একবার, দুইবার নয়, তিন-তিনবার নেওয়া হয়েছে বিপ টেস্ট। একবারও উতরাতে পারেননি সোহাগ গাজী, ধীমান ঘোষ ও ফরহাদ হোসেন। হতাশ নির্বাচক হাবিবুল বাশার বুঝে ফেলেছেন, আর হবে না। তিন জনই ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ ও নিয়মিত পারফরমার। শেষ পর্যন্ত বিশেষ বিবেচনায় ছাড় দেওয়া হয়েছে তাদেরকে। তবে হাবিবুল তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, এবারই শেষ। পরের মৌসুমে ফিটনেসের উন্নতি না হলে তাদের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারও থমকে যাবে।
Published : 15 Oct 2019, 06:45 PM
প্রথম দুই দফায় ব্যর্থ ক্রিকেটারদের আরেক দফা বিপ টেস্ট নেওয়া হয় সোমবার। মৌসুম শুরুর আগে ন্যূনতম পাশের স্কোর ১১ ধরা হলেও পরে সিনিয়র ক্রিকেটার ও পারফরমারদের জন্য সেটি কমিয়ে করা হয় ১০। ১০৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা নাদিফ চৌধুরি ১০.৩ স্কোর করে উতরে গেছেন। তবে এবারও পারেননি সোহাগ, ধীমান ও ফরহাদ।
বিপ টেস্টে পাশ না করায় জাতীয় লিগের প্রথম রাউন্ডে বিবেচনার বাইরে ছিলেন তারা সবাই। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিবেচনায় থাকবেন এই চার জন। তাদের খেলার ছাড়পত্র দিয়েছেন নির্বাচকেরা।
“আমি আসলে ভীষণ হতাশ। ওদেরকে এতবার বলেছি, বারবার বলেছি। তারপরও পারছে না। আগের চেয়ে উন্নতি করেছে। কিন্তু যথেষ্ট নয় তা। কী আর করব! খুব সহজেই ওদেরকে বাইরে রাখা যায়। প্রথম রাউন্ডে তো পারেনি খেলতে। তারপরও যেহেতু ওরা ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করে আসছে, অনেক বছর ধরে খেলছে, সব বিবেচনায় নিয়ে এবারের মতো ছাড় দেওয়া হয়েছে।”
“যে ক্রিকেটাররা অনেক কষ্ট করে, পাশ করে খেলছে, তাদের প্রতি হয়তো ঠিক হলো না ওদেরকে এভাবে ছাড় দেওয়ায়। তবু বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে এবারই শেষ। আশা করি, ওরা এবার বুঝতে পেরেছে যে ফিটনেস নিয়ে আমরা কতটা কঠোর। পরেরবার উন্নতি করতে না পারলে ওদের ক্যারিয়ার আর এগোবে না নিশ্চিত।”
সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বেশ ধারাবাহিক। সবশেষ মৌসুমে ৭ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়েছেন, ব্যাট হাতে ছিল একটি সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে ৮৬ ম্যাচে ৩২৩ উইকেট নিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই অফ স্পিনার, ৮ সেঞ্চুরিতে রান সাড়ে ৩ হাজারের বেশি।
৩১ বছর বয়সী ধীমানের সবশেষ মৌসুম ছিল গড়পড়তা। ১১ ম্যাচে ৫ ফিফটিতে ৪১৯ রান করেছিলেন ৩০ ছুঁইছুঁই গড়ে। তবে আগের কয়েক মৌসুমে এই কিপার-ব্যাটসম্যান পারফর্ম করেছেন নিয়মিত। ক্যারিয়ারে ১২৮ ম্যাচে রান সাড়ে ৬ হাজারের বেশি। কিপার হিসেবে ডিসমিসাল তিনশর বেশি।
ফরহাদ গত মৌসুমেও ১২ ম্যাচে প্রায় ৪৯ গড়ে করেন ৭৩৩ রান। ৩২ বছর বয়সী অলরাউন্ডার ম্যাচ খেলেছেন ১৩৮টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৮ হাজার রানের পাশাপাশি দেড়শর বেশি উইকেট আছে-বাংলাদেশের এমন দুই অলরাউন্ডারের একজন তিনি, আরেকজন অলক কাপালী।
তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে তাই প্রশ্ন ছিল না। প্রশ্ন ফিটনেস নিয়ে। ফরহাদ ও সোহাগ মুটিয়ে গেছেন বেশ, এই সময়ের পেশাদার ক্রিকেটে যা বেশ বেমানান। বিপ টেস্টের ফিটনেসের বাইরেও অবশ্য আলাদা করে ম্যাচ ফিটনেস বা ব্যাটিং-বোলিং ফিটেনসের ব্যাপার আছে ক্রিকেটে। ফরহাদ-সোহাগরা হয়তো সেখানে খারাপ করবেন না। কিন্তু নির্বাচকদের চাওয়া, দেশের ক্রিকেটে ফিটনেসের একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
“ফিটনেসের একটি মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড তো থাকা উচিত! ওদেরকে বুঝতে হবে যে ক্রিকেট খেলাটা এখন অনেক কঠিন। অন্য সব দেশের চেয়ে আগেই আমরা পিছিয়ে থাকি এখানে। তাই ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই সেটির চর্চা করতে চাই আমরা।”
“এবার হয়তো ন্যূনতম স্কোর পরে কমানো হয়েছে বা অনেককে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এরপর আর দেওয়া হবে না। দেওয়া উচিত না। আমি মনে করি, একটি ভালো সংস্কৃতি আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি যেটি ক্রিকেটারদের ভালোর জন্য, দেশের ক্রিকেটের ভালোর জন্য। ক্রিকেটারদের এই উপলব্ধি যত দ্রুত আসে, ততই ভালো।”
এবারের জাতীয় লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু হবে বৃহস্পতিবার থেকে।