনিংসে তার রান ১৯৭। একবার মাত্র আউট হওয়ায় গড়ও ১৯৭। স্ট্রাইক রেট ২০৯.৫৭। আসরে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কার্তিকের ধারেকাছে নেই কারো স্ট্রাইক রেট। ম্যাচ সেরা হয়েছেন দুবার।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ভারতের হয়ে কোনো সংস্করণে আর খেলা হয়নি তার। গত বছর ইংলিশ মৌসুমে তিনি ধারাভাষ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। ধারাভাষ্যকার হিসেবে সতীর্থদের পারফরম্যান্সের কাটাছেঁড়া করেছেন, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ধারাভাষ্যে নিজের সহজাত দক্ষতা দেখিয়ে আলাদা একটি ঘরানাও তৈরি করতে পেরেছেন দ্রুতই। তাতে অনেকেই মনে করেছিল, নতুন ক্যারিয়ারের পথ খুঁছে নিচ্ছেন কার্তিক। কিন্তু তার হৃদয়ে যে এখনও আঁকা ভারতীয় দলের ড্রেসিং রুমের ছবি!
আগেও টুকটাক তিনি বলেছেন, অন্তত ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভারতীয় দলের অংশ হতে চান। তবে তাতে জোর তেমন ছিল না, বিশ্বাস করার লোকও খুব একটা ছিল না। এবার আইপিএলের পারফরম্যান্সে স্বপ্নের পালে জোর হাওয়া লেগেছে। দিল্লির বিপক্ষে ম্যাচ সেরা হওয়ার পর সেটা সরাসরিই বললেন ৩৭ ছুঁইছুঁই ক্রিকেটার।
“আরও বড় একটি লক্ষ্যের কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে। আমি সত্যি সত্যিই প্রচণ্ড পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কখনও কখনও লোকে তা বিশ্বাস করতে চায় না। তবে আমার লক্ষ্য দেশের হয়ে বিশেষ কিছু করা। এটাও সেই ভ্রমণেরই অংশ।”
“ভারতীয় দলের অংশ হওয়ার জন্য যা কিছু করা দরকার, সম্ভব সবকিছুই আমি করছি। এটা সেই পথেই আরেকটা পদক্ষেপ।”
এবারের আইপিএলে তার ব্যাটিংয়ের একটা লক্ষণীয় ব্যাপার, উইকেটে তার স্থিরতা। কোনো পরিস্থিতিতেই আতঙ্কিত না হওয়া। আগে উইকেটে গিয়ে তিনি ছটফট করতেন অনেক সময়। সেটা এখন উধাও। চাপের লেশমাত্র দেখা যায় না তার শরীরী ভাষায় ও ব্যাটিংয়ে।
কার্তিক বললেন, ব্যাটিং পজিশন ও ম্যাচ পরিকল্পনা নিয়ে নিশ্চয়তা, নিজের পরিশ্রম ও প্রস্তুতি থেকেই এসেছে এটা।
“এটা জেনে ভালো লাগছে যে লোকে এখন আমার মাঝে স্থিরতা খুঁজে পাচ্ছে। সাধারণত তারা তো বলে আমি একটু অস্থির। আমাকে বলতেই হবে, এই অবস্থান ও স্থিরতা এসেছে প্রস্তুতি থেকে।”
“যখন জানা থাকে একটা ইনিংসে কোন পথে এগোব, তখন তা স্থির থাকার সুযোগ করে দেয়। এছাড়াও, (উইকেটে গিয়ে) নির্দিষ্ট ওই মুহূর্তে থাকার ব্যাপারটিও গুরুত্বপূর্ণ, যদিও কথাটি শুনতে খুব ক্লিশে শোনায়। কিন্তু আমার ব্যাটিংয়ের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ।”