বড় জয়ে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
Published : 01 Nov 2023, 08:59 PM
জেরল্ড কুটসিয়াকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় বল আকাশে তুলে মিড অনে ধরা পড়লেন গ্লেন ফিলিপস। তাতে ম্যাচ শেষের আনুষ্ঠানিকতাই কেবল সারা হলো। আদতে ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় কেটে যায় আরও আগেই। বড় রান তাড়ায় লড়াই জমাতেই পারেনি নিউ জিল্যান্ড। কুইন্টন ডি কক ও রাসি ফন ডার ডাসেনের শতকের পর বোলারদের নৈপুণ্যে বড় জয় পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। অবসান হলো তাদের দুই যুগের অপেক্ষার।
পুনেতে বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১৯০ রানে। ওয়ানডেতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ ৩৫৭ রান করে তারা ৪ উইকেট হারিয়ে। কিউইরা গুটিয়ে যায় ১৬৭ রানেই।
বিশ্বকাপে রানের হিসাবে নিউ জিল্যান্ডের এর চেয়ে বড় হার আছে আর একটিই। ২০০৭ আসরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১৫ রানে হেরেছিল তারা।
এই সংস্করণে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জয় এটি। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে ১৫৯ রানের জয় ছিল আগের রেকর্ড।
১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে কিউইদের হারাতে পারল প্রোটিয়ারা। ২০০৩ থেকে বিশ্ব মঞ্চে দুই দলের টানা পাঁচ ম্যাচে জিতেছিল নিউ জিল্যান্ড।
চলতি আসরে সাত ম্যাচে ষষ্ঠ জয়ে ভারতকে টপকে শীর্ষে ওঠার পাশাপাশি সেমি-ফাইনালের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম চার ম্যাচে জয়ের পর টানা তিনটি হারল নিউ জিল্যান্ড।
দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড গড়া জয়ে ব্যাট হাতে বড় অবদান রাখেন তিন জন।
আসরে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে ১১৬ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৪ রান করেন ডি কক। তার সঙ্গে দুইশ রানের জুটি গড়া ফন ডাসেন ১১৮ বলে করেন ১৩৩। ৯ চার ও ৫ ছক্কায় গড়া ইনিংসে ম্যাচের সেরা তিনিই। ৩০ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ডেভিড মিলার।
বল হাতে নিউ জিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিতে ৪৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ। পেসার মার্কো ইয়ানসেনের প্রাপ্তি ৩টি।
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সতর্ক শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। পাওয়ার প্লেতে টেম্বা বাভুমার উইকেট হারিয়ে তারা তুলতে পারে কেবল ৪৩ রান।
ডি ককের শুরুটা ছিল মন্থর। প্রথম ৩৯ বলে রান ছিল মাত্র ২২। ১২ রানে একবার সুযোগও দিয়েছিলেন তিনি। পয়েন্টে কঠিন ক্যাচটি নিতে পারেননি ফিলিপস।
পরে রানের গতি বাড়িয়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৬২ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে ফন ডার ডাসেনের লাগে ৬১ বল।
জেমস নিশামকে ছক্কায় উড়িয়ে ১০৩ বলে ২১তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূরণ করেন ডি কক। এর পথে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে স্পর্শ করেন ৫০০ রানের মাইলফলক। তার বিদায়েই ভাঙে ২০০ রানের জুটি।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে যে কোনো উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। পেছনে পড়ে গেছে ২০১৫ সালে সেঞ্চুরিয়নে হাশিম আমলা ও রাইলি রুশোর ১৮৫ রানের জুটি।
ডি কককে ফেরাতে পারলেও রানের জোয়ারে বাঁধ দিতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। ফন ডাসেন আসরে দ্বিতীয় শতকে পা রাখেন ১০১ বলে। তার বিধ্বংসী ইনিংস থামান টিম সাউদি।
মিলারের শেষের ওই ঝড়ে সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ। এই সংস্করণে আগে ব্যাট করে টানা আট ইনিংসে তিনশর বেশি রান করল তারা।
লক্ষ্য তাড়ায় কখনও সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। তৃতীয় ওভারে ডেভন কনওয়ের বিদায়ে শুরু তাদের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল। ১০০ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় তারা।
ফিলিপসের শেষের ঝড়ে কিউইদের পরাজয়ের ব্যবধানই কমে শুধু। ম্যাট হেনরির সঙ্গে ৩৪ রানের শেষ উইকেট জুটিতে সব রানই ফিলিপসের! ৫০ বলে ৪টি করে ছক্কা ও চারে তার ৬০ রান ছাড়া উল্লেখ্য করার মতো কিছু করতে পারেননি আর কেউ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩৫৭/৪ ( ডি কক ১১৪, বাভুমা ২৪, ফন ডাসেন ১৩৩, মিলার ৫৩, ক্লসেন ১৫*, মার্করাম ৬*; বোল্ট ১০-১-৪৯-১, হেনরি ৫.৩-০-৩১-০, সাউদি ১০-০-৭৭-২, স্যান্টনার ১০-০-৫৮-০, ফিলিপস ৭-০-৫২-০, রবীন্দ্র ২-০-১৭-০, নিশাম ৫.৩-০-৬৯-১)
নিউ জিল্যান্ড: ৩৫.৩ ওভারে ১৬৭ (কনওয়ে ২, ইয়াং ৩৩, রবীন্দ্র ৯, মিচেল ২৪, ল্যাথাম ৪, ফিলিপস ৬০, স্যান্টনার ৭, সাউদি ৭, নিশাম ০, বোল্ট ৯, হেনরি ০*, ইয়ানসেন ৮-১-৩১-৩, এনগিডি ৬-১-২৮-০, রাবাদা ৬-২-১৬-১, কুটসিয়া ৬.৩-০-৪১-২, মহারাজ ৯-০-৪৬-৪)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রাসি ফন ডার ডাসেন