মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় সামার ওয়ার্নের গলা ধরে আসছিল বারবার। চোখের কোণে ছলছল করছিল জল। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে রাতের অন্ধকার ছাপিয়ে গেল শোকের নিকষ কালো আঁধার- শেন ওয়ার্নকে হারানোর কষ্ট। আবেগঘন এক অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর চোখের জলে শেষ বিদায় জানানো হলো অস্ট্রেলিয়ান স্পিন কিংবদন্তিকে।
Published : 30 Mar 2022, 09:39 PM
২৬ দিন আগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো ওয়ার্নকে চিরবিদায় জানাতে বুধবার মেলবোর্নে উপস্থিত হন এককালের জাতীয় দলের সতীর্থ, প্রতিপক্ষ থেকে শুরু করে নানা রথী-মহারথী। বিখ্যাত এই মাঠে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের সামনে আবেগমাখা বক্তৃতা দেন তার বাবা, ভাই ও তিন সন্তান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের নাতনি গ্রেটা ব্র্যাডম্যান।
ভিডিওর মাধ্যমে ‘ডোন্ট লেট দা সান গো ডাউন অন মি’ গেয়ে শোনান ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী এল্টন জন। একইরকম মিউজিক্যাল পারফরম্যান্স তুলে ধরেন এড শিরান, রবি উইলিয়ামস ও ক্রিস মার্টিনের মতো সংগীতশিল্পীরা।
ওয়ার্ন শুধু একজন ক্রিকেটারই ছিলেন না, ছিলেন যুগবদলের নায়ক। তার এক সময়ের প্রতিপক্ষ, সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইনের চোখে তো ওয়ার্নই সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার।
“এই খেলার ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। অবিশ্বাস্য ক্রিকেটার ও চরিত্র।”
“কিছু কারণে আমি তাকে স্লেজ করেছিলাম এবং কিছু একটা বলেছিলাম, ‘অধিনায়ক হিসেবে তোমার শেষ ম্যাচটা উপভোগ করো।” সেই স্লগ সুইপের পরের ডেলিভারিতে আমি স্টাম্পড হয়ে যাই।”
“তোমার সঙ্গে ক্রিকেট মাঠে থাকাটা সৌভাগ্যের বিষয় ছিল, আমার দেখা সেরা বোলার ছিলে তুমি।”
সাবেক অধিনায়ক বোর্ডার মনে করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ার্নের আগমন তার নিজের ক্যারিয়ারকে দীর্ঘায়িত করতে সাহায্য করেছিল।
অস্ট্রেলিয়ার সোনালী যুগে ওয়ার্নের সঙ্গে খেলা সাবেক পেসার ব্রেট লির মতে, ওয়ার্নের মতো আর কেউ আসবে না।
ওয়ার্নকে শেষ বিদায় জানাতে এমসিজিতে আরও উপস্থিত হয়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা, মাইকেল ক্লার্ক, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, স্টিভ ওয়াহ। ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও।
সীমিত ওভারের সিরিজ খেলতে বর্তমানে পাকিস্তানে আছে অস্ট্রেলিয়ার অনেক খেলোয়াড়। তারা হয়তো চোখ রেখেছিলেন টিভির পর্দায়।
ওয়ার্নের জন্ম, বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটে পথচলার শুরু, সবই মেলবোর্নে। ক্যারিয়ারের একমাত্র হ্যাটট্রিক করেছিলেন এমসিজিতেই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৯৪-৯৫ অ্যাশেজে। ২০০৬ সালে বক্সিং ডে টেস্টে এখানেই ক্যারিয়ারের ৭০০তম উইকেটটি নেন তিনি।
“তোমার স্বর্গে যাওয়ার ঠিক ২৬ দিন হয়ে গেল এবং বিশ্বের যেকোনো কিছুর চেয়ে তোমাকে আমি বেশি মিস করছি।”
"আরও একবার তোমার আলিঙ্গন পেতে এবং আমাকে নিয়ে তুমি কতটা গর্বিত ও আমাকে কতটা ভালোবাসো সেটা আরেকবার তোমার কণ্ঠে শোনার জন্য যেকোনো কিছু করতে পারি। আমি জানি তুমি চিরকাল আমাকে দেখবে এবং সারাক্ষণ আমার পাশে থাকবে।”
“শেন নিজের সম্পর্কে বলত, ‘আমি ধূমপান করতাম, পান করতাম আর একটু ক্রিকেট খেলতাম।’
“তোমার মা ও আমি তোমাকে ছাড়া জীবন কল্পনা করতে পারি না। (ইশ্বর) তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে গেছে এবং আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে।”
এমসিজির দা গ্রেট সাউদার্ন স্ট্যান্ডের নাম বদলে আনুষ্ঠানিকভাবে শেন ওয়ার্ন স্ট্যান্ড হিসেবে উন্মোচন করার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিদায়ী অনুষ্ঠান।