চমৎকার ব্যাটিংয়ে ঢাকা বিভাগের আশা বাঁচিয়ে রাখলেন জাওয়াদ আবরার, রংপুরের জয়যাত্রা থামিয়ে শীর্ষে উঠল ঢাকা মেট্রো।
Published : 18 Dec 2024, 06:16 PM
স্বীকৃত ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই প্রতিভার ছাপ রাখলেন জাওয়াদ আবরার। উইকেটের চারপাশে দৃষ্টিনন্দন সব শটে ষাটোর্ধ্ব ইনিংস খেললেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওপেনার। তার দারুণ ব্যাটিংয়ে অনায়াস জয়ে টুর্নামেন্টে টিকে রইল ঢাকা বিভাগ।
অন্য ম্যাচে আলাউদ্দিন বাবুর অলরাউন্ড নৈপুণ্য ছাপিয়ে আলিস আল ইসলাম ও আবু হায়দারের দারুণ বোলিংয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখল ঢাকা মেট্রো।
রাজশাহীকে ছিটকে দিয়ে টিকে রইল ঢাকা
সিলেট আন্তর্জতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে জাওয়াদের ফিফটির সৌজন্যে ৭ উইকেটে জিতেছে ঢাকা বিভাগ। ১৪১ রানের লক্ষ্য ২৯ বল বাকি থাকতেই টপকে গেছে তারা।
ছয় ম্যাচে ঢাকার এটি দ্বিতীয় জয়। শেষ ম্যাচে বেশ কিছু সমীকরণ পক্ষে এলে প্লে-অফের টিকেট পেতে পারে তারা। সমান ম্যাচে মাত্র ২ পয়েন্ট পাওয়া রাজশাহী বিভাগ টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেল সবার আগে।
৩৯ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে ঢাকার জয়ের নায়ক জাওয়াদ। কদিন আগে বাংলাদেশের হয়ে যুব এশিয়া কাপ জিতে আসা ওপেনার স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম ফিফটির পথে ছক্কা মারেন চারটি, চার মারেন ছয়টি।
এছাড়া ঢাকার হয়ে বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স করেন ইকবাল হোসেন ইমন, নাজমুল ইসলামরা।
১৪২ রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ৯৬ রান করেন জাওয়াদ ও রনি তালুকদার। প্রথম তিন ওভারে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি দুই ওপেনার। চতুর্থ ওভারে প্রথম চার মারেন রনি।
পঞ্চম ওভারে শফিকুল ইসলামের স্লোয়ারে ওয়াইড লং অফ দিয়ে ছক্কা মারেন জাওয়াদ। এক বল পর এক্সট্রা কাভার দিয়ে তিনি মারেন বাউন্ডারি।
ফরহাদ রেজা বোলিংয়ে আসতেই প্রথম বল ছক্কায় ওড়ান রনি। পরে স্ট্রাইক পেয়ে লং অন দিয়ে ছক্কা মারেন জাওয়াদ। পরের বল একদম শেষ মুহূর্তে ব্যাট চালিয়ে পয়েন্ট দিয়ে চার মারেন তরুণ ওপেনার।
পরের ওভারে ওয়াসি সিদ্দিকির বলে দারুণ ইনসাইড আউট শটে বল বাউন্ডারিতে পাঠান জাওয়াদ। একই ওভারে স্কুপ করে মারেন আরেকটি চার। ওয়াসির পরের ওভারে বোল্ড হন ২৩ বলে ৩৩ রান করা রনি।
নিহাদউজ্জামানের বলে ফাইন লেগ দিয়ে মারা ছক্কায় ফিফটি স্পর্শ করেন জাওয়াদ। ওয়াসির বলে ওয়াইড লং দিয়ে আরেকটি ছক্কা মারেন তিনি। পরের বলে ইনসাইড আউট শটে মারেন বাউন্ডারি।
জাওয়াদের ইনিংসটিও থামান ওয়াসি। ফুল লেংথ বলে স্লগ করার চেষ্টায় বোল্ড হন ঢাকার ওপেনার।
পরে আরিফুল ইসলাম ও মাহিদুল ইসলাম অনায়াসে শেষ করেন বাকি কাজ।
ম্যাচের প্রথমভাগে রাজশাহীর ব্যাটসম্যানদের ডানা মেলতে দেননি ঢাকার বোলাররা। চোট কাটিয়ে ফেরার ম্যাচে ৮৪ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত টানা তিন ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ।
আগের সবগুলো ম্যাচে ত্রিশছোঁয়া ইনিংস খেলা হাবিবুর রহমান এবার থামেন ১৯ রানে। এই ইনিংসের পর অবশ্য টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান এখন তারই (২৩৪)।
তৃতীয় উইকেটে ৪৬ রানের জুটি গড়েন সাব্বির হোসেন ও তাওহিদ হৃদয়। ১৯ বলে ৩২ রান করেন সাব্বির। দলের সর্বোচ্চ ২৬ বলে ৩৭ রান আসে হৃদয়ের ব্যাট থেকে।
আর কেউ ২০ রানও করতে পারেনি। মুশফিকুর রহিম ১৪ বলে ১৩ রান করে আউট হন। রাজশাহীও তাই গড়তে পারেনি বড় স্কোর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজশাহী বিভাগ: ১৯.১ ওভারে ১৪০ (শান্ত ১, হাবিবুর ১৯, সাব্বির ৩২, হৃদয় ৩৭, মুশফিক ১৩, প্রিতম ৫, নিহাদউজ্জামান ১৩, ওয়াসি ৬, শফিকুল ০, আসাদুজ্জামান ০*; ইমন ৪-০-২৬-৩, নাজমুল ৪-০-২৫-২, সুমন ৩.১-০-৩১-২, তাইবুর ৪-০-১৯-১, মেহেদি ৪-০-৩৬-১)
