বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানালেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নাকি তুমুল প্রশংসিত হয়েছে আইসিসিতে। পাল্টা প্রশ্ন ছুটে গেল। পারফরম্যান্স প্রশংসিত হলে কোচ স্টিভ রোডসের বিদায়-ঘণ্টা কেন বাজল? নাজমুল হাসান তুলে ধরলেন বেশ কিছু কারণ। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, রোডসের কোচিংয়ের ধরন বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।
Published : 24 Jul 2019, 08:48 PM
রোডসের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছিল আগামী বছরের অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ চলাকালে যদিও তাকে দায়িত্বে না রাখা নিয়ে গুঞ্জন উঠেছিল বেশ, তবে বিসিবির সবুজ সঙ্কেত পেয়েই দলের সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন এই ইংলিশ কোচ। কিন্তু ফেরার পর আচমকাই জানানো হয়, পারস্পরিক সমঝোতায় শেষ হয়ে গেছে রোডসের দায়িত্ব।
বিশ্বকাপে দল প্রশংসিত হলে কোচের সঙ্গে কেন পারস্পরিক সমঝোতায় যেতে হলো, সেই প্রশ্নে নাজমুল হাসান ইঙ্গিত দিলেন রোডসের কোচিংয়ের ধরনের দিকে।
“উনি একজন ভালো মানুষ। একেক জনের একেক রকম কোচিং টেকনিক থাকে, স্টাইল থাকে। একেক জনের একেক রকম চিন্তাধারা থাকে। আমাদেরও একটা চিন্তাধারা আছে। কোনো কোনো কোচ মনে করে এটা একটা খেলা, এটা নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার কি আছে? আবার কোনো কোচ আমাদের সঙ্গে ছিল, তারা মনে করত জিততেই হবে। যে করেই হোক, জিততে হবে। এমনও কোচ আছে হারা জিতা নিয়ে চিন্তা করার কি আছে। জিততেই হবে এটা নিয়ে চিন্তা নেই। এটার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে।”
ইঙ্গিতগুলোই এরপর আস্তে আস্তে প্রসারিত হলো সরাসরি অভিযোগ-আপত্তিতে। বোর্ড সভাপতি জানালেন, রোডসের কোন ব্যাপারগুলো পছন্দ করেনি বিসিবি।
“বিশ্বকাপের আগে অনুশীলন করার জন্য আয়োজন করলাম আমরা (লেস্টারশায়ারে)। সেখানে আমাদের অনুশীলন হলো না। ঐচ্ছিক করে দেয়াতে কেউ আসল না। এটা তো কালচারাল মিসম্যাচ। ও (রোডস) মনে করেছে, প্রত্যেক প্লেয়ার নিজ ইচ্ছাতেই অনুশীলন করবে। কিন্তু এটা তো আমাদের সঙ্গে মিলে না। ঐচ্ছিক, তাই কেউ আসনি। তাহলে তো লাভ হলো না, আমরা এতো টাকা খরচ করে আয়োজন করেছিলাম!”
“ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার আগে পাঁচদিন ছুটি দেয়া...বিশ্রাম দিতে পারে। দুটি আলাদা জিনিস। সবাই চলে গেছে বাইরে। ঘুরছে-ফিরছে। মনোযোগ তো এখানেই ভেঙে যায়। এই জিনিসগুলো, ওদের সংস্কৃতিতে হয়তো এগুলো ঠিক আছে। সমস্যা নেই। আমরা মনে করি, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে এগুলো খাপ খায় না। এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা সমঝোতায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা তাকে বাদ দেইনি। দুই পক্ষ মিলে আলোচনা করেছি আমরা আলাদা হতে পারি।”
বার্মিংহামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সাত দিনের বিরতিতে ক্রিকেটারদের পাঁচ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছিল বটে। তবে কোচ ছাড়াও সেখানে ছিলেন ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ, যিনি একজন বোর্ড পরিচালকও। আরেক বোর্ড পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান আকরাম খানও ছিলেন সেখানে। ছিলেন আরও কয়েকজন বিসিবি কর্তা। ছুটির সিদ্ধান্ত কোচের একার ছিল না। দায় কেন তাকে একা নিতে হলো?
নাজমুল হাসান আগের কথাগুলিই আবার বললেন একটু ঘুরিয়ে। সবচেয়ে বড় আপত্তি, তাকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ায়!
