বিপিএল
প্রথম বিপিএলের প্রথম ম্যাচে ছক্কা মেরে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদে বল আছড়ে ফেলে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন ক্রিস গেইল, এবার ঠিক সেভাবেই ছক্কায় বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে ফিফটি ছুঁয়ে বরিশালকে জেতালেন ফাহিম আশরাফ।
Published : 30 Dec 2024, 08:25 PM
গোটা ছয়েক ছক্কা ততক্ষণে মেরে ফেলেছেন ফাহিম আশরাফ। হারের দুয়ার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফরচুন বরিশাল তখন জয়ের কিনারায়। জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন চার রান, আরেকবার সজোরে উড়িয়ে মারলেন ফাহিম। বল যেন হারিয়ে গেল শূন্যে। মুহূর্ত পরে দেখা গেল, গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদে আছড়ে পড়ে বল চলে গেল মাঠের বাইরে!
ফাহিমের শট দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যেতে পারে ক্রিস গেইলকে। ঠিক এভাবেই স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদে বল আছড়ে ফেলেছিলেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং-দানব। তিনিও খেলেছিলেন বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়েই।
সেটি ছিল প্রথম বিপিএলের প্রথম ম্যাচ। বরিশাল বার্নার্সের জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন পাঁচ রান, লেগ স্পিনার নূর হোসেনের শর্ট বল উড়িয়ে মেরেছিলেন গেইল। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদে আছড়ে পড়ে বল গড়িয়ে চলে গিয়েছিল মাঠের বাইরে।
ওই ছক্কায় দলের জয়ের পাশাপাশি গেইলের সেঞ্চুরিও হয়ে যায়। এবার মৃত্যুঞ্জয়ের ফুল টস বল উড়িয়ে মেরে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদে ফেলেন ফাহিম। বল গড়িয়ে চলে যায় মাঠের বাইরে। দলের জয়ের পাশাপাশি ফাহিদের ফিফটি পূরণ হয়।
গেইলের বিধ্বংসী শতরানের ওই ম্যাচে ১৬৬ রান তাড়ায় ১০ উইকেটে জিতে গিয়েছিল বরিশাল বার্নার্স। ফাহিমের কাজটা ছিল তুলনায় অনেক কঠিন। ১৯৮ রান তাড়ায় ৬১ রানে ৫ উইকেট হারায় ফরচুন বরিশাল। এরপর শাহিন শাহ আফ্রিদি যখন ক্যামিও ইনিংস খেলে আউট হন, তখনও ৪৬ বলে ৮৬ রান প্রয়োজন দলের। ফাহিম ও মাহমুদউল্লাহর বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সেই ম্যাচ শেষ হয়ে যায় ১১ বল আগেই।
২৬ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। সাত ছক্কায় ২১ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন ফাহিম।
ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানি এই অলরাউন্ডার বললেন, প্রবল চাপের সময়টাতেও স্বাভাবিক ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করে গেছেন তারা।
“আমাদের পরিকল্পনা স্বাভাবিক ছিল। আগেও নানা সময়ে এরকম পরিস্থিতিতে আমরা খেলেছি, পিএসএলে, এমনকি বিপিএলেও অনেকবার হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে এসব হয়েই থাকে। আমাদের স্রেফ ভাবনা ছিল যে, একটি বড় ওভার লাগবে। এরপর যেটা হয়েছে, একটির জায়গায় দুটি বড় ওভার পেয়ে গেছি। তাতে কাজ সহজ হয়েছে।”
মাহমুদউল্লাহ শুরু থেকেই ছিলেন দারুণ ইতিবাচক। তবে ফাহিম শুরুতে টাইমিং করতে পারছিলেন না ঠিকঠাক। আট বলে তার রান ছিল এক। সেই সময়টায় তিনি সাহস পান মাহমুদউল্লাহর কথায়।
“মাহমুদ ভাই অসাধারণ। প্রথম সাত বা আট বলে আমার কেবল এক রান ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কী হচ্ছে!’ তিনি বলেছিলেন স্রেফ উইকেটে যেন টিকে থাকি। এরকম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার যখন সঙ্গে থাকে… নিজে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হলেও কিছু কিছু সময় এমন থাকে যে, প্রেরণাদায়ক কিছুর প্রয়োজন হয়। তার কথার পর আমি নিজেকে একটু সংযত করেছি, নিজের ওপর চাপ কম নিয়েছি। এরপর কাজ সহজ হয়ে গেছে।”
ম্যাচ জেতানো ইনিংসটি খেলে স্মৃতির ডানায় ফাহিম ফিরে গেলেন সাড়ে সাত বছর আগে। তার ক্যারিয়ারের বাঁক বদলের এক ম্যাচে মিশে আছে বাংলাদেশের নাম। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বার্মিংহামে দুর্দান্ত এক ইনিংস ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষেই।
এজবাস্টনে সেদিনর ম্যাচটি ছিল অদ্ভুত। মাঠের এক প্রান্তের শেষ উইকেটে হয়েছিল ম্যাচটি, যেখান থেকে এক পাশের সীমানা ছিল ৩০ গজের মতো মাত্র। আরেক পাশে অবশ্য সীমানা স্বাভাবিকই ছিল। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে ৩৪১ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তান রান তাড়ায় অষ্টম উইকেট হারায় ২৪৯ রানে। ৯ নম্বরে নেমে সেদিন ৩০ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে জিতিয়ে দেন ফাহিম। নবম উইকেটে হাসান আলির (২৭*) সঙ্গে ৯৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন তিনি।
স্রেফ প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও ওই ইনিংসটি এখনও ফাহিমের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে।
“যদিও প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল, তার পরও এমন কিছু ইনিংস সবার আসে, যা ক্যারিয়ার বানিয়ে দেয়। ওই ইনিংসের আগে পাকিস্তানে ফাহিমকে কেউ চিনত না। ওই ইনিংসের পর অনেকের নজর পড়েছে। এরপরই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভিষেক হয় আমার। ওই ইনিংস তাই আমার হৃদয়ে সবসময়ই থাকবে। এরপর অনেক ইনিংস খেলেছি। তবে আমার এখন পর্যন্ত যে ক্যারিয়ার, তা গড়ে দিয়েছে ওই ইনিংসটিই।”