শেষ ওভারের রোমাঞ্চে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।
Published : 23 Nov 2023, 10:33 PM
প্রথম বলে চার মেরে শুরুর পর প্রতিপক্ষের বোলারদের কচুকাটা করে ঝড়ো শতক উপহার দিলেন জশ ইংলিস। অস্ট্রেলিয়া পেল দুইশ ছাড়ানো পুঁজি। তবে তা যথেষ্ট হলো না। নেতৃত্বের অভিষেকে বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ। শেষ ওভারের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।
ভিশাখাপত্তমে বৃহস্পতিবার পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের জয় ২ উইকেটে। ২০৯ রানের লক্ষ্য ‘শেষ’ বলে ছুঁয়ে ফেলে স্বাগতিকরা।
এই সংস্করণে ভারতের সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয় এটি। ২০১৯ সালে হায়দরাবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জয় ছিল আগের রেকর্ড।
শেষ ওভারে ভারতের ৭ রানের সমীকরণে নাটকীয় মোড় নেয় লড়াই। শন অ্যাবটের প্রথম বলে চার মেরে ব্যবধান কমিয়ে আনেন রিংকু সিং। পরের বলে ‘বাই’ থেকে তিনি নেন এক রান। তৃতীয় বলে আকসার প্যাটেল ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর রান আউটে কাটা পড়েন রাভি বিষ্ণই।
৪ বলে ২ থেকে সমীকরণ দাঁড়ায় ২ বলে ২। পঞ্চম বলে রিংকুর দ্বিতীয় রানের চেষ্টায় রান আউট হন আর্শদিপ সিংও। এরপর ছক্কায় সবকিছুর ইতি টেনে দেন রিংকু। যদিও বোলার ‘ওভারস্টেপ’ করায় বলটি ছিল ‘নো’। তাই ছক্কা গোনায় আসেনি।
১৪ বলে ২২ রান করে শেষের নায়ক রিংকু। তবে ৪২ বলে ৮০ রানের খুনে ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা সুরিয়াকুমার। ৯ চার ও ৪ ছক্কায় গড়া তার ইনিংসটি।
৩৯ বলে ৫ ছক্কা ও ২ চারে ৫৮ রানের ইনিংসে অবদান রাখেন ইশান কিষান। শুরুতে দুই ওপেনারকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে কিষান ও সুরিয়াকুমার গড়েন ৬০ বলে ১১২ রানের জুটি।
কাজে এলো না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংলিসের প্রথম শতক। ৫০ বলে ৮ ছক্কা ও ১১ চারে ১১০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। শতক স্পর্শ করেন ৪৭ বলে, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যা দ্রুততম। ২০১৩ সালে সাউথ্যাম্পটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যারন ফিঞ্চও শতক করেছিলেন ৪৭ বলে।
এই সংস্করণে প্রথমবার ওপেনিংয়ে নেমে ৪১ বলে ৫২ রান করেন স্টিভেন স্মিথ। ইংলিসের সঙ্গে তার দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৩০ রান আসে ৬৬ বলে।
সবকিছু ছাপিয়ে নায়ক সুরিয়াকুমার।
আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের চার দিন পরই এই ম্যাচ খেলল ভারত। যদিও সুরিয়াকুমারসহ স্বাগতিকদের বিশ্বকাপ দলের কেবল তিন জন আছেন এই সিরিজে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী দলের আছে সাত জন।
অস্ট্রেলিয়া এ দিন ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। ১৩ রানে স্মিথকে ফেরানোর সুযোগ আসে, ফিরতি ক্যাচ নিতে পরেননি বোলার বিষ্ণই। ওই ওভারেই ম্যাথু শর্টকে বোল্ড করে ৩১ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন এই লেগ স্পিনার।
এরপর ইংলিস ও স্মিথের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়ার ছুটে চলা। এক প্রান্তে ইংলিস তোলেন ঝড়, স্মিথ খেলেন রয়েসয়ে।
ইংলিস পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ২৯ বলে। ফিফটি করতে স্মিথের লাগে ৪০ বল। পরের বলেই আউট হয়ে যান তিনি। আর্শদিপকে বাউন্ডারিতে অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে এই সংস্করণে শতকে পা রাখেন ইংলিস।
অষ্টাদশ ওভারে ইংলিসকে থামান প্রাসিধ কৃষ্ণা। টিম ডেভিডের ১৩ বলে ১৯ রানের ক্যামিও ইনিংসে দুইশ ছাড়ায় সফরকারীদের স্কোর।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে বিদায় নেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। আরেক ওপেনার ইয়াশাসবি জয়সওয়াল ফেরেন ৮ বলে ২১ রান করে।
২২ রানে শুরুর দুই ব্যাটসম্যানকে হারানোর ধাক্কা সামলে কিষান ও সুরিয়াকুমারের শতরানের জুটিতে এগিয়ে যায় ভারত। কিষান ফিফটি করেন ৩৭ বলে, সুরিয়াকুমারের লাগে ২৯ বল।
পরপর দুই ওভারে কিষান ও তিলাক ভার্মাকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে কিছুটা আশার সঞ্চার করেন লেগ স্পিনার তানভির স্যাঙ্ঘা। তবে সুরিয়াকুমার ভারতকে নিয়ে যান জয়ের দুয়ারে। তিনি কাজ শেষ করে আসতে না পারলেও দায়িত্বটি পালন করলেন রিংকু।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ২০৮/৩ (স্মিথ ৫২, শর্ট ১৩, ইংলিস ১১০, স্টয়নিস ৭*, ডেভিড ১৯*; আর্শদিপ ৪-০-৪১-০, প্রাসিধ ৪-০-৫০-১, আকসার ৪-০-৩২-০, বিষ্ণই ৪-০-৫৪-১, মুকেশ ৪-০-২৯-০)
ভারত: ১৯.৫ ওভারে ২০৯/৮ (জয়সওয়াল ২১, রুতুরাজ ০, কিষান ৫৮, সুরিয়াকুমার ৮০, তিলাক ১২, রিংকু ২২*, আকসার ২, বিষ্ণই ০, আর্শদিপ ০, মুকেশ ০*; স্টয়নিস ৩-০-৩৬-০, বেহরেনডর্ফ ৪-১-২৫-১, শর্ট ১-০-১৩-১, অ্যাবট ৪-০-৪৩-১, এলিস ৪-০-৪৪-০, স্যাঙ্ঘা ৪-০-৪৭-২)
ফল: ভারত ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