টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের পর স্মরণীয় ও আবেগময় প্রতিক্রিয়ায় ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন তুলেছেন ড্যারেন স্যামি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক পাল্টা জবাব দিয়েছেন সমালোচকদের, এক হাত নিয়েছেন নিজেদের বোর্ডকে, ধন্যবাদ জানিয়েছেন সাপোর্ট স্টাফদের আর জয় উৎসর্গ করেছেন ক্যারিবিয়ার মানুষদের।
Published : 04 Apr 2016, 01:32 PM
রোববার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে শেষ ওভারের টানা চার ছক্কায় ইংল্যান্ডকে হারিয়ে রেকর্ড দ্বিতীয়বার শিরোপা জয় করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ শেষ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নাসের হুসেইনের কাছে স্যামি জানালেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রতিক্রিয়া; প্রশংসায় ভাসালেন চার ছক্কার নায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে।
হুসেইনের তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল ২০১২ সালের শিরোপা জয়ের স্বাদের সঙ্গে এবারের জয়ের তুলনা। মুচকি হাসিতে স্যামি বললেন, ‘আপনি চান আমি এটা নিয়ে কথা বলি?’ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন হুসেইন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ভাসালেন আবেগের তরী।
“লোকে বলাবলি করছিল আমরা এই টুর্নামেন্ট খেলব কিনা। অনেক অনেক সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়েছে আমাদের। নিজেদের বোর্ড আমাদের অসম্মানিত করেছে। মার্ক নিকোলাস (সাবেক ক্রিকেটার ও এখন ধারাভাষ্যকার) আমাদের খেলোয়াড়দের বলেছেন ‘শর্ট অব ব্রেইন'। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এই সব ব্যাপার আমাদের দলকে আরও একাট্টা করেছে, সবাইকে কাছে এনেছে।”
“সমস্যার পাহাড় ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য দেখানো এবং এই আবেগময় দর্শকের সামনে এই ধরনের ক্রিকেট খেলার জন্য আমি এই ১৫ জন ছেলেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। অসাধারণ এক জয় এটি।”
দল নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করে বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় কয়েক মাস আগেই সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন কোচ ফিল সিমন্স। দায়িত্বে ফিরেই দলকে জেতালেন বিশ্বকাপ। অধিনায়ক আলাদা করেই বললেন কোচের কথা।
“কোচিং স্টাফের সবাইকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কোচ ফিল, অনেক কিছুর ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। সেখান থেকে এসে দলকে এভাবে কোচিং করানো, সে দুর্দান্ত। কোচিং স্টাফের সবাই নিজেদের কাজটা করেছেন।”
স্যামি জানালেন, টুর্নামেন্টের আগে মাঠে নামার পোশাকও ছিল না তাদের।
“নতুন একজন ম্যানেজারকে নিয়ে এই টুর্নামেন্টে এসেছি আমরা, লুইস। এর আগে কখনোই কোনো দলের ম্যানেজার হওয়ার অভিজ্ঞতা তার ছিল না। দুবাইয়ে আমরা ক্যাম্প করতে গেলাম, আমাদের প্রিন্টেড কোনো ইউনিফর্ম ছিল না। সে দুবাই থেকে কলকাতায় এলো, যেখানে আমরা শুরু করেছিলাম। আমাদের এই পোশাক জোগাড় করতে যে ঝামেলা ওকে পোহাতে হয়েছে…”
“পুরো দলকেই আসলে কৃতিত্ব দিতে হবে। আমাদের ছোট্ট পৃথিবীতে শুধু আমরাই ছিলাম। এই জয় আমরা উৎসর্গ করছি ক্যারিবিয়ানে আমাদের সব ভক্ত-সমর্থকদের।”
অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য স্যামির ধন্যবাদ পেলেন ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির (ক্যারিকম) নেতৃত্বস্থানীয়রা। হতাশা নিজেদের বোর্ডের প্রতি!
“ক্যারিকমের প্রধানদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। টুর্নামেন্ট জুড়ে তারা দলকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। আমরা ফোন পেয়েছি, ই-মেইল পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী মিচেল (গ্রেনাডার প্রধানমন্ত্রী কিথ মিচেল) আজ সকালে দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ী একটি ই-মেইল পাঠিয়েছেন আমাদের। তবে এখনও নিজেদের বোর্ডের কাছ থেকে কিছু শুনতে পাইনি আমরা। খুবই হতাশাজনক।”
এই দলের অনেকেরই নিশ্চিতভাবে এটি শেষ বিশ্বকাপ। তবে আগামী বিশ্বকাপ তো বটেই, আর কখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে পারবেন কিনা, স্যামি নিশ্চিত নন সেটি নিয়েই। দলের সবাইকেই একতাবদ্ধ করেছে সেই অনুভূতিই।
“আজ আমি এই ১৫ জন ছেলে আর কোচিং স্টাফের সঙ্গে সময় উপভোগ করব। জানি না, আর কখনও এই ছেলেদের সঙ্গে আমি খেলতে পারব কিনা। কারণ আমাদের অনেককেই ওয়ানডেতে নেওয়া হয় না। আমরা জানি না, আবার কখন আমরা টি-টোয়েন্টি খেলব। এই জয়ের জন্য তাই ধন্যবাদ জানাচ্ছি দলকে, কোচিং স্টাফকে…এখন সবাই জানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজই চ্যাম্পিয়ন!”