১৯৩ রানের পুঁজি নিয়ে পারল না ঢাকা ক্যাপিটালস, তাদেরকে টানা সপ্তম পরাজয়ের হতাশায় ডুবিয়ে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল সিলেট স্ট্রাইকার্স।
Published : 10 Jan 2025, 11:39 PM
ঘরের দলের জয়ের আশায় গ্যালারিতে উপচেপড়া ভিড় প্রতি ম্যাচেই। কিন্তু টানা দুই ম্যাচে সেই দর্শকদের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়েছে লাক্কাতুরার বাতাস। শুক্রবার ছুটির দিনেও গ্যালারিতে ছিল না তিল ধারনের ঠাঁই। এবার আর হতাশ হতে হলো না তাদের। তানজিম হাসানের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বাউন্ডারিতে যখন নিশ্চিত হলো সিলেটের জয়, দর্শকদের গগণবিদারী চিৎকার কাঁপিয়ে দিল যেন স্টেডিয়াম ছাপিয়ে পাশের চা বাগানসহ গোটা এলাকা।
লড়াইটা ছিল বিপিএলের হারের ভেলায় থাকা দুই দলের। একটি দল তাই প্রথম জয়ের তীর খুঁজে পেত নিশ্চিতভাবেই। ঢাকা ক্যাপিটালসের চ্যালেঞ্জিং স্কোরকে ছাড়িয়ে সেই স্বস্তির ঠিকানা পেল সিলেট স্ট্রাইকার্স।
প্রথম তিন ম্যাচে হেরে যাওয়া সিলেট পেল তিন উইকেটের জয়। টনা সপ্তম হারের হতাশায় ডুবল নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা ক্যাপিটালস।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুক্রবার ঢাকা ২০ ওভারে তোলে ১৯৩ রান। সিলেট জিতে যায় ৮ বল বাকি রেখে।
ঢাকার হয়ে রানে ফেরার দিনে ৪৩ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন লিটন কুমার দাস। সিলেটকে রান তাড়ায় এগিয়ে নেয় জাকির হাসানের ২৭বলে ৫৮ রান। পরে কার্যকর ইনিংস খেলেন রনি তালুকদার, জাকের আলি ও আরিফুল হক।
পরিবর্তনের মেলা ও শুরুর নাটকীয়তা
আগের দুই ম্যাচের ধারাবাহিকতায় এবারও একাদশ প্রায় ওলট-পালট করে ফেলে ঢাকা ক্যাপিটালস। সিলেট পর্বে প্রথম ম্যাচে তাদের একাদশে পরিবর্তন ছিল ৬টি, পরের ম্যাচে ৪টি। এবার এই ম্যাচে পরিবর্তন ৫টি।
ছোট্ট একটা চমক ছিল টসের সময়ই। রাতের শিশিরকে উপেক্ষা করে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় ঢাকা ক্যাপিটালস। তাদের ইনিংসের শুরুটাও ছিল উত্তেজনাপূর্ণ।
ম্যাচের চতুর্থ ডেলিভারিতে রাকিম কর্নওয়ালের শর্ট বল ছক্কায় উড়িয়ে দেন তানজিদ হাসান। পরের ডেলিভারি লেংথ বল পেয়ে একই চেষ্টা করেন বাঁহাতি ওপেনার। তবে এবার তিনি ধরা পড়ে যান মিড উইকেটে।
শতরানের জুটি
প্রথম চার ম্যাচের ব্যর্থতার পর ঢাকার পঞ্চম ম্যাচের একাদশে ছিলেন না লিটন কুমার দাস। এই ম্যাচে তিনি ফেরেন একাদশে। তার সঙ্গে জুটি গড়েন মৌসুমের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মুনিম শাহরিয়ার। দুজনের খেলার ধরন ছিল ভিন্ন, তবে বন্ধন ছিল পোক্ত।
ব্যাটে দীর্ঘ রান খরা থাকলেও লিটন এ দিন ছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাসী। চতুর্থ ওভারে তানজিম হাসানের টানা তিন বলে চার মেরে জানান দেন, আজকে তার নিজেকে ফিরে পাওয়ার দিন। ছন্দে থাকলে যেমন খেলেন, তেমন সব শট দেখা যায় তার ব্যাটে।
বাউন্ডারি আসে মুনিমের ব্যাট থেকেও। তবে কিছু ডেলিভারিতে তিনি রানও করতে পারেননি।
