ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪ হাজার ১৮০ রানের মধ্যে অর্ধেকের বেশি রান দৌড়েই নিয়েছেন ভিরাট কোহলি, চার-ছক্কার চেয়ে সিঙ্গল বেশি নেওয়াতেই গর্ব খুঁজে পান বলে জানালেন তিনি।
Published : 05 Mar 2025, 12:48 PM
পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে এসেছে স্রেফ ২৮ রান। বাকি সব রান দৌড়েই নিয়েছেন ভিরাট কোহলি। ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন উইকেটে স্ট্রাইক রেট তবু ৯০। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৪ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে আসা রান মোটে ২০। এবারও দুই পায়ের রথই সম্বল কোহলির।
শুধু এই দুই ইনিংসেই নয়, ক্যারিয়ারজুড়েই তার ক্যারিয়ারের প্রতিচ্ছবি এটি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রান তাড়ার দুটি মাস্টারক্লাস মেলে ধরার পর কোহলি বললেন, চার-ছক্কার চেয়ে দৌড়ে রান নেওয়াতেই বেশি গর্ব খুঁজে পান তিনি।
গত কয়েক মাসের পারফরম্যান্সে কেউ যদি ভুলে গিয়ে থাকেন যে ওয়ানডে ক্রিকেটের কোহলি আসলে কেমন, তাদেরকে আরও একবার তা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিখুঁত রান তাড়ায় অপরাজিত সেঞ্চুরি করে মাঠ ছেড়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে জয় সঙ্গে নিয়ে ফিরতে পারেননি বটে। তবে আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংসে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে তিনিই ম্যাচের সেরা।
দুবাইয়ে মঙ্গলবার ৮৪ রানের ইনিংসটিতে কেবল পাঁচটি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি। পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে সঞ্চালক হার্শা ভোগলে এই প্রসঙ্গ তুলতেই কোহলি মনে করিয়ে দিলেন সেঞ্চুরির ইনিংসটির কথাও।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এবার দুবাইয়ের উইকেট ব্যাটসম্যানদের নানা রকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। ভারতের নায়কও সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিয়েছেন অভিজ্ঞতা আর নিবেদনের ঝাঁপি মেলে ধরে।
“পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরির ম্যাচেও একইরকম ছিল। সম্ভবত সাতটি চার মেরে ছিলাম সেদিন। আমার কাছে ব্যাপারটি হলো, কন্ডিশন বোঝা, নিজের খেলা সেভাবে প্রস্তুত করা এবং প্রান্ত বদলাতে থাকা। এই ধরনের উইকেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জুটি গড়া। সেই ম্যাচে এবং আজকে আমার একমাত্র চেষ্টাই ছিল জুটি গড়া।”
“পিচই আমাকে বলে দেয়, কীভাবে খেলতে হবে। এরপর আমি সজাগ হয়ে যাই এবং সেভাবেই খেলতে চাই।”
ইনিংসগুলোর কোন ব্যাপারটি নিজের কাছে তৃপ্তিদায়ক, এই প্রশ্নে কোহলি বললেন, ২২ গজে ছুটে রান নেওয়াতেই তার মূল আনন্দ।
“আমার টাইমিং, ক্রিজে আমার স্থৈর্য…খুব মরিয়া ছিলাম না ক্রিজে নেমে, এক-দুই রান করে নিয়েই খুশি ছিলাম। ফাঁকা জায়গায় বল পাঠিয়ে সিঙ্গল নেওয়ায় যখন গর্ব খুঁজে নেয় কেউ, তখনই বুঝে নিতে যে, ভালো ক্রিকেট খেলছি। এভাবেই বড় জুটির অংশ হওয়া যায়, স্নায়ুর চাপকে থিতু করা যায় এবং রান তাড়ার পথে এগিয়ে যায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ও আজকে এটিই আমার কাছে ছিল সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক।”
তার ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানও ফুটিয়ে তুলছে এই ছবি। ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৪ হাজার ১৮০ রানের মধ্যে বাউন্ডারি থেকে রান করেছেন তিনি ৬ হাজার ৬১২। বাকি ৭ হাজার ৯৬৮ রান এসেছে দৌড়েই।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসটায় এক সময় সেঞ্চুরি মনে হচ্ছিল তার জন্য স্রেফ সময়ের ব্যাপার। এই ধরনের ইনিংসগুলোয় বেশির ভাগ সময়ই তিনি শতরানে পৌঁছে যান অনায়াসে। কিন্তু এ দিন অ্যাডাম জ্যাম্পাকে তুলে মারার চেষ্টায় ধরা পড়েন লং অনে।
মৃদ হেসে কোহলি বললেন, পরিকল্পনায় ভুল না থাকলেও বাস্তবায়নে একটু গড়বড় হয়েছে এ দিন।
“যে সময়টায় আমি আউট হয়ে যাই, তখন পরিকল্পনা ছিল দ্রুত আরও ২০ রান তুলে এরপর গোটা দুই ওভারের মধ্যে খেলা শেষ করার। সাধারণত এই ধরন অনুসরণ করেই আমি ইনিংস এগিয়ে নেই। তবে কখনও কখনও চাওয়ামতো সবকিছু করা হয়ে ওঠে না।”
তাই বলে শতরান না হওয়ায় আক্ষেপ নেই ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ানের। অসংখ্য রেকর্ড-কীর্তির নায়ক বললেন, এসব মাইলফলক তাকে আর ভাবায় না।
“এই ব্যাপারগুলোয় কখনোই মনোযোগ দেই না আমি। যখন কেউ মাইলফলকের কথা ভাবে না, এসব তখন এমনিই ধরা দেয় জয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে। আমার কাছে ব্যাপারটি হলো, নিজের কাজে গর্ব খুঁজে নেওয়া ও দলের জন্য কাজটি করা।”
“তিন অঙ্কে যদি যেতে পারি, দারুণ ব্যাপার। না পারলে সমস্যা নেই, দল জিতলেই হলো, সুখী ড্রেসিং রুম। পেছন ফিরে তাকিয়ে, মাঠে যা হলো, সেটা নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকা, এরপর মাথা নিচু করে আবার কঠোর পরিশ্রম করে যাওয়া এবং এরপর সবকিছু আবার শুরু থেকেই শুরু করা। ক্যারিয়ারজুড়ে এটিই করে এসেছি। আমার জন্য, ওই ব্যাপারগুলির (মাইলফলক) মূল্য এখন আর নেই। আমার কাছে ব্যাপারটি হলো সামনে এগিয়ে আসা এবং দলের জন্য কাজটুকু করা।”