দলে বড় নামের চেয়ে বড় হৃদয়ের খেলোয়াড়ের প্রয়োজন বলে মনে করেন সুনিল গাভাস্কার।
Published : 03 Mar 2024, 07:59 PM
অস্ট্রেলিয়ায় সবশেষ সফরের পর এবার ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড সিরিজেও বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ছাড়া খেলছে ভারত। নবীনদের নৈপুণ্যে দুটি সিরিজই জিতেছে তারা। সিরিজ দুটির উদাহরণ টেনে তারকা ক্রিকেটারদের একরকম সতর্কবার্তা দিলেন সুনিল গাভাস্কার। ভারতের এই ব্যাটিং গ্রেট বললেন, তাকে ছাড়া দল জিততে পারবে না এমনটা যেন কেউ না ভাবে।
২০২০-২১ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের শুরুটা ছিল বেশ বাজে। অ্যাডিলেইডে প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে হেরে যায় তারা। ওই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে অলআউট হয়ে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার বিব্রতকর রেকর্ড গড়ে দলটি।
সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে অ্যাডিলেইড টেস্টের পর দেশে ফিরে যান তখনকার ভারত অধিনায়ক ভিরাট কোহলি। আজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বে মেলবোর্নে ৮ উইকেটে জিতে সিরিজ সমতা ফেরায় ভারত। সিডনি টেস্টেও দারুণ লড়াই করে তারা, শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি হয় ড্র।
ব্রিজবেন টেস্টের আগে চোটের থাবায় উমেশ ইয়াদাভ, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, হনুমা বিহারি, রবীন্দ্র জাদেজাদের হারায় ভারত। শুবমান গিল, রিশাভ পান্ত, মোহাম্মদ সিরাজ, ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুরদের মতো নবীনরা এগিয়ে আসেন। জোড়াতালি দিয়ে সাজানো একাদশ নিয়েই গ্যাবা টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে চার ম্যাচের সিরিজ জিতে নেয় সফরকারীরা।
ব্যক্তিগত কারণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান কোহলি। কদিন আগে দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। তাকে ছাড়াই এক ম্যাচ বাকি থাকতে পাঁচ টেস্টের সিরিজটি ৩-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে ভারত।
এছাড়া সিরিজটিতে প্রথম ম্যাচ খেলার পর চোটের কারণে আর খেলতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল। চোটের থাবায় মাঝে এক ম্যাচ বাইরে ছিলেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার জাদেজা। ফর্মের অভাবে প্রথম দুই ম্যাচের পর দলে জায়গা হারান মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শ্রেয়াস আইয়ার।
তাদের অনুপস্থিতি একদমই বুঝতে দেননি ইয়াশাসবি জয়সয়াওল, সারফারাজ খান, ধ্রুভ জুরেলের মতো নবীন ক্রিকেটার। ‘স্পোর্টস টাক’-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় গাভাস্কার দুই সিরিজকে গাঁথলেন একই সুতোয়।
“অস্ট্রেলিয়ায় অনেক বড় বড় নামকে পায়নি ভারত কিন্তু তারা শুধু গ্যাবায় নয় মেলবোর্নেও দারুণ জয় তুলে নেয়। ৩৬ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর তারা ঘুরে দাঁড়ায়। মেলবোর্নে জেতার পর সিডনি টেস্টে বাঁচাতে তারা প্রাণপণ লড়াই করে। রিশাভ পান্ত যদি আর আধা ঘণ্টা ক্রিজে থাকত, ওই ম্যাচও ভারত জিততে পারত। অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের তরুণ খেলোয়াড়রা যে সাহস, মনোবল, দৃঢ়তা দেখিয়েছে, তা এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও দেখা যাচ্ছে।”
এরপরই গাভাস্কার ভারতীয় ক্রিকেটারদের সতর্ক করে দিয়ে মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, ক্রিকেট একজনের খেলা নয়।
“এই জন্যই আমি সবসময় বলি, বড় নামের প্রয়োজন নেই… যদি কোনো বড় খেলোয়াড় মনে করে তাকে ছাড়া ভারত জিততে পারবে না, এই দুই সিরিজ দেখিয়ে দিয়েছে যে তারকা খেলোয়াড়ের থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না। ক্রিকেট দলগত খেলা। একজনের ওপর নির্ভর করে না।”
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব অধিনায়ক রোহিত শার্মা ও প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে দিলেন গাভাস্কার। তার মতে, অনভিজ্ঞদের নিয়ে গড়া দল বেশ ভালোভাবে পরিচালনায় করেছেন তারা।
“অধিনায়ক রোহিত শার্মা ও প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় যেভাবে দল পরিচালনা করেছে, তাদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। তারা তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দিয়েছে, প্রস্তুত করেছে এবং তাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে উৎসাহিত করেছে। এটা প্রমাণ করে যে, দলে বড় নাম থাকুক বা না থাকুক, আমাদের যদি বড় হৃদয়ের খেলোয়াড় থাকে তবে আমরা জিততে পারি।”
ইংল্যান্ড ও ভারতের পঞ্চম ও শেষ টেস্টটি শুরু আগামী বৃহস্পতিবার, ধারামশালায়।