লা লিগা
রেয়াল মাদ্রিদ ও জিরোনার বিপক্ষে ভালো খেলেও বার্সেলোনা জিততে পারেনি, দাবি কোচ শাভি এর্নান্দেসের।
Published : 05 May 2024, 09:58 AM
একই ম্যাচে দলের দুই রূপ দেখেছেন শাভি এর্নান্দেস। প্রথম ঘণ্টায় দলকে চেনা চেহারাতেই পেয়েছেন বার্সেলোনা কোচ। পরের ৩০ মিনিটে সেই দলই হয়ে উঠেছে অচেনা। এই আধ ঘণ্টাতেই সর্বনাশ যা হওয়ার, হয়ে গেছে। এই সময়টায় দলের এমন পারফরম্যান্স ব্যথিত করেছে কোচকে। ম্যাচের স্কোরলাইনও মানতে পারছেন না তিনি।
লা লিগার শিরোপা লড়াই থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছিল বার্সেলোনা। শনিবার জিরোনার কাছে ৪-২ গোলে হেরে যাওয়ার পর তাদের এখন রানার্স আপ হওয়াটাও শঙ্কায়।
জিরোনার মাঠে ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। পরের মিনিটেই সমতায় ফেরে জিরোনা। তবে রবের্ত লেভানদোভস্কির পেনাল্টিতে ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে শাভির দল।
সেই ব্যবধান অক্ষত ছিল দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় প্রথম ২০ মিনিটও। কিন্তু এরপর ১০ মিনিটের মধ্যে তিন গোল করে ভোজবাজির মতো সব পাল্টে দেয় জিরোনা।
নিজেদের এমন পরাজয়ের পাশাপাশি রেয়াল মাদ্রিদের শিরোপা উৎসবের যন্ত্রণাও সইতে হয় শাভিদের। বার্সেলোনার এই পরাজয়েই নিশ্চিত হয়ে যায় রেয়ালের চ্যাম্পিয়ন হওয়া।
ম্যাচের শেষ ৩০ মিনিটের পারফরম্যান্সই মূলত হতাশ করেছে শাভিকে। গোটা মৌসুমেই নিয়ন্ত্রণে থেকে বার্সেলোনা এভাবে বাববার খেই হারিয়েছে বলে মনে করেন কোচ।
“আমি সত্যিই বিষণ্ন ও হতাশ, কারণ একই ম্যাচে মুদ্রার দুটি পিঠ দেখেছি আমরা। প্রথমার্ধ নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট ছিলাম, সম্ভবত ৬০ মিনিট পর্যন্ত আমরা চাপ তৈরি করেছি ও জিরোনার ওপর দাপট দেখিয়েছি, যে কাজটি সহজ নয়। এরপর যা হয়েছে, সেটিকে বলা যায় আমাদের গোটা মৌসুমের সারাংশ।”
সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় আক্ষেপ করলেন বার্সেলোনা কোচ। দায় দিলেন তিনি নিজেদের ভুলকেই।
“আমরা যথেষ্ট কার্যকর ও নিখুঁত ছিলাম না। তৃতীয় গোল যদি করতে পারতাম, খেলাটাই বদলে যেত। জানি না, কতগুলো সুযোগ আমরা তৈরি করেছি। এটুকু জানি যে যথেষ্টই তৈরি করেছি। গোলমুখে আমাদের আরও কার্যকর হওয়া জরুরি ছিল।”
“এরপর একের পর এক ভুলের ব্যাপার তো আছেই। ম্যাচ আমাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল, কিন্তু পরে ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে আমাদের।”
এই নিয়ে এবারের লিগে জিরোনার বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই হেরে গেল বার্সেলোনা। দুই ম্যাচেই শাভির দলের জালে বল ঢুকেছে চারবার করে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেও এবার লিগে দুটি ম্যাচেই হেরেছে তারা।
শাভির যদিও দাবি, এই চারটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো ফুটবল খেলেছে তার দল। কিন্তু ফলাফল পক্ষে আসেনি তাদের।
“দলের এই পারফরম্যান্সে আমি নিজেই ক্ষুব্ধ, সমর্থকদের অবস্থাও বুঝতে পারছি। ক্লাবের একজন সমর্থক থেকেই তো আমি কোচ, মানুষের হতাশাটা তাই খুব ভালোভাবে অনুভব করতে পারছি।”
“আমাদের ওপরে থাকা দুই দল, মাদ্রিদ ও জিরোনার বিপক্ষে চারটি ম্যাচেই আমরা ওদের চেয়ে ভালো খেলেছি। কিন্তু স্কোরলাইনে সেটির প্রতিফলন পড়েনি। চারটি ম্যাচই আমরা হেরেছি। আমাদের তাই উন্নতি করতে হবে অনেক।”
এই ম্যাচে হারের পর ৩৪ ম্যাচে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার তিনে নেমে গেছে বার্সেলোনা। ৮৭ পয়ন্ট নিয়ে সবার ওপরে রেয়াল। এই মৌসুমের চমক জিরোনা টানা তৃতীয় জয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠে গেছে ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে। ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে চ্যাম্পিন্স লিগে খেলা।
রানার্স আপ হওয়াটাও যে এখন কঠিন, তা মানছেন শাভি। ট্রফিবিহীন মৌসুমে দলকে আবার উজ্জীবিত করার চ্যালেঞ্জ এখন বার্সেলোনা কোচের সামনে।
“শেষ চার ম্যাচ জিতে লিগে দ্বিতীয় হতে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিতে হবে আমাদের। তবে ব্যাপারটি আর আমাদের হাতে নেই। আরও ভালোভাবে লড়াই করতে হবে আমাদের। প্রথম ঘণ্টায় আজকে আমরা ভালো খেলেছি। শেষ ৩০ মিনিটে যেভাবে খেলেছি, তা আমাদের ফুটবলারদের বা ক্লাবের মানের সঙ্গে যায় না।”
“দল শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছে। তবে গোলগুলির পর নিজেদের হারিয়ে ফেলেছি আমরা। ৪-২ স্কোরলাইন দেখে ব্যাপারটি হজম করা কঠিন। দলকে মানসিকভাবে আবার চাঙা করতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে।”
শেষ চার ম্যাচে বার্সেলোনার প্রতিপক্ষ রেয়াল সোসিয়েদাদ, আলমেরিয়া, রায়ো ভাইয়েকানো ও সেভিয়া।