এই তো এক ম্যাচ আগের কথা। শেষ ওভারে টানা চারটি বল ব্যাটে না লাগাতে পেরে ফরহাদ রেজা ছিলেন খলনায়ক। সপ্তাহ না ঘুরতেই সেই দুঃস্বপ্ন মাটি চাপা দিয়ে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার হয়ে উঠলেন দলের দারুণ জয়ে শেষের নায়ক। বিশাল রান তাড়ায় রংপুরকে যে পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন রাইলি রুশো, এবি ডি ভিলিয়ার্সরা, সেই পথ ধরেই ফরহাদ দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের ঠিকানায়।
Published : 19 Jan 2019, 02:25 PM
সিলেট পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বড় স্কোর গড়েও হেরেছে সিলেট সিক্সার্স। বিপিএলের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে সিলেটকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স।
দুঃসময়ের বলয় ছিঁড়ে এ দিন ৫১ বলে ৮৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন সাব্বির। শেষ দিকে ঝড় তোলেন নিকোলাস পুরান। সিলেট ২০ ওভারে তোলে ১৯৪ রান। তখনও পর্যন্ত যা এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ দলীয় রান।
পরের ইনিংসেই সেই রান পেরিয়ে যায় রংপুর। সিলেটের বাজে ফিল্ডিং আর নিজেদের দারুণ রান তাড়া মিলিয়ে রংপুর জিতে যায় তিন বল বাকি রেখে।
শেষ দুই ওভারে রংপুরের প্রয়োজন ছিল ২৪। প্রায়শ্চিত্ত করার মঞ্চ পেয়ে জ্বলে উঠলেন ফরহাদ। বাঁহাতি পেসার মেহেদি হাসান রানার বলে মাশরাফির বাউন্ডারিতে ১৯তম ওভারের শুরু, পরে ফরহাদের চার ও ছক্কায় ম্যাচ চলে এলো নাগালে। শেষ ওভারে ফরহাদের আরেকটি বাউন্ডারিতে জয়। ৬ বলে অপরাজিত ১৮!
বিপিএলের ছয় আসরে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। ২০১৩ বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের ১৯৭ রান তাড়ায় সিলেট রয়্যালসের জয় এখনও রান তাড়ার রেকর্ড।
রংপুর জিতল টানা তিন ম্যাচে হারার পর। ৭ ম্যাচে তৃতীয় জয়ে জিইয়ে রাখল শেষ চারের আশা। সমান ম্যাচে পাঁচ হারে সিলেট পড়ে রইল পয়েন্ট টেবিলের তলানির দিকে।
বড় স্কোর গড়েও হারের জন্য সবচেয়ে বড় দায় নিজেদেরই দিতে পারে সিলেট। রাইলি রুশোকে ২০ রানের মধ্যেই আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করেছে তারা চারবার! ১ ও ১২ রানে ক্যাচ ছেড়েছেন কিপার জাকের আলি। ১৬ রানে রুশো হতে পারতেন রান আউট। ২০ রানে সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন পুরান। সেই রুশো ৩৫ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলে হয়েছেন ম্যাচের সেরা।
বড় রান তাড়ায় রংপুর ক্রিস গেইলকে হারায় শূন্য রানেই। কিন্তু অ্যালেক্স হেলস ও রুশোর ব্যাটে রংপুর ধরে রাখে রানের গতি।
আগ্রাসনের শুরু ছিল হেলসের ব্যাটে। একের পর এক জীবন পেয়ে রুশোর ব্যাটও হয়ে ওঠে ক্রমেই উত্তাল।
ডি ভিলিয়ার্স ব্যাটিংয়ে নেমে ধরে রাখেন মোমেন্টাম। বিপিএলে অভিষেক হলেও কোনো অস্বস্তি ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেটের ব্যাটে। রুশোর সঙ্গে ডি ভিলিয়ার্সের জুটিতে আসে ৩৮ বলে ৬৮।
এই দুজনের ব্যাটে ম্যাচের ভাগ্য যখন রংপুরের দিকে হেলে, মোড় বদলে দেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম ২ ওভারে ২৫ রান দিলেও জুটি ভাঙতে তাকে বোলিংয়ে ফেরান ডেভিড ওয়ার্নার। ওভারের প্রথম বলেই তাসকিন ফিরিয়ে দেন রুশোকে, শেষ বলে বোল্ড ডি ভিলিয়ার্স!
