বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে বাংলাদেশকে ১৯ রানে হারাল ভারত।
Published : 30 Apr 2024, 08:38 PM
ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার পুরোনো চিত্র ফুটে উঠল আরও একবার। লড়াই যা একটু করলেন কেবল মুর্শিদা খাতুন। এই ওপেনার ১৯ ওভার টিকে থাকলেও পেলেন না যোগ্য একজন সঙ্গী। বাংলাদেশও তাই পেল না লড়ার মতো রান। পরে দায়ালান হেমলাথার ঝড়ে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ জিতে আরও এগিয়ে গেল ভারত।
পাঁচম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ১৯ রানে হারিয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
যথারীতি ব্যাটিংই আরও একবার পিছিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সতীর্থদের ব্যর্থতায় একাই লড়াই করেছিলেন নিগার সুলতানা। মঙ্গলবার তার ব্যর্থতার দিনে দায়িত্ব নেন মুর্শিদা। ৪৬ রানের ইনিংস খেলে তিনি দলকে নিয়ে যান ১১৯ রান পর্যন্ত।
ভারতের রান তাড়ায় ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে নামে বৃষ্টি। খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ১ উইকেটে ৪৭ রান করে সফরকারীরা। পরে আর খেলা শুরু করা যায়নি। ভারত তখন অনেক এগিয়ে।
ইয়াস্তিকা ভাটিয়ার চোটে সুযোগ পাওয়া হেমলাথা ২৪ বলে করেন ৪১ রান। ৫ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে।
ম্যাচের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল বেশ আশা জাগানিয়া। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইতিবাচক শুরু করেন দুই ওপেনার। দ্বিতীয় বলে দারুণ পুল শটে চার মারেন দিলারা আক্তার। দুই বল পর ফ্লিক করে একই ঠিকানায় পাঠান তরুণ ওপেনার।
তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দিলারা। দ্বিতীয় ওভারে দিপ্তি শার্মার বলে স্লগ সুইপ করে সীমানার কাছে ধরা পড়েন তিনি। পরের ওভারে বিপদ বাড়তে পারত আরও। রেনুকার বলে মুর্শিদার ক্যাচ ছেড়ে দেন হারমানপ্রিত কৌর।
৬ রানে জীবন পেয়ে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান বাঁহাতি ওপেনার। সোবহানা মোস্তারির সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ২৩ বলে ২৮ রানের জুটি গড়েন তিনি। যেখানে সোবহানাই ছিলেন অগ্রণী।
সবশেষ চার ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ সোবহানা এ দিন দ্বিতীয় বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে মারেন বাউন্ডারি। পঞ্চম ওভারে পুজা ভাস্ত্রাকারের বলে মারেন আরও দুটি চার। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে শ্রেয়াঙ্কা পাতিলকে বাউন্ডারি দিয়েই স্বাগত জানান তিনি।
তবে দারুণ কিছুর আভাস দিয়েও বেশি দূর যেতে পারেননি ২২ বছর বয়সী ব্যাটার। শ্রেয়াঙ্কার ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারি সুইপ করার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন ১৫ বলে ১৯ রান করে।
এরপর দায়িত্ব নেন মুর্শিদা। সপ্তম ওভারে পঞ্চাশ পূর্ণ করে বাংলাদেশ। তখনও পর্যন্ত খারাপ ছিল না দলের অবস্থা।
দশম ওভারে ঘটে বিপত্তি। পরপর দুই বলে এলবিডব্লিউ হন নিগার সুলতানা ও ফাহিমা খাতুন। রাধা ইয়াদাভের হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারি প্যাডেল সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাটে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। আর্ম ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ হন ফাহিমা।
পরের ওভারে সুলতানা খাতুনও ফিরে গেলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ওই ওভার শেষে নামে বৃষ্টি। প্রায় ৫৫ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। তবে তখন কোনো ওভার কমানো হয়নি।
পুনরায় খেলা শুরু হলে চাপ সামাল দিয়ে দলকে এগিয়ে নেন মুর্শিদা ও রিতু মনি। দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে গড়ে তোলেন ৩১ বলে ৩২ রানের জুটি। ষোড়শ ওভারে পূর্ণ হয় বাংলাদেশের একশ রান।
শেষটা প্রত্যাশামাফিক করতে পারেনি স্বাগতিকরা। ইনিংসের শেষ ৫ ওভারে স্রেফ ২২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় তারা।
স্বর্ণা আক্তারের জায়গায় এই ম্যাচের একাদশে সুযোগ পাওয়া রিতু খেলেন ১৮ বলে ২০ রানের ইনিংস।
শেষ ওভারে ফ্রি হিট বলে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন মুর্শিদা। ৪৯ বলের ইনিংসে ৫টি চার মারেন তিনি।
ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রাধা। ১৪ রানে দিপ্তির শিকার ২টি।
রান তাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খায় সফরকারীরা। মারুফা আক্তারের দ্বিতীয় বলে আউট হন শেফালি ভার্মা। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন নিগার। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার শূন্য রানে ফেরেন আগ্রাসী এই ওপেনার। সব মিলিয়ে সপ্তম, যা ভারতের সর্বোচ্চ।
তবে সফরকারীদের চাপে পড়তে দেননি তিন নম্বরে নামা হেমলাথা। তার ঝড়েই এগিয়ে যায় ভারত।
বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে সুলতানার বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন হেমলাথা। নাহিদা আক্তারের বলে ছক্কার পর মারেন বাউন্ডারি। পরে মারুফা আক্তারকেও চার মারেন তিনি।
অন্য প্রান্তে ৭ বলে ৫ রানে অপরাজিত থাকেন ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা।
সিরিজ জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখতে একই মাঠে বৃহস্পতিবার তৃতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১১৯ (দিলারা ১০, মুর্শিদা ৪৬, সোবহানা ১৯, নিগার ৬, ফাহিমা ০, সুলতানা ৪, রিতু ২০, রাবেয়া ৫, নাহিদা ১, মারুফা ০*, ফারিহা ০; রেনুকা ৪-০-৪০-০, দিপ্তি ৪-০-১৪-২, পুজা ৪-০-২১-১, শ্রেয়াঙ্কা ৪-০-২৪-২, রাধা ৪-০-১৯-৩)
ভারত: ৫.২ ওভারে ৪৭/১ (স্মৃতি ৫*, শেফালি ০, হেমলাথা ৪১*; মারুফা ২.২-০-১১-১, সুলতানা ১-০-১২-০, ফারিহা ১-০-১১-০, নাহিদা ১-০-১৩-০)
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ভারত ১৯ রানে জয়ী
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ভারত ২-০তে এগিয়ে
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: দায়ালান হেমলাথা