ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরুতে আসা বাংলাদেশের সামনে এখন আরেক লক্ষ্য। বিশ্বকাপে টিকে থাকতে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের প্রতিপক্ষ কেবল অস্ট্রেলিয়া নয়, নিজেদের আবেগও। তাসকিন আর আরাফাত সানিকে হারানোর বেদনা সয়ে দলে উদ্যম ফেরানোও হবে সুপার টেনে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের আরেক চ্যালেঞ্জ।
Published : 20 Mar 2016, 09:48 PM
মুস্তাফিজকে খেলাতে মরিয়া বাংলাদেশ
বিশ্বকাপেই তাসকিনকে পেতে চায় বিসিবি
হাথুরুসিংহের সঙ্গে দ্বিমত স্মিথের
বাংলাদেশের ম্যাচ উইনারদের নিয়ে সতর্ক স্মিথ
হাথুরুসিংহের প্রতি স্মিথের কৃতজ্ঞতা
মাশরাফির মাইলফলকের ম্যাচে সেরাটা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা
তাসকিন-আরাফাতের অভাব ঘোচানোর নয়
আগামী সোমবার স্টিভেন স্মিথের দলের মুখোমুখি হবেন সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালরা। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়।
অনেক দূর যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভারতে আসা বাংলাদেশ বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে শনিবার। অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিংয়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন দুই বোলার আরাফাত সানি ও তাসকিন আহমেদের। এমন সময়ে এসেছে এই নিষেধাজ্ঞা যখন তা অধিনায়ক মাশরাফির ভাষায় ‘কোনোভাবেই ম্যানেজ করা সম্ভব নয়’।
ভালো দিক হল, চোট কাটিয়ে উঠেছেন বোলিং আক্রমণের সেরা মুস্তাফিজুর রহমান। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে রোববার সকালে দলের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে যোগ দিয়েছেন শুভাগত হোম চৌধুরী ও সাকলাইন সজীব।
একাদশ হয়ত সাজানো যাবে, গড়া যাবে নতুন পরিকল্পনা। কিন্তু সানি-তাসকিনের বিষয়টা নিয়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা সাড়তে সময় লাগবে আরও অনেক দিন। বিশেষ করে তাসকিনের ব্যাপারটি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে না মাশরাফিরা।
শনিবারও অনুশীলনে হাসি-খুশি ছিলেন তাসকিন। তার বোলিংয়ে কোনো ত্রুটি দেখেননি দলের পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক। তাসকিনের কিছুই হবে না এই ভরসায় ছিলেন মাশরাফিও। কিন্তু আইসিসির ঘোষণা আসার পর পুরো এলোমেলো হয়ে গেছে বাংলাদেশ দল।
ফল শোনার পর কেঁদেছেন তাসকিন। তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে ভেঙে পড়েছেন মাশরাফির মতো সিনিয়ররাও। রোববার সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি কথা বলার ধরন, শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিল গোটা দল কি অবস্থায় আছে। সংবাদ সম্মেলন শেষে অধিনায়কের চোখের জল কাঁদাল আরও অনেককেই।
ইতিহাস বলে চাপে পড়া বাংলাদেশ বাঘের মতোই হিংস্র। যতবার দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে ততবার বীর দর্পে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দল। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রবাহ আবার সেই সমীকরণের সামনে ফেলেছে মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহদের।
আগের দিন দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ বলেছিলেন, যত ঝড়-ঝাপটা আসুক তা সামলানোর জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। জবাবটা খেলার মাঠে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।
প্রায় একই কথা রোববার বললেন মাশরাফি, “সবচেয়ে ভালো হয় মাঠে প্রতিবাদটা জানাতে পারলে।”