অফ স্টাম্পের বাইরে ওয়াইড বল তাড়া করতে গিয়ে রুশো ক্যাচ দেন কিপারের হাতে। দুটি করে চার ও ছক্কায় ২১ বলে ৩৪ করে ডি ভিলিয়ার্স আউট হন ক্রস ব্যাটে খেলে।
মোহাম্মদ মিঠুন ও নাহিদুল ইসলামের ব্যাটে রংপুর ধরে রাখে আশা। কিন্তু এই দুজনকেও একই ওভারে ফিরিয়ে দেন তাসকিন।
কিন্তু তার চার ওভার শেষ হতেই আর বাধা হতে পারেনি কেউ। শেষের ভাগ্য গড়ে দিয়েছেন ফরহাদ।
অথচ এই ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন সাব্বির। আগের ৬ ইনিংস মিলিয়ে করেছিলেন ৫৬ রান, এ দিন ফিরলেন প্রত্যাশিত বিধ্বংসী চেহারায়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেট দ্বিতীয় ওভারে হারায় লিটন দাসকে। কবজির মোচড়ে দারুণ শটে মাশরাফিকে ছক্কা মেরেছিলেন লিটন। পরের বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় ক্যাচ দেন স্লোয়ারে।
আফিফ হোসেন তিনে নেমে নাজমুল ইসলামকে অপুকে স্লগ করে ছক্কায় শুরু করেন। এই ওভারেই আফিফকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন রংপুরের কিপার মোহাম্মদ মিঠুন। পরের ওভারের মাশরাফির বলে ব্যাটের কানায় লেগে চার পান আফিফ। তার তুলে মারা আরেকটি শটে ক্যাচ নিতে গিয়ে চার বানিয়ে দেন ফরহাদ রেজা।
সাব্বির ততক্ষণে ডানা মেলে দিয়েছেন। তার ব্যাট থেকে বল উড়ছে মাঠের নানা প্রান্তে। ফরহাদ, সোহাগ, নাহিদুল, গেইল, সবাইকে দিয়েছেন ছক্কার স্বাদ। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে পেরিয়ে যান পঞ্চাশ ছক্কা। নিজের ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৪ বলে।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে মাশরাফি ফিরিয়ে দেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। দেশে ফিরে যাওয়ার আগে শেষটা রাঙিয়ে যেতে পারেননি। সিলেট অধিনায়ক করেছেন ২১ বলে ১৯।
সিলেটকে অবশ্য ভুগতে হয়নি এজন্য। পুরান আসার পর বরং আরও গতিময় হয় ইনিংস। জুটির পঞ্চাশ আসে কেবল ২৭ বলেই।
৫ চার ও ৬ ছক্কায় ৮৫ করে সাব্বির আউট হন ইনিংসের শেষ ওভারে। শেষ দুই বলে ব্যাট ছোঁয়াতে না পারায় ফিফটি হয়নি পুরানের। ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ২৭ বলে ৪৭ রানে। শেষ ৪ ওভারেই সিলেট তোলে ৬১ রান।
শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হলো না সেই রানও। সিলেটের সিলেট পর্ব শেষ হলো হতাশায়। রংপুর পেল নতুন আশার রসদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট সিক্সার্স: ২০ ওভারে ১৯৪/৪ (লিটন ১১, সাব্বির ৮৫, আফিফ ১৯, ওয়ার্নার ১৯, পুরান ৪৭*, জাকের ৫*; নাজমুল ২-০-১৮-০, মাশরাফি ৪-০-৩১-২, শফিউল ৪-০-৪৩-১ ফরহাদ ৩-০-৩৫-০, নাহিদুল ২-০-১৬-০, গাজি ২-০-১৬-০, গেইল ৩-০-৩৪-০)।
রংপুর রাইডার্স: ১৯.৩ ওভারে ১৯৫/৬ (গেইল ০, হেলস ৩৩, রুশো ৬১, ডি ভিলিয়ার্স ৩৪, মিঠুন ১৪, নাহিদুল ১৯, মাশরাফি ৫*, ফরহাদ ১৮*; ইরফান ৪-০-৩৪-১, তাসকিন ৪-০-৪২-৪, লামিচানে ৪-০-২১-০, রানা ৪-০-৫৭-০, অলক ৩.৪-০-৩৪-১)।
ফল: রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রাইলি রুশো