“রেস্ট তো দিতেই পারে। রেস্ট দেয়া এবং ছুটি দেয়া দুটি দুই জিনিস। আপনি বিশ্বকাপ খেলতে গেছেন, দুটি খেলা বাকি ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে। তখন আপনি যদি শোনেন আপনার প্লেয়াররা ইউরোপে বেড়াতে যাচ্ছে, তাহলে আপনার কেমন লাগবে! এটা হতে পারে না। কে কী বলছে, এতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি মনে করি, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আপনি যদি রেস্ট দিতে চান, দুই-তিনদিন দিলে ঠিক ছিল। চোখে-মুখে ওদের শুধু খেলাটাই থাকা উচিত ছিল। এই যে মনোযোগের ঘাটতি, এরকম পরিণত নয় আমাদের দল যে এগুলো দিলেও সব বাদ দিয়ে অনুশীলন করবে।”
“সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার, আজকে সবার সামনেই বলে রাখি, আমি জানিই না। এর আগে এমন হয়নি যে আমি জানিই না দল ছুটিতে। এখানে সবারই ঘাটতি আছে। এককভাবে কাউকে দোষ দেয়া যাবে না। তবে আমার সম্পূর্ণ অজানা ছিল।”
তাকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক দিন থেকেই চলে আসছে বলে দাবি করলেন নাজমুল হাসান। বুঝিয়ে দিলেন, এসব ব্যাপার বিপক্ষে গেছে রোডসের।
“অনেকদিন ধরেই হচ্ছে এই জিনিসটা। আজকে এই প্রথম না। এখন যদি প্রশ্ন করি সমস্যাটা হচ্ছে কোথায়? আমাদের আকরাম ছিল, সুজন ছিল, ওরাও তো জানে না। ছুটি হয়ে যাওয়ার পরে জানে। তাহলে তো লাভ হচ্ছে না। ব্যাপারটি হলো তখন জেনে লাভ হচ্ছে কি?”
“দল নির্বাচন বলবেন, (পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে) আমি আগের দিন সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খেলোয়াড়দের সাথে। ওখানে একটা পরিকল্পনা হয়েছে। মুশফিকের হাতে স্লিং লাগানো। মুশফিক স্কোয়াডে ছিল না। মাশরাফি আগের দিন থেকেই নেই। অনুশীলন করেনি, প্ল্যানিং স্ট্র্যাটেজিতেও ছিল না। মাশরাফির খেলার কথা ছিল না। আমরা স্কোয়াড ঠিক করলাম। সব ঠিক হলো, কোচ ছিল সেখানে, সবাই ছিল। পরদিন মাঠে দেখি অন্য দল নেমেছে।”
“এগুলো তো এর আগে কখনও হয়নি। তাই এখানে অবশ্যই সমস্যা আছে। এটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। আমরা মনে করেছি এটা দিয়ে হবে না। আমরা বলছি না, সে খারাপ। সে অনেক ভালো। আমরা যেভাবে চিন্তা করি, যেভাবে চলছে, এটা পুরোপুরি আলাদা।”
বিসিবি সভাপতির দাবি, ক্রিকেটাররাও কোচকে নিয়ে আপত্তির কথা নানা সময়ে বলেছেন বিসিবি কর্তাদের।
“খেলোয়াড়রা আমাদের কাছে এসে নিয়মিত... সেই নিউ জিল্যান্ডে ক্রিকেটাররা আমার কাছে এসেছে, বিশ্বকাপের সময় এসে বলেছে, যে কোচের সঙ্গে তাদেরও কোনও কথা হয়নি। শুধু টিম মিটিংয়ে খেলার আগের দিন সে এসে উপস্থিত হয়। কোনও স্ট্র্যাটেজি নিয়েও আলাপ হয় না, বা কিছুই না। সে শুধু ওখানে থাকে। আমাকে ক্রিকেটাররা এটা বলেছে।”
“আমি ওদের থেকে শুনেই আপনাদের বলছি। আমার এরকম সরাসরি কোনও যোগাযোগ হয়নি। আমি যেটা দেখেছি, আমাদের মনে হয়েছে, সে মেলেনা। আর সে যেহেতু চলে গিয়েছে এটা নিয়ে কথা বলার কোন মানে হয়না।”