শেষ টি-টোয়েন্টিতে টর্নেডো ব্যাটিংয়ে একগাদা রেকর্ড গড়ে বিশাল জয়ে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল ভারত।
Published : 12 Oct 2024, 11:50 PM
বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করে দিল ভারত। শেষ টি-টোয়েন্টিতে সফরকারীদের ১৩৩ রানে হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল স্বাগতিক দল।
হায়দরাবাদে শনিবার স্যাঞ্জু স্যামসনের অসাধারণ সেঞ্চুরি ও সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের দুর্দান্ত ইনিংসে ২০ ওভারে ২৯৭ রান তোলে ভারত।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ও বিশ ওভারের স্বীকৃত ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর এটি।
১১ চার ও ৮ ছক্কায় ৪৭ বলে ১১১ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস খেলেন স্যামসন। ইনিংসটির পথে ৪০ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তিনি। ভারতের হয়ে যা দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি, এই সংস্করণে বাংলাদেশের বিপক্ষেও দ্বিতীয় দ্রুততম শতরান।
অধিনায়ক সুরিয়াকুমারের ব্যাট থেকে আসে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ৩৫ বলে ৭৫।
এই রান তাড়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের ছিল না। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে রান করতে পারে তারা ১৬৪।
রানের হিসাবে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরাজয় এটিই।
ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বল হাতে একটি উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ৯ বলে ৮ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের ইনিংসে রানের জোয়ার বইতে থাকে ইনিংসের শুরু থেকেই। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারের তাসকিন আহমেদকে টানা চার বলে বাউন্ডারি মারেন স্যামসন।
তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে তানজিম আহমেদের শিকার হয়ে ফেরেন আভিশেক শার্মা। তিনে নেমে ওই ওভারে একটি করে ছক্কা ও চার মারেন সুরিয়াকুমার।
এরপর দারুণ সব ক্রিকেটীয় শটে চার-ছক্কার ঝড় বইয়ে দেন স্যামসন। রানের প্লাবন বইতে থাকে দুই প্রান্ত থেকেই।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ভারত তোলে ৮২ রান।
পাওয়ার প্লে শেষে রিশাদ হোসেনকে তুলাধুনা করে ছাড়েন স্যামসন। তরুণ এই লেগ স্পিনারের প্রথম ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন স্যামসন।
নিজের পরের ওভারে তো বল ফেলারই জায়গা পাচ্ছিলেন না রিশাদ। ওভারের প্রথম বলে রান হয়নি। পরে পাঁচ বলেই টানা ছক্কা মারেন স্যামসন।
বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে এক ওভারে পাঁচ ছক্কা হজম করেছিলেন আগে নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসান।
২২ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর আরও দ্রুততায় ছুটতে থাকেন স্যামসন। পরের পঞ্চাশ করতে আর কেবল ১৮ বল লাগে তার।
শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজের বলে ছক্কার চেষ্টায় থামে স্যামসনের ইনিংস।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৭৩ রান আসে কেবল ৭০ বল খেলেই। এই সংস্করণে ভারতের সেরা জুটি ছুঁতে পারেননি তারা কেবল তিন রানের জন্য।
বিদায়ী ম্যাচে সুরিয়াকুমারের উইকেট উপহার পান মাহমুদউল্লাহ।
১০ ওভার শেষে ভারতের রান ছিল ১৫২। একটা পর্যায়ে তিনশ রান ছাড়িয়ে যাওয়া মনে হচ্ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার।
চতুর্থ উইকেটে কেবল ৪.২ ওভারে ৭০ রানের জুটি গড়েন হার্দিক পান্ডিয়া ও রিয়ান পারাগ। চার ছক্কায় ১৩ বলে ৩৪ করে ফেরেন পারাগ। চারটি করে চার ও ছক্কায় পান্ডিয়ার ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ৪৭।
শেষ বলে ছক্কা মেরে ইনিংস শেষ করেন রিঙ্কু সিং।
বাংলাদেশের সব বোলারই ছিলেন খরুচে। তবে চার ওভারে ৬৬ রান খরচ করে সবাইকে ছাড়িয়ে যান তানজিম হাসান। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে খরুচে বোলিং এটিই।
ভারতের রান ছিল বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার অনেক বাইরে। দেখার ছিল, কতদূর তারা যেতে পারে। সেখানেও খুব দারুণ কিছু হয়নি।
রান তাড়ায় প্রথম বলেই পারভেজ হোসেন ইমনকে হারায় বাংলাদেশ। একাদশে ফেরা তাসজিদ হাসান ফেরেন ১২ বলে ১৫ রান করে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত একটি করে ছক্কা ও চারে ১১ বলে ১৪ করেই বিদায় নেন।
চারে নেমে আট চারে ২৫ বলে ৪২ করেন লিটন কুমার দাস।
এরপর দলকে যা একটু টেনে নেন কেবল তাওহিদ হৃদয়। আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া ব্যাটসম্যান এবার অপরাজিত থাকেন ৪২ বলে ৬৩ রান করে।
আর কোনো ব্যাটসম্যান বলার মতো কিছু করতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।
টেস্ট সিরিজে বাজেভাবে হারার পর টি-টোয়েন্টিতে শোচনীয়ভাবে হেরে ভুলে যাওয়ার মতো ভারত সফর শেষ করল বাংলাদেশ।
সেঞচুরি করে ম্যাচের সেরা স্যামসন। ২২২.৬৪ স্ট্রাইক রেটে ১১৮ রান করার পাশাপাশি একটি উইকেট ও পাঁচটি ক্যাচ নিয়ে সিরিজের সেরা হার্দিক পান্ডিয়া।
বাংলাদেশের পরের চ্যালেঞ্জ দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। দুই ম্যাচের সিরিজ শুরু ২১ অক্টোবর। ভারত তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে, যেটি শুরু আগামী বুধবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ২৯৭/৬ (স্যামসন ১১১, আভিশেক ৪, সুরিয়াকুমার ৭৫, পারাগ ৩৪, পান্ডিয়া ৪৭, রিঙ্কু ৮*, নিতিশ ০, ওয়াশিংটন ১*; মেহেদি ৪-০-৪৫-০, তাসকিন ৪-০-৫১-১, তানজিম ৪-০-৬৬-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৫২-১, রিশাদ ২-০-৪৬-০, মাহমুদউল্লাহ ২-০-২৬-১)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৪/৭ (ইমন ০, তানজিদ ১৫, শান্ত ১৪, লিটন ৪২, হৃদয় ৬৩*, মাহমুদউল্লাহ ৮, মেহেদি ৩, রিশাদ ০, তানজিম ৮*; মায়াঙ্ক ৪-০-৩২-২, পান্ডিয়া ৩-০-৩২-০, ওয়াশিংটন ১-০-৪-১, নিতিশ ৩-০-৩১-১, বিষ্ণই ৪-১-৩০-৩, ভারুন ৪-০-২৩-০, আভিশেক ১-০-৮-০)
ফল: ভারত ১৩৩ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ভারত ৩-০তে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাঞ্জু স্যামসন।
ম্যান অব দা সিরিজ: হার্দিক পান্ডিয়া।