ক্রিকেট ছাড়া নিঃশ্বাস নেওয়াই কঠিন: খালেদ মাহমুদ

এক সময় ছিলেন বাংলাদেশ দলের অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক। সীমিত সামর্থ্য নিয়েও চেষ্টা করেছেন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে। পরিচয় ছিল লড়াকু ক্রিকেটার হিসেবে। গত কয়েক বছরে সেই খালেদ মাহমুদের নাম বেশিরভাগ সময়ই এসেছে নানা বিতর্কে। এখন তিনি জাতীয় দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, যেটি নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। সেসব প্রশ্নে আবেগপ্রবণ মাহমুদ শোনালেন ক্রিকেটের প্রতি তার নিবেদনের কথা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2018, 02:29 PM
Updated : 14 Jan 2018, 04:58 PM

খালেদ মাহমুদকে নিয়ে মূল বিতর্ক তার নানা দায়িত্বের পারস্পরিক সংঘাত নিয়ে। তিনি একজন বোর্ড পরিচালক। আবার ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন দলের কোচ। কোচিং করান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল, বিপিএল দল, প্রথম বিভাগের দলকে। রাজশাহীর একটি একাডেমির প্রধান কোচও তিনি।

বোর্ড পরিচালক হয়েও ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি তিনি। আবার বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান। বেশ কিছুদিন ছিলেন জাতীয় দলের ম্যানেজার। এখন তিনিই আবার বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। বেশ কিছু পদই পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। 

বোর্ড পরিচালক হয়ে জাতীয় দলের ম্যানেজার হওয়া, আবার ঢাকা লিগ ও বিপিএলে কোচিং করানো, এই দুটি নিয়েই সমালোচনা ছিল বেশি। এখন একদিক থেকে ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকেও। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পদে মোড়কে আসলে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচই। একই সঙ্গে বোর্ড ডিরেক্টর ও জাতীয় দলের কোচ, ক্রিকেট ইতিহাসে আর আছে কিনা সন্দেহ।

ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন নিজের এই দুই পদের ব্যাখ্যা দিলেন খালেদ মাহমুদ। সেখানেই বললেন, থাকতে চান বিতর্ক থেকে দূরে।

“আমি বোর্ড রুমে ঢুকি, তখন আমি বোর্ড ডিরেক্টর। আমাকে অন্য যে দায়িত্ব দেয়া হয়, আমি তা চেষ্টা করি ভালোভাবে করতে। পারি বা না পারি, সফল হই বা না হই, সেটা অন্য ব্যাপার। আমি কোনো বিতর্কে যেতে চাই না। আমি মনে করি কোচিং আমার পেশা। আমি এটা উপভোগ করি।”

“২০০৬ সালে খেলা ছাড়ার চার মাস পর থেকেই আমি কোচিং শুরু করি। অনূর্ধ্ব-১৩ পর্যায় থেকে সব পর্যায়েই আমি কোচিং করিয়েছি। সুতরাং আমার কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা নেই, ব্যাপারটা তা নয়। আমি ভালো কোচ নাকি খারাপ, তা মানুষ বলবে। কিন্তু আমি কোচিং করানোটাই আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।”

কোচ হিসেবে তার সবচেয়ে বড় শক্তি, দলকে অনুপ্রাণিত করতে পারা। অধিনায়ক হিসেবেও যেটি ছিল তার সবচেয়ে বড় গুণ। ২০০৩ সালে যখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন, তখন দেশের ক্রিকেটে ছিল ক্রান্তিকাল। বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্স ছিল বিব্রতকর। শৃঙ্খলা বলতে কিছু ছিল না। দল ছিল নানা ভাগে বিভক্ত।

সেই দলকে একাট্টা করার দায়িত্ব ছিল মাহমুদের। নিজের পারফরম্যান্স খুব ভালো না হলেও দলকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে সফল ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদ। স্থিতিশীল করেছিলেন জাতীয় দলকে।

এবার সেই সময়ের মত জরুরি অবস্থা ছিল না দেশের ক্রিকেটে। তবে কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের হঠাৎ বিদায়ে খানিকটা বিপাকে ছিল দল। বোর্ড আবার বেছে নিয়েছে তাকেই।

খালেদ মাহমুদ ফিরে তাকালেন অতীতের আয়নায়। অধিনায়ক হিসেবে সেই সময়ের দায়িত্বের তুলনায় এখনকার কাজটিকে সহজই মনে হচ্ছে তার।

“আমার জন্য আসলে এটা একটা সুযোগ। ২০০৩ সালে আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, ওই সময়টা খুব কঠিন ছিল। দলটা কয়েকটা দ্বীপে পরিণত হয়েছিল। তখন দলটাকে এক করার একটা কাজ ছিলো আমার। দায়িত্বটা অনেক বেশি ছিলো আমার। সে তুলনায় এখন কাজটা অনেক সহজ। কারণ এখন আমি অভিজ্ঞ।”

সেই অভিজ্ঞতার ঝুলিতে আছে বিপিএলে কাজ করার অভিজ্ঞতা। আছে ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার সম্পর্কের গভীরতা। মাহমুদ বিশ্বাস পাচ্ছেন সেসব থেকেই।

“যদিও কোচ হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমার অভিজ্ঞতা কম। কিন্তু গত তিন-চারটা বিপিএলে কাজ করে চাপ নেয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি মনে করি, জাতীয় দলের চেয়ে বিপিএলে চাপ বেশি থাকে। জাতীয় দলে পরীক্ষিত ক্রিকেটার আছে। যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাপটের সাথে খেলছে। অনেকের সঙ্গে ওরা ছোট থাকতেই কাজ করেছি। সুতরাং এই কাজটা আমার জন্য সহজ।”

“আমার কাছে তাই এটাকে চাপ মনে হয়নি। একটা সুযোগ আমার জন্য। যাদের সঙ্গে আমি কাজ করছি, এরা আমার চেনা। তারা সবাই খুবই সহায়তাপরায়ণ। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও আমি সাড়ে তিন বছর কাটিয়েছি। প্লেয়ারদের মধ্যে… মাশরাফি তো বলতে গেলে আমার টিমমেটই। সুতরাং আমার জন্য এদের সঙ্গে করা সহজই।”

প্রস্তুতি ক্যাম্পে সিনিয়রদের চেয়ে তরুণদের দিকেই টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের মনোযোগ ছিল বেশি। শোনালেন সেটির কারণও।

“আমি জানি না, আসলে কতোটা কী করতে পেরেছি। বেশি কিছু অবশ্য করারও ছিল না। সিনিয়রদের সাথে বেশি কাজ করিনি। কারণ তারা তাদের কাজটা খুব ভালো জানে। কিন্তু তরুণ যারা আছে, তারা যদি পারফর্ম করা শুরু করে, আমি মনে করি, আমাদের দলটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।”

তার অনেকগুলো দায়িত্বে থাকা নিয়ে নানা বিতর্কের প্রসঙ্গ বারবার উঠেছে সংবাদ সম্মেলনে। উঠেছে কখনোই খুব দর্শকপ্রিয় হতে না পারার কথা। মাহমুদ এক পর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে বললেন ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসার কথা।

“আমি যখন ১৯৮৩ বা ৮৪ সালের দিকে ক্যারিয়ার শুরু করি, তখন থেকে একটা দিনের জন্যও আমি ক্রিকেটের বাইরে থাকিনি। ক্রিকেটই আমার সব কিছু। ক্রিকেটই আমার জীবিকা। ক্রিকেট ছাড়া আসলে আমার জন্য নিঃশ্বাস নেয়াই কঠিন।”