পাওয়ার প্লেতে ৫৬ রান তোলে ঢাকা। লিটনের রান তখন ১৫ বলে ৩৩, মুনিমের ১৭ বলে ১৭।
মুনিমের ব্যাট প্রথম ছক্কা আসে দশম ওভারে। আল আমিন হোসেনকে সোজা ব্যাটে লং অফ দিয়ে উড়িয়ে দেন তিনি।
লিটন ফিফটিতে পৌঁছে যান ২৯ বলেই। এরপর এগিয়ে যান আরও।
মুনিমের ফিফটি হতে লাগে ৪৬ বল। কিন্তু পরে ঝড় তুলে ঠিক পুষিয়ে দিতে পারেননি তিনি।
রাকিন কর্নওয়াল নিজের শেষ ওভারে তিন বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন দুজনকেই। জুটিতে ১২৯ রান আসে ৮৮ বলে।
শেষের ঝড়
শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে যেমন সমাপ্তি প্রত্যাশিত, সেটিই পেয়ে যায় ঢাকা। আগের দিন ৮২ রানে ইনিংস খেলা সাব্বির এবার খেলেন তিন ছক্কায় ১০ বলে ২৩ রানের ইনিংস। থিসারা পেরেরার ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১৮। শুভাম রাঞ্জানের বাউন্ডারিতে শেষ হয় ইনিংস।
শেষ চার ওভার থেকে আসে ৬৬ রান।
উল্টো অভিজ্ঞতা কর্নওয়ালের
বল হাতে প্রথম ওভারে উইকেট শিকার করা রাকিম কনওয়ার্ল ব্যাট হাতে আউট হয়ে যান ইনিংসের প্রথম বলেই। ঢাকাকে দারুণ শুরু এনে দেন মুস্তাফিজ।
দুর্দান্ত জাকির
জাকির হাসান তিনে নেমে মুস্তাফিজকে দৃষ্টিনন্দন এক ফ্লিক শটের ছক্কায় শুরু করেন। জর্জ মানজি দ্বিতীয় ওভারে আবু জায়েদকে দুটি চার মেরে আউট হয়ে যান। এই পেসারকেই দুটি ছক্কা মারার একটু পর বিদায় নেন অ্যারন জোন্সও। তবে জাকিরের ব্যাটে রানের জোয়ার বইতে থাকে।
ফারমানউল্লাহকে ছক্কার পর শুভাম রাঞ্জানের এক ওভারে চার বার বল বাউন্ডারিতে পাঠান জাকির। পাওয়ার প্লেতে সিলেট তুলে ফেলে ৭৪ রান।
৪৬ রানের জুটিতে নাহিদুল ইসলাম ছিলেন কেবল দর্শক হয়ে। তার ইনিংস থেমে যায় ১১ রানে।
জাকির ফিফটিতে পৌঁছে যান ২৫ বলে। আসরের চার ম্যাচে তার দ্বিতীয় ফিফটি এটি।
সম্মিলিত অবদান
জাকির আউট হন দশম ওভারে। ওই ওভার শেষে সিলেটের রান ১১২। তবে উইকেট পড়ে গেছে ৫টি।
সিলেটকে পথ হারাতে দেননি রনি তালুকদার ও জাকের আলি। ওপেনিং থেকে সরে ছয়ে নেমে ২০ বলে ৩০ করেন রনি। একটি করে ছক্কা ও চারে ১৭ বলে ২৪ রান করে জাকের আউট হয়ে যান ফারমানউল্লাহর ফুলটস বলে।
রান-বলের সমীকরণ তখন তুলনামূলক সহজ। ২৯ বলে লাগে ৩৪ রান। তবে উইকেট বাকি স্রেফ তিনটি। তানজিম হাসানকে নিয়ে সেই চ্যালেঞ্জে অনায়াসেই জিতে যান আরিফুল হক। ১৫ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন সিলেট অধিনায়ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ক্যাপিটালস : ২০ ওভারে ১৯৩/৬ (তালিটন ৭৩, তানজিদ ৬, মুনিম ৫২, সাব্বির ২৩, থিসারা ১৮, রিয়াজ ৪*, মোসাদ্দেক ৭, শুভাম ৪*; কর্নওয়াল ৪-০-২৭-৩, নাহিদুল ৪-০-৩১-০, তানজিম ৪-০-৪৪-১, টপলি ৪-০-৩১-১, আল আমিন ৪-০-৫৮-০)।
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৮.৪ ওভারে ১৯৫/৭ (কর্নওয়াল ০, মানজি ১১, জাকির ৫৮, জোন্স ১৪, নাহিদুল ১১, রনি ৩০, জাকের ২৪, আরিফল ২৮*, তানজিম ৮*; মুস্তাফিজ ৩.৪-০-৩১-১, আবু জায়েদ ৩-০-৩৯-১, ফারমানউল্লাহ ৪-০-৪৭-২, শুভাম ৩-০-৩৩-১, থিসারা ১-০-৫-০)।
ফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: জাকির হাসান।