পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজ
দিনের শেষ ঘন্টায় ১৮ বলের মধ্যে ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান।
Published : 16 Oct 2024, 07:03 PM
সিরিজের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জগিয়েও আক্ষেপ সঙ্গী করে ফিরতে হয়েছিল বেন ডাকেটকে। এবার আর ভুল করলেন না এই ওপেনার, ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে উপহার দিলেন শতক। কিন্তু তিনি মাইলফলক ছোঁয়ার পর হুট করেই ধস নামল ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে। দুই স্পিনার সাজিদ খান ও নোমান আলির হাত ধরে শেষ ঘন্টায় ৪ উইকেট নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল পাকিস্তান।
মুলতানে দ্বিতীয় টেস্টে বুধবার প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানকে ৩৬৬ রানে থামানোর পর একটা পর্যায়ে ইংল্যান্ডের রান ছিল ২ উইকেটে ২১১। সেখান থেকে তারা দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৬ উইকেটে ২৩৯ রানে। এখনও ১২৭ রানে পিছিয়ে আছে সফরকারীরা।
প্রথম দিন ৫ উইকেট পতনের পর দ্বিতীয় দিনে দুই দল মিলিয়ে পড়েছে ১১টি।
১৬ চারে ১২৯ বলে ১১৪ রান করেছেন ডাকেট। এদিন ৮৮ রানে পৌঁছে টেস্টে বলের হিসাবে দ্রুততম ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি, ভেঙে দিয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের টিম সাউদির রেকর্ড। সাউদির লেগেছিল ২ হাজার ৪১৮ বল, ডাকেটের ২ হাজার ২৯৩ বল।
প্রথম টেস্টের ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান হ্যারি ব্রুক এবার দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। ওই ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান জো রুটও ইনিংস বড় করতে পারেননি এবার। চোট কাটিয়ে ফেরার টেস্টে ১ রানে আউট হয়েছেন অধিনায়ক বেন স্টোকস।
তৃতীয় সেশনে উইকেট থেকে বেশ টার্ন পেয়েছেন স্পিনাররা। ৪ উইকেট নিয়েছেন ৩১ বছর বয়সী অফ স্পিনার সাজিদ। ৩৮ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার নোমানের শিকার ২টি।
মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে পাকিস্তান। এদিন তারা যোগ করতে যোগ করতে পারে কেবল ১০৭ রান।
দিনের তৃতীয় ওভারে ব্রাইডন কার্সের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান (৯৭ বলে ৪১)। সপ্তম উইকেটে ৩৮ রানের জুটি গড়েন সালমান আলি আঘা ও আমের জামাল। ম্যাথু পটসের বাড়তি বাউন্সে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৫৩ বলে ৩১ রান করা সালমান।
সাজিদকে দ্রুত ফিরিয়ে তৃতীয় শিকার ধরেন জ্যাক লিচ। জামাল ও নোমানের ৪৯ রানের নবম উইকেট জুটিতে সাড়ে তিনশ ছাড়ায় পাকিস্তান।
৬৯ বলে ৩৭ রান করা জামালকে বোল্ড করে দেন কার্স। নোমানকে (৬১ বলে ৩২) ফিরিয়ে ইনিংসের ইতি টেনে দেন লিচ। ১১৪ রানে ৪ উইকেট নেন ৩৩ বছর বয়সী বাঁহাতি এই স্পিনার।
জবাবে ডাকেট ও জ্যাক ক্রলির ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু পায় ইংল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটির পঞ্চাশ পূর্ণ হয় ৫০ বলে।
ক্রলিকে ফিরিয়ে (৩৬ বলে ২৭) ৭৩ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন নোমান। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন ব্যাটসম্যান। আম্পায়ার যদিও আউট দেননি আবেদনে, রিভিউ নিয়ে সাফল্য পায় পাকিস্তান।
চা-বিরতির আগে ডাকেট ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৭ বলে। আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ জুটি তিনি গড়েন অলি পোপের সঙ্গে। দারুণ এক ডেলিভারিতে পোপকে (৩৭ বলে ২৯) ফিরিয়ে দেন সাজিদ। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল টার্ন করে ব্যাটসম্যানের ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে।
ডাকেট এরপর টানা তৃতীয় পঞ্চাশোর্ধ জুটি গড়েন রুটের সঙ্গে। জমে ওঠে তাদের জুটি। ৯৯ থেকে চার মেরে ডাকেট চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১২০ বলে। মুলতানে নিজের আগের তিন টেস্ট ইনিংসে ফিফটির (৬৩, ৭৯, ৮৪) পর এবার তিন অঙ্কে যেতে পারলেন তিনি।
একটু পরই ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধসের শুরু হয় রুটকে দিয়ে। সাজিদের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করার চেষ্টায় স্টাম্পে টেনে আনেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক (৫৪ বলে ৩৪), ভাঙে ১০৮ বল স্থায়ী ৮৬ রানের জুটি।
নিজের পরের ওভারে সাজিদ ধরেন আরও দুই শিকার। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করে স্লিপে ধরা পড়েন ডাকেট। ব্যাক ফুট পাঞ্চ করার চেষ্টায় বোল্ড হন ব্রুক, অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা ডেলিভারি অনেক টার্ন করে আঘাত হানে স্টাম্পে।
পরের ওভারে স্টোকসকে বিদায় করেন নোমান। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লেগে যাওয়া বল শর্ট লেগে মুঠোয় জমান আব্দুল্লাহ শাফিক।
১৮ বলের মধ্যে ১৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।
সেখান থেকে কার্সকে নিয়ে দিনের বাকি সময়টা নিরাপদে কাটিয়ে দেন কিপার-ব্যাটসম্যান জেমি স্মিথ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ১২৩.৩ ওভারে ৩৬৬ (আগের দিন ২৫৯/৫) (রিজওয়ান ৪১, সালমান ৩১, জামাল ৩৭, সাজিদ ২, নোমান ৩২, জাহিদ ২*; পটস ২৬-৯-৬৬-২, কার্স ২০-৬-৫০-৪, লিচ ৩৮.৩-২-১১৪-৪, বাশির ২৮-১-৮৫-১, রুট ৬-০-২৪-০, স্টোকস ৫-০-২০-০)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৩ ওভারে ২৩৯/৬ (ক্রলি ২৭, ডাকেট ১১৪, পোপ ২৯, রুট ৩৪, ব্রুক ৯, স্টোকস ১, স্মিথ ১২*, কার্স ২*; জামাল ৬-০-৩৯-০, সাজিদ ১৯-১-৮৬-৪, নোমান ২১-৪-৭৫-২, জাহিদ ৬-০-২৭-০, সালমান ১-০-৫-০)