মাশরাফি স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, দুই সতীর্থের খারাপ খবরের সময়ে তারা কোনো কাজে মন বসাতে পারবেন না। মন এক জায়গায়, কাজ করবেন অন্য জায়গায়- এ তাদের দিয়ে হবে না। সানির বিষয় মেনে নিয়েছেন; কিন্তু তাসকিনের বিষয়টা চেপে রেখে কাজ করা খুবই কঠিন হবে তাদের জন্য।
ক্রিকেটাদের হারানো মনোবল ফিরিয়ে আনতে তাই এখন চলছে জোর চেষ্টা। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে সে কাজটা সবচেয়ে ভালো করতে পারে জাতীয় সঙ্গীত। ম্যাচের আগে মাঠ দাঁড়িয়ে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় আর সব ভুলে যান ক্রিকেটাররা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে এবার আরো বেশি অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা মাশরাফিদের।
বিশ্বকাপে নিজেদের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে এই ম্যাচে জেতা খুব জরুরি বাংলাদেশের জন্য। আবেগকে সামলে রেখে ক্রিকেটে মনোযোগ ফেরানোর জন্য সোমবার সারাটা দিনও সময় পাচ্ছে বাংলাদেশ। সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান জানান, ছেলেদের অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখাই এই মুহূর্তে তাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি।
তার আগের সময়টুকু অনেক খাটতে হবে চন্দিকা হাথুরুসিংহেদের। শিষ্যরদের বুঝিয়ে দিতে হবে যার যার ভূমিকা। অদল-বদল আনতে হবে মূল পরিকল্পনায়। দলে দুটি পরিবর্তন তো অনিবার্য। তাসকিনের জায়গায় মুস্তাফিজের ফেরা একরকম নিশ্চিত। দলের এমন কঠিন সময়ে ‘২০ শতাংশ ফিট’ থাকলেও মুস্তাফিজও থাকবেন একাদশে। তবে এই তরুণ পেসারের অবস্থা তত খারাপ নয়। শতভাগ ফিটের খুব কাছেই আছেন তিনি।
সানির জায়গায় সাকলাইন সজীব, নাসির হোসেন ও শুভাগত হোম চৌধুরীর যে কোনো একজন খেলতে পারেন। বোলিং বিভাগের শক্তি কিছুটা কমে যাওয়ায় বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে ব্যাটসম্যানদের। বড় রানের ম্যাচ হতে পারে ভেবে যার দায়িত্ব আগেই তামিম-সৌম্য সরকার-সাব্বির রহমানদের দিয়ে রেখেছেন মাশরাফি।
“এখনও ওদের দলে বেশ কয়েকজন ভালো মানের বোলার রয়েছে। আমরা কাউকে হালকা করে দেখতে পারি না। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আমরা ভালো করব এবং নিয়ন্ত্রণ করব। যদি তা করতে পারি, আশা করি কাল আমরা কিছু সাফল্য পাব।”
শনিবার কোচ হাথুরুসিংহে জানান, শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া দলে সমন্বয়হীনতা চোখে পড়েছে তার। সেই সুবিধা কাজে লাগানোর ভাবছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান দলটির অনেক খেলোয়াড় সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা আছে বাংলাদেশের কোচের। পরিকল্পনা করার সময় সেটাও খুব কাজে আসবে।
তবে মাশরাফি পরিকল্পনার চেয়ে তার বাস্তবায়নকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থা এখন যে পর্যায়ে তাতে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিনই হতে পারে। কিন্তু শোককে শক্তিতে পরিণত করলে তা অসম্ভবও নয়।
নেদারল্যান্ডস ম্যাচে সানি-তাসকিনের বোলিং নিয়ে প্রশ্ন উঠে। পরের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের পর মাশরাফি বলেছিলেন, সানি-তাসকিনের জন্যই মাঠে নেমেছিলেন তারা।
সেই ম্যাচে একাদশে ছিলেন তাসকিন, সানি ছিলেন না। সোমবার দুই জনই হয়তো থাকবেন হোটেলে। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে নিশ্চয়ই দুই সতীর্থদের জন্য খেলতে নামবেন মাশরাফিরা।