ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ৯১ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ পেল টানা তৃতীয় জয়। তিন ম্যাচেই জয় বোনাস পয়েন্টসহ!
মিরপুরে মঙ্গলবার বাংলাদেশের ২১৬ রান তাড়ায় জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে যায় ১২৫ রানেই।
এই জয় নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক হয়ে গেলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। হাবিবুল বাশারের ২৯ জয় ছাড়িয়ে অধিনায়ক মাশরাফির জয় ৩০টি।
টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচেই ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। চার ম্যাচে একটি মাত্র জয়ে জিম্বাবুয়েকে থাকতে হচ্ছে অপেক্ষায়। বৃহস্পতিবার প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে শ্রীলঙ্কা বড় ব্যবধানে হারলে রান রেটের হিসেবে ফাইনালে ওঠার সুযোগ থাকবে জিম্বাবুয়ের।
ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় আত্মতুষ্টি পেয়ে বসার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচ ছিল সেটিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ। কিন্তু ব্যাটিংয়ে অন্তত দায়টা নিতেই হবে। উইকেট খুব সহজ ছিল না। কিন্তু স্কোর বড় না হওয়ার বড় কারণ ব্যাটসম্যানদের উইকেট ছুঁড়ে আসাই।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে এই উইকেটেই টস জিতে জিম্বাবুয়েকে ১৭০ রানে বেঁধে ফেলেছিল বাংলাদেশ। এদিন টস জিতে মাশরাফি বিন মুর্তজা নিলেন ব্যাটিং। বললেন “উইকেট মনে হচ্ছে ভালো।” কিন্তু দেখা গেল সেদিনের মতোই উইকেট মন্থর। বাউন্সও একটু অসমান।
তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশ হারায় এনামুল হককে। তবে দ্বিতীয় উইকেটে যথারীতি দলকে এগিয়ে নেন সাকিব ও তামিম। সাকিবের শুরুটা একটু নড়বড়ে ছিল। তবে পরে সামলে নিয়েছেন। উইকেট বুঝে দুজনই বেছে নেন সাবধানী ব্যাটিংয়ের পথ। রান রেট একটু কম থাকলেও গড়ে ওঠে দারুণ জুটি।
প্রথম ম্যাচে দুজনের জুটি ছিল ৭৮, দ্বিতীয় ম্যাচে ৯৯। এগিয়ে চলার ধারাবাহিকতায় এবার জুটি ১০৬ রানের।
টানা তৃতীয় পঞ্চাশের পথে তামিম অর্জন করেন দারুণ দুটি মাইলফলক। গড়েছেন এক ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি রানের বিশ্বরেকর্ড। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ছুঁয়েছেন ৬ হাজার রান।
সাকিবও করে ফেলেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। তবে দুজনেরই শেষটা ছিল হতাশাজনক। প্রায় একইভাবে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন দুজন। সিকান্দার রাজাকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ৮০ বলে ৫১ রান করে স্টাম্পড সাকিব।
মুশফিককে ফিরিয়ে শুরু। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক এরপর দারুণ গুগলিতে বিভ্রান্ত করেন মাহমুদউল্লাহকে। সাকিবের মতোই বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ৭৬ রানে উইকেট বিলিয়ে আসেন তামিম।
বাংলাদেশ চাপে পড়েছে বুঝে দলের মূল স্ট্রাইক বোলার কাইল জার্ভিসকে আক্রমণে ফেরান ক্রিমার। এটিও কাজে লাগে দারুণভাবে। জার্ভিসের বলে ক্রেইগ আরভিনের দারুণ ক্যাচে ফেরেন সাব্বির। নাসির হোসেনের সামনে সুযোগ ছিল এদিন কিছু করে দেখানোর। কিন্তু আউট হয়েছেন জার্ভিসের বলে দৃষ্টিকটু শটে।
২ উইকেটে ১৪৭ থেকে ৮ ওভারের মধ্যে দল হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১৭০। সেখান থেকে দলকে দুইশ ছাড়িয়ে নিয়ে যান সানজামুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান। নয়ে নেমে সানজামুল করেছেন ২৪ বলে ১৯ রান। ২২ বলে অপরাজিত ১৮ মুস্তাফিজ। শেষ ওভারে রুবেলের ব্যাটে আসে দারুণ ছক্কা।
শেষের সেই মোমেন্টাম সঙ্গে ছিল। পাশাপাশি জয়ের তাড়নাটাও হয়ত দারুণভাবে জেগে উঠল ব্যাটিংয়ে ঘা খেয়ে। বোলিংয়ে তাই শুরু থেকেই দ্যুতিময় বাংলাদেশ।
দারুণ ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজা চেষ্টা করেছেন লড়াইয়ের। কিন্তু লম্বা সময় সঙ্গী পাননি কাউকে। মাঝের ওভারগুলোতে দারুণ বোলিংয়ে ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রানে ২ উইকেট নেন সানজামুল ইসলাম।
মুস্তাফিজের জন্য উইকেট ছিল আদর্শ। তাকে জিম্বাবুয়ে খেলেছে ভীষণ সাবধানে। প্রথম তিন ওভারই নিয়েছেন মেডেন। শেষ পর্যন্ত তিনিও ঝুলিতে ভরেছেন দুটি উইকেট। পরের স্পেলে ফিরে আরেকটি উইকেট নিয়েছেন সাকিব।
দলের নিশ্চয়ই সেটা নিয়ে ভাবনা নেই। লাগাম যার হাতেই থাকুক, জয়ের রথ তো ছুটছে দূরন্ত গতিতে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২১৬/৯ (তামিম ৭৬, এনামুল ১, সাকিব ৫১, মুশফিক ১৮, মাহমুদউল্লাহ ২, সাব্বির ৬, নাসির ২, মাশরাফি ০, সানজামুল ১৯, মুস্তাফিজ ১৮*, রুবেল ৮*; জার্ভিস ৩/৪২, চাতারা ১/৩৩, মুজারাবানি ০/৩৬, রাজা ১/৩৯, ক্রিমার ৪/৩২, ওয়ালার ০/৩২)।
জিম্বাবুয়ে: ৩৬.৩ ওভারে ১২৫ (মাসাকাদজা ৫, মিরে ৭, আরভিন ১১, টেইলর ০, রাজা ৩৯, মুর ১৪, ওয়ালার ০, ক্রিমার ২৩, জার্ভিস ১০, চাতারা ৮, মুজারাবানি ০*; সাকিব ৩/৩৪, মাশরাফি ২/২৯, সানজামুল ২/২৮, মুস্তাফিজ ১/১৬, রুবেল ১/১৮)।
ফল: বাংলাদেশ ৯১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল