২০০৬ সালে ২৮ নভেম্বর, খুলনার এই শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামেই মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। ক্রিকেটের নবতম ও সবচেয়ে ছোটো সংস্করণে দুই দলেরই সেটি ছিল প্রথম ম্যাচ। নতুন জগতে পা রাখার রোমাঞ্চে অবগাহন করেছিল দুই দল।
Published : 14 Jan 2016, 06:03 PM
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ‘ফ্লোটার’ মাশরাফি!
‘বাধ্য হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলছে বাংলাদেশ’
সেই হার মনে করিয়ে দিলেন মাশরাফি
ব্যাটিং নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ অধিনায়ক
মাশরাফির অবসাদ ভুলিয়ে দেয় ড্রেসিং রুম
বাংলাদেশের বিপক্ষে ‘সুযোগ’ দেখছেন হোয়াটমোর
বাংলাদেশ কোচের কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ
সেই একই মাঠ, প্রতিপক্ষ দুই দলও অভিন্ন। তবে বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয়ের চেয়েও এখন দুই দলের বড় লক্ষ্য বিশ্বকাপের জন্য সেরা কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়া।
খুলনায় নয় বছর আগের ওই ম্যাচই এই সিরিজের আগ পর্যন্ত হয়ে আছে এই মাঠে শেষ টি-টোয়েন্টি। তবে টি-টোয়েন্টি তো আর থেমে নেই সেখানে, বরং এগিয়েছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। সেই সময়টায় টি-টোয়েন্টি মানেই মজা। ক্রিকেটাররাও মাঠে নামত নির্ভার হয়ে, উপভোগই ছিল শেষ কথা। ৯ বছরের পথচলায় টি-টোয়েন্টিও হয়ে গেছে ক্রিকেট খেলাটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আলাদা সূচি, আলাদা ধরন গড়ে উঠেছে, সময়ের চাহিদায় বাড়ছে মনোযোগও। এক সময়ের এই ‘ফান’ ক্রিকেটের এখন একটা বিশ্বকাপ আছে।
এই বাস্তবতারই মুখোমুখি এখন বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। সামনেই আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের জন্য সেরা দল আর আদর্শ কম্বিনেশন খুঁজে নেওয়ার জন্য এই সিরিজকেই বেছে নিয়েছে দুই দল। জয়ের কথা দুই দলই বলছে। কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি জোর ও গুরুত্ব দিয়ে বলছে সঠিক কম্বিনেশন খোঁজার কথা। এই সিরিজের আবহ সঙ্গীত তাই ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা’।
বুধবার অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বার বার বলেছেন দুই দলের কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে ও ডেভ হোয়াটমোর। সিরিজ শুরুর আগের দিন, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে একই সুর দুই অধিনায়কের কণ্ঠেও। জয়ের কথা বললেও মাশরাফি বিন মুর্তজার দৃষ্টি মূলত কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়ায়।
“যে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় অবশ্যই প্রাধান্য পাবে সবার আগে। তবে এই ফরম্যাটে এখনও অনেক কিছু দেখে নেওয়ার আছে আমাদের। নতুন কিছু চেষ্টা করে দেখব আমরা, সঠিক কম্বিনেশন পাওয়ার চেষ্টা করব। ফল হয়ত পক্ষে আসতে পারে, নাও পারে। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয়েছে, কিছু চেষ্টা করে দেখার সময় এটিই।”
বাংলাদেশে আসার আগে আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে এসেছে জিম্বাবুয়ে। জয়ে ফেরার তাগিদটা তাই তাদের কম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরার ভাবনাতেও আছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার তাড়না এতটাই যে একটা এই সিরিজ দিয়ে টি-টোয়েন্টি একটি নতুন দিগন্তও উন্মোচন করে ফেলছে দুই দল। এই প্রথম দুটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ম্যাচ থাকছে তিনটির বেশি! আগে আইসিসির নিয়মই ছিল, তিনটির বেশি ম্যাচ খেলা যাবে না এক সিরিজে। সেই বাধ্যবাধকতা উঠে যাওয়ার পর তিনটির বেশি টি-টোয়েন্ট খেলেছে এত দিন শুধু সহযোগী দেশগুলিই।
সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে পেতেই প্রথম দুই টি-টোয়ন্টির বাংলাদেশ দলে নতুন মুখ ৩ জন। খুলনা শহরেরই সন্তান, এই মাঠে খেলে বেড়ে উঠেছেন যিনি, এই নুরুল হাসানকে নিয়ে অনেক আশা বাংলাদেশ কোচ ও অধিনায়কের। শেষ দিকে দ্রুত রান তোলায় বাংলাদেশের যে ঘাটতি, সেটা পূরণে তরুণ এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের মাঝেই সমাধান খুঁজছে টিম ম্যানেজমেন্ট। দ্রুত রান তোলার চাহিদা পূরণে নেওয়া হয়েছে শুভাগত হোম চৌধুরীকে। বিপিএলে অভাবনীয় সাফল্যের পর বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনির কাছেও দলের প্রত্যাশা অনেক। তিন জনকেই শুক্রবার প্রথম ম্যাচের একাদশে দেখা গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না কিছুই।
খুলনার ক্রিকেটামোদীদের অবশ্য এতসব ভাবতে বয়েই গেছে! বাংলাদেশের তুমুল ক্রিকেট উন্মাদনার বিচারেও এই সিরিজ নিয়ে আগ্রহ কম। কিন্তু খুলনা কাঁপছে ক্রিকেট উত্তেজনায়। নিজেদের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখার সুযোগ কমই পায় শান্ত এই শহরের মানুষ। জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্যও তাই টিকিটের জন্য হাহাকার, ব্যাংকের সামনে লম্বা লাইন।
এই দর্শকেরা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের জয় ছাড়া অন্য কিছু চাইবে না! প্রস্তুতির কথা তাই যতবারই বলা হোক, বাস্তবতা বলছে, প্রস্তুতির আড়ালে জয়ের তাড়না চাপা পড়ছে না। সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়ার লড়াই আর জয়, দুটি এক বিন্দুতে মিলে গেলে পূরণ হয়ে যায় সব পক্ষের চাওয়াই।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে মাশরাফিরা পেতে চাইবেন সেই আদর্শ কিছুর তৃপ্তি।