ঢাকা বিভাগ: ১৫.১ ওভারে ১৪১/৩ (জাওয়াদ ৬২, রনি ৩৩, আরিফুল ১৯*, সাইফ ১, মাহিদুল ৭*; শফিকুল ২-০-১৯-০, নিহাদউজ্জামান ৪-০-২৭-০, আসাদুজ্জামান ৪-০-২৮-১, ফরহাদ ১-০-২০-০, ওয়াসি ৪-০-৩৫-২, হৃদয় ০.১-০-৪-০)
ফল: ঢাকা ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জাওয়াদ আবরার
রংপুরকে থামিয়ে শীর্ষে ঢাকা মেট্রো
অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকা দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। প্রথম পাঁচ ম্যাচের সবকটি জিতেছিল রংপুর বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো। সেই দুই দলের লড়াই জমল না তেমন একটা। রংপুরের অজেয় যাত্রা থামিয়ে ৭ উইকেটের জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেল ঢাকা মেট্রো।
রংপুরকে ১২৫ রানে আটকে রাখার কারিগর আবু হায়দার ও আলিস আল ইসলাম। মাত্র ৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পরপর দুই ম্যাচে সেরার স্বীকৃতি পান আবু হায়দার। আলিসও নেন ৩ উইকেট।
ওপরের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে আট নম্বরে নেমে ঝড় তোলেন আলাউদ্দিন বাবু। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা অলরাউন্ডার এ দিন খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ৪৭ রানের ইনিংস।
বল হাতে তো এই আসরে তিনি দারুণ ছন্দে। এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সফলতম বোলার আরও দুই উইকেট নিয়ে শিকার সংখ্যা নিয়ে যান ১৩ উইকেটে। কিন্তু বিফলে যায় তার এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে আলিসের স্পিন পরীক্ষায় পড়ে রংপুর। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ১৫ রান করতে ৪ উইকেট হারায় তারা। ৪০ রান হওয়ার আগেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন আরও দুই ব্যাটসম্যান।
সপ্তম উইকেটে এনামুল হককে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন আলাউদ্দিন। মাত্র ৩৬ বলে ৬৪ রানের জুটি গড়েন তারা। ২ চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কায় ২৩ বলে ৪৭ রান করেন আলাউদ্দিন। ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন এনামুল।
রান তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও ইমরানউজ্জামানের উইকেট হারায় মেট্রো। তবে দলের ওপর চাপ আসতে দেননি সাদমান ইসলাম ও আনিসুল ইসলাম। দুজন মিলে ৬০ বলে ৮০ রান যোগ করেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মূলত বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত সাদমান তার টি-টোয়েন্টি সামর্থ্যের কিছুটা ঝলক দেখান এ দিন। এই সংস্করণে প্রথম ফিফটির স্বাদ পান ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৮৮ ম্যাচ খেলা ব্যাটসম্যানের এটি ছিল টি-টোয়েন্টিতে মাত্র চতুর্দশ ম্যাচ। আরিফুল ইসলামে এক ওভারে চারটি চার মেরে ফিফটি পেরিয়ে আউট হয়ে যান তিনি এই ওভারেই। ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৩৭ বলে করেন ৫৪ রান।
দলকে জিতিয়ে ৩০ বলে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন আনিসুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর: ১৯.৩ ওভারে ১২৫ (খালিদ ৩, তানবীর ২, মিম ১, নাঈম ৭, আকবর ১, আরিফুল ১৭, এনামুল ৩৪*, আলাউদ্দিন ৪৭, রবিউল ৬, গাফফার ২, হাশিম ০; রকিবুল ৪-০-১৭-১, আলিস ৪-০-২২-৩, মারুফ ৩.৩-০-৪০-১, আরাফাত ৩-০-১৫-১, আবু হায়দার ৩-০-৭-৩, আনিসুল ২-০-২৩-১)।
ঢাকা মেট্রো: ১৫.৩ ওভারে ১২৬/৩ (ইমরানউজ্জামান ২৫, নাঈম ৭, সাদমান ৫৪, আনিসুল ২৯*, শামসুর ০*; রবিউল ২-০-১৩-০, এনামুল ৪-০-২৫-০, আলাউদ্দিন ২.৩-০-১৭-২, হাশিম ৩-০-২৬-০, গাফফার ২-০-১৭-০, তানবীর ১-০-৬-০, আরিফুল ১-০-২২-০)
ফল: ঢাকা মেট্রো ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আবু হায়দার