Published : 05 May 2025, 07:10 PM
আগের তিন ম্যাচে ঝড় তোলা টপ-অর্ডার এবার থেমে গেল দ্রুত। লক্ষ্য বড় না হওয়ায় তবু জিইয়ে ছিল সম্ভাবনা। কিন্তু ভালো শুরু করলেও বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না কেউ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তিন ম্যাচ পর পরাজয়ের তেতো স্বাদ পেল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। বাড়ল সিরিজ জয়ের অপেক্ষাও।
যুব ওয়ানডে সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশের হার ২৭ রানে। কলম্বোতে সোমবার ১৯৭ রানের লক্ষ্যে ৩০ বল বাকি থাকতে ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা।
ম্যাচ হারলেও অবশ্য সিরিজে এগিয়েই থাকছে বাংলাদেশ। ছয় ম্যাচ সিরিজে তারা এখন ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে।
এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের যুবাদের সামনে। আগের ম্যাচে জাওয়াদ আবরারের সেঞ্চুরির সঙ্গে রিজান হোসেনের চমৎকার ব্যাটিংয়ে সাড়ে তিনশর কাছাকাছি গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা অল্পতেই ফেরার পর দুইশর কম রানও তাড়া করতে পারল না তারা।
সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে মাঝারি লক্ষ্যে ছুটে সাত ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফেরেন প্রথম তিন ব্যাটসম্যান। আগের তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি করা জাওয়াদ এবার ফেরেন ৭ রানে। কালাম সিদ্দিকি, আজিজুল হাকিমও ব্যর্থ দুই অঙ্ক ছুঁতে।
পরের পাঁচ ব্যাটসম্যানের সবাই বিশ পেরিয়ে থেমে যান চল্লিশের আগেই।
মাত্র ১৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন রিজান ও আব্দুল্লাহ। ৫৪ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়েন তারা। দলকে পঞ্চাশ পার করিয়ে আউট হন ৫০ বলে ২৫ রান করা রিজান।
আব্দুল্লাহর সঙ্গে ৪৫ রানের বন্ধন গড়ে তোলেন দেবাশিষ দেবা। একশ রানের আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই জুটি। ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ রান করেন দেবাশিষ। আব্দুল্লাহ খেলেন ৫৯ বলে ৩২ রানের ইনিংস।
১০৫ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে আশা দেখান সামিউন বশির। আট নম্বরে নেমে ঝড় তোলেন স্পিনিং অলরাউন্ডার। বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলার পরের বলে আরেকটি চার মারেন তিনি। এক ওভার পর মারেন ছক্কা।
ফরিদ হাসানের সঙ্গে সামিউনের সপ্তম উইকেট জুটিতে জয়ের আশা দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। একের পর এক বাউন্ডারি মেরে দলকে এগিয়ে নেন সামিউন।
দেড়শ ছোঁয়ার পর আর টিকতে পারেননি তিনি। কাভিজা গামাগের বলে বোল্ড হয়ে থামে তার ৪ চার ও ২ ছক্কায় ২৬ বলে ৩৭ রানের ইনিংস। সামিউনের বিদায়ে ভাঙে ম্যাচের সর্বোচ্চ ৪৯ রানের জুটি।
সেখান থেকেই শুরু একটি ধসের। ১ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় দলের। একা দলকে টেনে নিতে পারেননি ফরিদ। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৩০ রান করেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন ভিরান চামুদিথা ও কুগাথাস মাথুলান।
ম্যাচের প্রথমভাগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের এলোমেলো বোলিংয়ে ভালো শুরু পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। প্রথম ছয় ওভারে সাতটি ওয়াইড করেন যুব ওয়ানডেতে অভিষিক্ত সাদ ইসলাম ও ইকবাল হোসেন।
সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে চামুদিথাকে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন রিজান। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নিজের প্রথম সাফল্য পান সাদ। অল্পেই ফেরেন চামিকা হিনাটিগালা।
ভালো শুরু করা সুহাস ফার্নান্দোকেও বেশি দূর যেতে দেননি রিজান। ৪ চারে ৪৪ বলে ২৮ রান করেন অভিষিক্ত ওপেনার।
পুরো ইনিংসে তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি শ্রীলঙ্কা। পাঁচ নম্বরে নেমে একপ্রান্তে একাই রান করতে থাকেন অধিনায়ক ভিমাথ দিনসারা। সাত নম্বরে নেমে তাকে সঙ্গ দেন অভিষিক্ত আদাম হিলমি।
দুজন মিলে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৮ রানের জুটি গড়েন। দলকে দেড়শ পার করিয়ে আউট হন ৪৭ বলে ৪২ রান করা দিনসারা।
পরে পুরো দায়িত্ব নিয়ে নেন হিলমি। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের ৫৯ বলে ৫১ রানের রানের ইনিংসে কোনোমতে দুইশর কাছে যায় স্বাগতিকরা। পরে সেই পুঁজিকেই যথেষ্ট প্রমাণ করেন লঙ্কান বোলাররা।
ব্যাটিংয়ে দলের সবচেয়ে বেশি রান করার বল হাতে সফরকারীদের পক্ষে ৩৫ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন সামিউন।
কলম্বোর কোল্টস ক্রিকেট ক্লাব মাঠে বৃহস্পতিবার সিরিজের শেষ ওয়ানডে।
শ্রীলঙ্কা অ-১৯: ৪২.৩ ওভারে ১৯৬ (চামুদিথা ১৪, ফার্নান্দো ২৮, হিনাটিগালা ৭, ভিদানাপাথিরানা ২৮, দিনসারা ৪২, কাভিজা ০, হিলমি ৫১, জেলন ১, নাভোদিয়া ০, আকাশ ০, মাথুলান ৪*; সাদ ৭-০-২৯-২, ইকবাল ৮-০-৬২-০, রিজান ৭-০-৩০-২, সামিউন ১০-১-৩৫-৩, দেবাশিষ ৮-১-৩৪-১, ফারহান ২.৩-১-৫-২)
বাংলাদেশ অ-১৯: ৪৫ ওভারে ১৬৯ (জাওয়াদ ৭, কালাম ১, আজিজুল ৪, রিজান ২৫, আব্দুল্লাহ ৩২, দেবাশিষ ২৪, ফরিদ ৩০*, সামিউন ৩৭, ফারহান ১, ইকবাল ০, সাদ ০; নাভোদিয়া ৯-০-৩০-২, চামুদিথা ৯-২-২৬-৩, মাথুলান ৮-২-২৬-৩, আকাশ ৬-০-৩৫-০, ভিদানাপাথিরানা ৪-০-৩৮-০, হিনাটিগালা ৭-০-২১-০, কাভিজা ২-০-৩-১)
ফল: শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দল ২৭ রানে জয়ী
সিরিজ: ছয় ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: আদাম হিলমি