বিপিএলে চার ম্যাচের সবকটি হারল ঢাকা ক্যাপিটালস, অপ্রতিরোধ্য পথচলায় রংপুর রাইডার্স পেল টানা পঞ্চম জয়ের স্বাদ।
Published : 07 Jan 2025, 04:36 PM
ওভারে চারটি ওয়াইড। ১০ বলের ওভার। গতি ১৪০ কিলোমিটারের কম। নাহিদ রানার প্রথম ওভার দেখে মনে হলো, শ্রান্তিতে শরীর চলছে না তার। ক্লান্তিটা বোঝা গেল পরেও, গতিতারকার বোলিংয়ের গতি এ দিন অনেক কম। কিন্তু প্রথম ওভারের হতাশা পেছনে ফেলে কার্যকর হওয়ার পথ ঠিকই বের করে নিলেন তিনি। দারুণ বোলিংয়ে সঙ্গ দিলেন রংপুরের অন্যরাও। আসরে শুরু থেকেই ম্লান হয়ে থাকা ঢাকা মিইয়ে গেল আরও।
নতুন কিছুর আশায় একাদশে ছয়-ছয়টি পরিবর্তন এনেছিল ঢাকা। কিন্তু পারফরম্যান্স এ দিন হলো তাদের আরও বাজে। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে পরপর চতুর্থ হারের তেতো স্বাদ দিয়ে রংপুর পেল টানা পঞ্চম জয়।
বিপিএলে মঙ্গলবার ঢাকা ক্যাপিটালসকে ৭ উইকেটে হারায় রংপুর রাইডার্স।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢাকার ইনিংস শেষ হয় ১১১ রানেই। এবারের বিপিএলে এখনও পর্যন্ত সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ এটি। রংপুর জিতে যায় ৪০ বল বাকি রেখেই।
ছয় পরিবর্তনের ঢাকা
তিনটি পরিবর্তনের কথা আগের দিনই নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন কোচ খালেদ মাহমুদ। একাদশে দেখা যায় পরিবর্তন আরও তিনটি। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে ঢাকা বাইরে রাখে স্টিভেন এসকিনাজি, শাহাদাত হোসেন, শুভাম রাঞ্জানে, চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা, নাজমুল ইসলাম অপু ও আবু জায়েদ চৌধুরিকে। টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন জেসন রয়, সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেন। একাদশে ফেরেন হাবিবুর রহমান সোহান, মুকিদুল ইসলাম ও আমির হামজা হোতাক।
আশার ভেলার সওয়ারি ঢাকা
একাদশে অনেক পরিবর্তনের পথ ধরে ঢাকার ব্যাটিং অর্ডারেও ওলটপালট হয় অনেক। এ দিনই সকালে সিলেটে পা রাখা জেসন রয়ের সঙ্গে ইনিংস শুরু করে একাদশে ফেরা হাবিবুর । নাহিদের করা দ্বিতীয় ওভার থেকে রান আসে ১২। পরের ওভারে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে দুটি চার মারেন হাবিবুর।
তিন ওভারে ঢাকা তোলে ২৮ রান।
অতি আগ্রাসনের বলি
আরও অনেকবারের মতোই আশার ঝিলিক দেখিয়ে নিভে যান হাবিবুর। আউট হওয়ার ধরনও পুরোনো। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং মানেই যে স্লগ করা নয়, সেটি হয়তো এখনও রপ্ত হয়নি তার। স্লগের চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। উইকেট মেডেন পান রংপরের পাকিস্তানি পেসার আকিফ জাভেদ।
পরের কয়েক ওভারে একই ধারা চলতে থাকে। দ্রুত রান যেমন উঠতে থাকে, উইকেটের পতনও হতে থাকে। সাইফের এক ওভারে তিনটি চার মারেন তানজিদ। শেখ মেহেদি হাসানকে চার ও ছক্কায় স্বাগত জানান জেসর রয়।
শেখ মেহেদি জবাব দেন ওই ওভারেই। স্কিড করা ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান রয় (১২ বলে ১৮)।
পরের ওভারে ইফতিখার আহমেদকে ছক্কা মেরে পরের বলেই বোল্ড তানজিদ (১৬ বলে ২০)।
পেছন পানে হাঁটা
উইকেট ৩টি হারালেও ঢাকার রান রেট তখনও প্রায় ৯। লিটন দাস, সাব্বির রহমানদের সুযোগ ছিল ভিতটাকে কাজে লাগিয়ে সৌধ গড়ে তোলার। কিন্তু ব্যর্থ তারা দুজন, পারেননি অন্যরাও।
রান খরার থাকা লিটনকে এ দিন চারে নামায় ঢাকা। বিপিএলে সবশেষ তিনি তিন নম্বরের নিচে খেলেছিলেন ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে সেদিন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষেই তিনি খেলেছিলেন ছয়ে। সেদিন যেমন পারেননি সফল হতে, এবারও পারেননি ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে। নাহিদ রানার শর্ট বলে আলতো শটে ক্যাচ দেন তিনি ১৩ বলে ৯ রান করে।
প্রায় দুই বছর পর টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেয়ে সাব্বির করতে পারেন ৭ বলে ২।
আগের ম্যাচে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা থিসারা পেরেরা এবার দেখেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। খুশদিল শাহর নীরিহ এক শর্ট বলে ঢাকা অধিনায়ক প্রথম বলেই ধরা পড়েন শর্ট মিড উইকেটে। ২০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ঢাকা।
এরপর মোসাদ্দেক হোসেন ও আলাউদ্দিন বাবু একটু লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু লম্বা সময় টিকতে পারেননি। ড্রাফটের বাইরে থেকে দলে যোগ দিয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মোসাদ্দেক এ ছক্কায় করে ১২ রান। আলাউদ্দিনকে ১৬ রানে ফিরিয়ে নাহিদ ধরেন তৃতীয় শিকার।
লোয়ার অর্ডারে সুবিধা করতে পারেননি কেউ। ঢাকার ইনিংস শেষ হয় ২১ বল আগেই।
নাহিদের তিন, অন্যদেরও দিন
৯ দিনের মধ্যে ৫ ম্যাচ, নাহিদের বোলিংয়ে ধকলের ছাপ স্পষ্ট। চার ওভারের মধ্যে চার-পাঁচটি ডেলিভারি ছাড়া সবকটির গতি ছিল ১৪০ কিলোমিটারের নিচে। তার পরও দারুণ বোলিংয়ে তিন উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার তিনিই।
আগের ম্যাচে রান দেওয়ার ফিফটি করা আকিফ জাভেদ এ দিন কৃপণ বোলিংয়ে নেন দুটি উইকেট। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দুই উইকেট খুশদিলেরও।
যৌথভাবে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ উইকেট এখন নাহিদ ও খুশদিলের।
ভালো বোলিংয়ে সঙ্গ দেন দলের অন্যরাও।
রংপুরের সহজ জয়
ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা ঠিক হয়ে যায় প্রথম ইনিংস শেষেই। রান তাড়ায় অ্যালেক্স হেলস ছাড়া রংপুরের অন্য কেউ খুব ঝড় তুলতে পারেননি। তবে জিততে বেগও পেতে হয়নি তাদের।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আজিজুল হাকিমের সামনে ছিল হ্যাটট্রিক শূন্য রানে আউটের শঙ্কা। অবশেষে রানের দেখা পান তিনি। তবে অস্বস্তিময় উপস্থিতি শেষে থেমে যান ১৪ বলে ৫ রানেই। ফর্মে থাকা সাইফ হাসান এ দিন পারেননি ভালো করতে (১৫ বলে ১৩)।
তবে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরি অ্যালেক্স হেলস ছিলেন আপন রূপেই। ২৭ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন ইংলিশ ওপেনার। এরপর ইফতিখার আহমেদ ও খুশদিল শাহ শেষ করেন বাকি কাজ। ১৩ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন খুশদিল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ক্যাপিটালস: ১৬.৩ ওভারে ১১১ (হাবিবুর ১৪, রয় ১৮, তানজিদ ২০, লিটন ৯, সাব্বির ৩, থিসারা ০, মোসাদ্দেক ১২, আলাউদ্দিন ১৬, হামজা ০, মুকিদুল ২*, মুস্তাফিজ ১; আকিফ ৩.৩-১-১৩-২, নাহিদ ৪-০-২১-৩, সাইফ ২-০-২৩-০, শেখ মেহেদি ২-০-১৫-১, ইফতিখার ১-০-৮-১, খুশদিল ২-০-১৪-২, কামরুল ২-০-১১-১)।
রংপুর রাইডার্স: ১৩.২ ওভারে ১১৩/১ (আজিজুল ৫, হেলস ৪৪, সাইফ ১৩, ইফতিখার ১৩*, খুশদিল ২৭*; হামজা ৩-০-২৩-০, মুস্তাফিজ ৪-১-২৩-১, মুকিদুল ৩.২-০-২০-০, আলাউদ্দিন ২-০-৩৩-১, মোসাদ্দেক ১-০-১৩-১)।
ফল: রংপুর রাইডার্স ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাহিদ রানা।