লম্বা সময় উইকেটে থেকেও কিছু করতে পারলেন না তামিম, বরিশালকে হারিয়ে জয়ে ফিরল চট্টগ্রাম।
Published : 06 Feb 2024, 09:28 PM
শহিদুলের ইসলামের বল ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে হাত থেকে ছুটে তামিম ইকবালের ব্যাট গের মিড উইকেটে। বল উড়ে গেল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। সহজ ক্যাচ নিলেন সৈকত আলি। তামিমের ব্যাটের মতোই যেন ফসকে গেল বরিশালের জয়ের সম্ভাবনাও। শহিদুলের দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয়ে ফিরল চট্টগ্রাম।
বিপিএলে ফরচুন বরিশালকে ১৬ রানে হারাল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ১৪৬ রানের লক্ষ্যে ৮ উইকেটে ১২৯ রানের বেশি করতে পারেনি বরিশাল।
তামিমকে ফেরানোর ওভারে কোনো রান দেননি শহিদুল। পরে নিজের শেষ ওভারে নেন আরও ২ উইকেট। চার ওভারে এক মেডেনসহ স্রেফ ১৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে চট্টগ্রামের জয়ের বড় কারিগর এই পেসার।
সাত ম্যাচে চট্টগ্রামের পঞ্চম জয় এটি। পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে উঠে এসেছে তারা। টানা দুই জয়ে ছন্দে ফেরার আভাস দেওয়া বরিশালের এটি সাত ম্যাচে চতুর্থ পরাজয়।
বিপিএল অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জশ ব্রাউনের ২৩ বলে ৩৮ ও পরে টম ব্রুসের ৪০ বলে অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংসে চট্টগ্রাম যেতে পারে ১৪৫ পর্যন্ত।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় বলেই চার মারেন তামিম ইকবাল। পরের ওভারে ফ্রি হিট পেয়ে আহমেদ শেহজাদও বাউন্ডারিতে খোলেন রানের খাতা। চতুর্থ ওভারে শুভাগতর বলে আরও দুটি চার মারেন তিনি।
এই শুরু টেনে নিতে পারেননি শেহজাদ। পঞ্চম ওভারে আল আমিন হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৭ বলে ১৬ রান করা ওপেনার। ওই ওভারেই জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন সৌম্য সরকার।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বিলাল খানের বলে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বরিশাল।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে হাল ধরেন তামিম ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে ব্যর্থ হন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। সেই চাপ থেকেই দ্বাদশ ওভারে সৈকত আলির স্লোয়ারে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। বাউন্ডারিবিহীন ইনিংসে ৯ রান করতে ১৩ বল খেলেন তিনি।
সৈকতের পরের ওভারে ছক্কা মারেন তামিম। শেষ ছয় ওভারে প্রয়োজন ছিল ৫৬ রান। তখনই শহিদুলের ওই ওভার। তৃতীয় বলে তামিমকে ফেরানোর পর শেষ তিন বলেও কোনো রান দেননি ২৯ বছর বয়সী পেসার।
এরপর শোয়েব মালিক, মাহমুদউল্লাহরা পারেননি ওভারপ্রতি ১২ রানের বেশি চাহিদা মেটাতে। একশ পেরোনোর আগেই ফেরেন মালিক। শহিদুলের অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল টেনে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ৮ বলে ৩ রান করা মাহমুদউল্লাহ।
শেষ দিকে খানিক চেষ্টা করেন চোট কাটিয়ে প্রায় ৯ মাস পর ফেরা মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তার দুটি করে চার-ছক্কায় ১৮ বলে ৩০ রানের ইনিংস শুধু বরিশালের পরাজয়ের ব্যবধানই কমায়।
আল আমিনের করা শেষ ওভারে সাইফ উদ্দিনের একটি শট সরাসরি গিয়ে লাগে স্পাইডার ক্যামে। নিয়ম অনুযায়ী 'ডেড' হয় ওই বল। পরে ছক্কা মেরে দলের ইনিংস শেষ করেন সাইফ উদ্দিন।
ম্যাচের প্রথম ভাগে টস জিতে চট্টগ্রামে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বরিশাল। শুরু থেকেই রানের জন্য সংগ্রাম করেন তানজিদ হাসান। তৃতীয় ওভারে আব্বাস আফ্রিদির বলে ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন জশ ব্রাউন।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তানজিদ। সাইফউদ্দিনের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৯ বলে ১০ রান করা বাঁহাতি ওপেনার।
অষ্টম ওভারে শোয়েব মালিকের বলে জোড়া ছক্কা মারেন ব্রাউন। পরের ওভারে তাকে থামান তাইজুল ইসলাম। ১ চার ও ৪ ছক্কায় ২৩ বলে ৩৮ রান করেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।
এরপর চট্টগ্রামকে একাই টানেন টম ব্রুস। মিরাজের বলে ছক্কার পর তিনি সৌম্যকে মারেন বাউন্ডারি। ঝড়ো ব্যাটিং না করলেও একপাশ থেকে অন্তত রানের চাকা সচল রাখেন কিউই কিপার-ব্যাটসম্যান।
অন্য প্রান্তে তানজিদের মতো রানের জন্য হাঁসফাঁস করেন চার নম্বরে নামা শাহাদাত হোসেন। আগের ম্যাচগুলোতে সম্ভাবনার ছাপ রাখা তরুণ ব্যাটসম্যান এদিন ১৫ রান করতে খেলেন ২০ বল। পঞ্চদশ ওভারে শাহাদাতকে ফেরান মোহাম্মদ ইমরান। এক বল পর দারুণ ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ নাজিবউল্লাহ জাদরান।
ইনিংসের শেষ ওভারে তিন ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন ব্রুস। ৪০ বলের ইনিংসে ৫ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
১৪৫ রানকে খুব একটা নিরাপদ মনে হয়নি মাঝ বিরতিতে। কিন্তু শহিদুল ও অন্য বোলাররা এটিকেই যথেষ্ট প্রমাণ করে ছাড়েন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৪৫/৫ (তানজিদ ১০, ব্রাউন ৩৮, ব্রুস ৫০*, শাহাদাত ১৫, নাজিবউল্লাহ ৪, সৈকত ১১, শুভাগত ২*; ইমরান ৪-০-৩১-২, সাইফউদ্দিন ৪-০-২৪-১, আফ্রিদি ৪-০-২৬-১, তাইজুল ৪-০-২১-১, মালিক ১-০-১৫-০, মিরাজ ১-০-৮-০, সৌম্য ২-০-১৭-০)
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১২৯/৮ (তামিম ৪৯, শেহজাদ ১৬, সৌম্য ০, মিরাজ ০, মুশফিক ৯, মালিক ১৪, মাহমুদউল্লাহ ৩, সাইফউদ্দিন ৩০*, আফ্রিদি ০, ইমরান ০*; আল আমিন ৪-০-৩১-২, বিলাল ৪-০-২১-১, শহিদুল ৪-১-১৩-৩, শুভাগত ১-০-৯-০, সৈকত ৩-০-২৮-১, নিহাদউজ্জামান ৪-০-২৪-১)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শহিদুল ইসলাম