প্রথম দুই ম্যাচে বাজে পারফরম্যান্সের পর তৃতীয় ম্যাচে একটু ভালো করেছেন আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার, তবে তিন ম্যাচেই জিতেছে তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্স।
Published : 04 Apr 2024, 12:01 PM
আট ওভারে ১০০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য- যে কোনো বোলারের জন্যই হতাশাময় পারফরম্যান্স। আর সেই বোলার যদি হন আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার, তাহলে তো সেই পারফরম্যান্স আলোচনার জন্ম দেয় আরও বেশি। মিচেল স্টার্কের পারফরম্যান্স এভাবেই চোখে লাগছিল সবার। তৃতীয় ম্যাচে অবশ্য একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান এই ফাস্ট বোলার। তবে নিজের বাজে শুরুর আক্ষেপ পাশে সরিয়ে স্টার্ক খুশি দলের দারুণ শুরুতে। তিন ম্যাচের সবকটিই যে জিতেছে তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্স।
২০১৫ আসরের পর এবারই প্রথম আইপিএল খেলছেন স্টার্ক। তাকে নিয়ে আলোচনার ঝড় শুরু নিলাম থেকেই। টেবিলের লড়াইয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে তাকে দলে পায় কলকাতা। এমন চোখধাঁধানো অঙ্কের পারিশ্রমিকের পাশাপাশি প্রবল একটি চাপও সঙ্গী হয় তার। তার প্রতিটি ডেলিভারিকেই যে টাকার অঙ্কে মাপা হবে, এটা তো জানা কথাই!
টুর্নামেন্টের শুরুতে সেই অঙ্ক মেলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন স্টার্ক। ৯ বছর পর আইপিএলে ফিরে প্রথম ম্যাচে চার ওভারে ৪৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি তিনি। পরের ম্যাচে তো রান দেওয়ার ফিফটিই করে ফেলেন (চার ওভারে ৫৩)। উইকেট তখনও অধরা।
অবশেষে তৃতীয় ম্যাচে এসে নাম ও পারিশ্রমিকের প্রতি কিছুটা সুবিচার করতে পারেন তিনি। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে বুধবার প্রথম স্পেলে দুটি উইকেট শিকার করেন তিনি তিন ওভারে ২৫ রান দিয়ে।
ম্যাচের পর খেলা সম্প্রচারকারী টিভিতে কথোপকথনে স্টার্ক বললেন, প্রথম দুই ম্যাচে ভাগ্যকে খুব একটা পাশে পাননি তিনি।
“টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আমাদের সবারই কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা প্রয়োজন। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ হয়নি কয়েকবার, দু-একটি ক্যাচ পড়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এমনই। এসব থেকে দ্রুত সামনে এগিয়ে যেতে হয়। কারণ একটির পর একটি ম্যাচ আসতেই থাকে।”
স্টার্ক ভালো না করলেও প্রথম দুই ম্যাচে জয় পায় তার দল কলকাতা এরপর বুধবারের ম্যাচে তো কলকাতার জন্য একরকম নিশ্চিত হয়ে যায় স্টার্করা বল হাতে নেওয়ার আগেই। ব্যাট হাতে সুনিল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলদের তাণ্ডবে ২০ ওভারে ২৭২ রানের পাহাড় গড়ে তারা।
এই ২৭২ রানও এই আসরের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর নয়। সপ্তাহখানেক আগেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদ করেছে ২০ ওভারে ২৭৭ রান। ওই ম্যাচেই রান তাড়ায় ২৪৬ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এছাড়াও মৌসুমের এই শুরুর দিকে এর মধ্যেই ১৯০ ছাড়ানো স্কোর হয়ে গেছে আরও ছয়টি।
বোলাদেরদের জন্য কাজ কতটা কঠিন এই সংস্করণে, নিজের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে সেটিও তুলে ধরলেন স্টার্ক। তিনি তৃপ্তির আড়াল খুঁজছেন দলের টানা তিন জয়ে।
“হ্যাঁ, অবশ্যই এরকম শুরু আমি চাইনি। তবে আমরা ম্যাচ জিতছি, এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিন ম্যাচের তিনটিই জিতেছি আমরা। আজকে আমরা ব্যাট-বলে বেশ ভালো ছিলাম বলেই মনে হয়।”
“টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কখনও কখনও খুব নিষ্ঠুর হতে পারে, বিশেষ করে বোলারদের জন্য। কিছু কিছু মাঠে এমন কিছু স্কোর আমরা দেখেছি… ভাগ্যের কিছুটা সহায়তা তাই মাঝেমধ্যে লাগেই (বোলারদের জন্য)। মৌসুমের শুরুতে তিন ম্যাচের সবকটি জিতেছি আমরা, আজকে ব্যাট-বলে বেশ নিখুঁত ছিলাম। ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো পাশে রাখলে, দলের শুরুটা তো দারুণ।”
এই ম্যাচের আগে আইপিএলে স্টার্কের সবশেষ উইকেট ছিল ২০১৫ সালে। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে বোল্ড করেছিলেন ডোয়াইন ব্রাভোকে। এরপর মৌসুমের পর মৌসুম নিজেকে এই টুর্নামেন্ট থেকে সরিয়ে রেখেছেন তিনি। কখনও খেলতে পারেননি চোটের কারণে।
এবার শিকার ধরা শুরু করেছেন তিনি দুই স্বদেশীকে ফিরিয়ে। প্রথমে আউট করেছেন অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মিচেল মার্শকে, পরে ফিরিয়েছেন অভিজ্ঞ ডেভিড ওয়ার্নারকে।
জাতীয় দলের দুই সতীর্থকে ফেরাতে পেরে তার খুশি যেন একটু বেশিই। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী তারকা চওড়া হাসিতে বললেন, “ওই দুজনকে মুঠোয় পুরতে পারাটা দারুণ…।”