বিকেএসপিতে প্রাইম দোলেশ্বরের সঙ্গে ম্যাচে আম্পায়ারদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ানোয় দুঃখ প্রকাশ করেছেন তামিম ইকবাল। তবে এর জন্য এক জনকে দায় না দিয়ে সমস্যার মূলে যেতে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট কর্তাদের অনুরোধ করেছেন আবাহনী অধিনায়ক।
Published : 13 Jun 2016, 10:27 PM
গণ্ডগোল ও নাটকীয়তার পর রোববার বিকেএসপিতে আবাহনী ও দোলেশ্বর ম্যাচ স্থগিত হয়ে যায়। ঘটনার সূত্রপাতে ভূমিকা ছিল তামিমের। ম্যাচটি হয়নি রিজার্ভ ডেতেও, ভাগ্য নির্ধারিত হবে বিসিবি সিদ্ধান্তে।
অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় নিজের দায়টুকু স্বীকার করেছেন তামিম। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সোমবার রাতে জানিয়েছেন তার অনুশোচনার কথা।
“অবশ্যই আমার এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত হয়নি। সাময়িক উত্তেজনায় হুট করে আবেগের বিস্ফোরণ হয়ে গিয়েছিল। জাতীয় দলের এক জন ক্রিকেটার হিসেবে, শিশু-কিশোর ও অনেক উঠতি ক্রিকেটারের আদর্শ হিসেবে এ রকম করা আমার উচিত হয়নি।”
“ম্যাচের সেটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। ব্যাটসম্যান ডাউন দা উইকেট খেলেছিল, পরিষ্কার স্টাম্পড ছিল। আমাদের রান বেশি ছিল না, ১৯১। ওই আউটটা হলে ওদের ৩ উইকেট পড়ে যেত। ম্যাচটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসত। সব মিলিয়ে হুট করে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে পরিস্থিতি যেমনই হোক, ওভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হয়নি। সবার কাছেই আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”
তবে নিজের অপরাধবোধটুকু জানিয়েই শেষ করেননি তামিম, গিয়েছেন আরও গভীরে। তাকে দায় নিয়ে যেন মূল ঘটনা চাপা না পড়ে যায়, সেটা খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছেন।
“আমাদের দেশে অনেক সময়ই এটা হয়। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে তার বড় বড় ছবি আসে, তাকে নিয়ে সমালোচনা হয়। তারপর জরিমানা করে শেষ করে দেওয়া হয়। কেন এমনটা ঘটল সেটা আর ভেবে দেখা হয় না।”
“সাকিবের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে আগে। নানা ঘটনায় ওকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সেটা হয়ত ঠিকই আছে। কিন্তু সে বা একজন ক্রিকেটার কোন পর্যায়ে গেলে অমনটা করতে পারে, সেটা নিয়ে আর কেউ কথা বলেনি বা কাজ করেনি। ক্রিকেটারদের শাস্তি দিয়েই যেন দায় শেষ।”
“দেখুন, লিগের এমন একটা পর্যায়ে আছি আমরা, প্রতিটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। আর আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্তে একটি ম্যাচ ঘুরে যেতে পারে। সেখানে যদি এত বড় ভুল হয়, তাহলে ক্রিকেটারদের অনেক সময়ই মাঠে নিজেকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ ক্রিকেটাররা সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে।”
“আমার ভুল অবশ্যই ছিল। আম্পায়াররা সেটা রিপোর্ট করতে পারতেন, ম্যাচ রেফারি খেলা শেষে ডেকে নিয়ে শাস্তি দিতে পারতেন। আমি মাথা পেতে নিতাম। এখনও নেব। কিন্তু আম্পায়াররা মাঠ ছেড়ে কেন গেলেন!”
“আম্পায়াররা মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পর কিন্তু আমরা দু দলই মাঠে ছিলাম। গণ্ডগোল যতো হোক, ডাকওয়ার্থ-লুইসে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দোলেশ্বরও খেলতে রাজি ছিল। আম্পায়াররা খেলা না চালালে আমরা কি করতে পারি! ব্যাপারগুলো একটু ভেবে দেখার অনুরোধ করব। আমার দায় মানছি, কিন্তু পেছনের ব্যাপারটি যেন আড়াল না হয়। এসব খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করছি।”
বিকেএসপিতে রোববার বৃষ্টিতে ৪৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে আবাহনীকে ১৯১ রানে বেঁধে ফেলে দোলেশ্বর। গণ্ডগোলের সূত্রপাত দোলেশ্বর ইনিংসের ষোড়শ ওভারে। সাকলাইন সজিবের বলে ব্যাট করছিলেন রকিবুল হাসান। তার বিপক্ষে স্টাম্পিংয়ের জোড়ালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন আবাহনীর ক্রিকেটাররা। তামিম ইকবালকে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাতে। সবচেয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন আবাহনী অধিনায়ক। আম্পায়ারদের সঙ্গে এ সময় তুমুল বচসা হয় তার।
পরে খেলা শুরু হলেও আবাহনীর ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা ছিল আক্রমণাত্মক। মাঠের বাইরে থেকে যোগ দেয় আবাহনীর সমর্থকেরাও। প্রচণ্ড গালিগালাজ ও হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন তারা।
১৭ ওভার শেষে রিজার্ভ আম্পায়ারকে নিয়ে মাঠে ঢোকেন ম্যাচ রেফারি মন্টু দত্ত। তার সঙ্গে কথা বলে মাঠ ছেড়ে আসেন আস্পায়াররা। বন্ধ হয়ে যায় খেলা। দোলেশ্বরের রান তখন ২ উইকেটে ৫৯।
পরে নিজেরা আলোচনা করে আবার মাঠে নামেন আম্পায়াররা। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে নতুন লক্ষ্য নির্ধারিত হয় দোলেশ্বরের জন্য। কিন্তু যেখানে নিজেদের দায় নেই, কোনো প্রাকৃতিক কোনো দুযোর্গ হয়নি, এই অবস্থায় পরিবর্তিত লক্ষ্যে খেলতে রাজি হয়নি দোলেশ্বর। ম্যাচ স্থগিত করা হয়।
সেই ম্যাচ হয়নি সোমবার রিজার্ভ ডেতেও। সোমবার দুপুরে সিসিডিএমের সমন্বয়ক আমিন খান জানান, ম্যাচ রেফারির প্রতিবেদনে গণ্ডগোলের উল্লেখই নেই। তিনি লিখেছেন, দুই আম্পায়ারই অসুস্থ হওয়ায় ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে!
ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব সিসিডিএম দিয়েছে বিসিবিকে।