এতগুলো দিন, এত বছরের অপেক্ষা। বছরের পর বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। মোশাররফ হোসেনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তবু ছিল দূরের বাতিঘর, দিন দিন যা সরে যাচ্ছিল আরও দূরে। হঠাৎ দেবদূত আবির্ভুত হলেন যেন ভেঙ্কটপতি রাজু। দৈববার্তা হয়ে এলো একটি ডাক!
Published : 29 Sep 2016, 02:06 PM
আফগানিস্তান সিরিজের শেষ ওয়ানডের দলে সুযোগ পেয়েছেন মোশাররফ। সাড়ে ৮ বছর পর আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার হাতছানি। বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ার এই নতুন মোড় নেওয়ার প্রেক্ষাপট ছিল দারুণ নাটকীয়।
সবশেষ ঘরোয়া মৌসুমে ব্যাটে-বলে পারফরম্যান্স ভালো ছিল মোশাররফের। তবে সেটা তো নিয়মিতই করে আসছেন মৌসুমের পর মৌসুম। জাতীয় দলের আশেপাশে আসার সুযোগ মেলে না। এবারও সুযোগ মেলেনি ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য ৩০ জনের প্রাথমিক দলে। হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের স্পিন স্কোয়াডে অবশ্য ছিলেন। সেটি শেষ করে সপরিবারে ঘুরতে গিয়েছিলেন ভারতে। যাওয়ার পর পরই পান খবর, ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে!
সেই ডাক পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু আরও কদিন আগে। এইচপির স্পিন ক্যাম্প পরিচালনা করেছিলেন সাবেক ভারতীয় স্পিনার রাজু। মোশাররফ সেখানেই নজর কাড়েন রাজুর। যাওয়ার আগে জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টকে মোশাররফের কথা আলাদা করে বলে যান সাবেক বাঁহাতি এই স্পিনার। এরপরই ডাক পড়ে মোশাররফের। জরুরি বার্তায় দ্রুতই ফিরে আসেন দেশে। গত ২৮ অগাস্ট যোগ দেন ক্যাম্পে।
ধারণা করা হচ্ছিলো, আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের দলেও রাখা হবে তাকে। তবে শেষ মুহূর্তে তার জায়গায় তাইজুলকে বেছে নেন নির্বাচকেরা। অবশেষে ডাক পড়ল শেষ ওয়ানডের আগে।
দলে আসার প্রক্রিয়াটা যেমন, গত শেষবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর তেমনি আরও অনেক কঠিন সময় পেরুতে হয়েছে মোশাররফকে। সেই ২০০৮ সালের মার্চে তিনটি ওয়ানডে খেলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। একটি মাত্র উইকেট পেয়েছিলেন শেষ ম্যাচে। ওই বছরই ‘বিদ্রোহী’ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) যোগ দেন ঢাকা ওয়ারিয়র্সের হয়ে। পথ হারায় ক্যারিয়ার।
আইসিএলে খেলার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরেন। পারফর্মও করেন। কিন্তু সুযোগ মিলছিল না। সবশেষ ২০১৩ সালের নিউ জিল্যান্ড সিরিজের ৩০ জনের প্রাথমিক দলে ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে বাদ পড়েন অস্বস্তিকর অভিযোগে!
বাংলাদেশ ক্রিকেট তখন টালমাটাল বিপিএল ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে। মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে নাম আসে মোশাররফ ও পেসার মাহবুবুল আলমের। স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন মোশাররফ। নিষিদ্ধ হন সাময়িকভাবে।
পরে অবশ্য মুক্তি পান অভিযোগ থেকে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে উঠে যায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরেন, পারফর্মও করেন। সবশেষ ঢাকা লিগে উইকেট নিয়েছেন ১২টি, রান করেছেন ৩৫০। সুযোগ তবু আসেনি। হঠাৎ ভাগ্য ঘুরিয়ে দিল রাজুর আগমণ।
যে বয়সে বাংলাদেশর বেশিরভাগ ক্রিকেটার অবসরে চলে যান, সেই সময়ই মোশাররফের ক্যারিয়ারের নতুন শুরু। এই শুরু কতটা বর্ণময় হবে, সেটা বলবে সময়। তবে আরও অনেক ক্রিকেটারের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে হয়ত মোশাররফের ফেরা!