বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি
জাসপ্রিত বুমরাহর আগুনে বোলিংয়ে পার্থ টেস্টে একশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় অস্ট্রেলিয়া।
Published : 22 Nov 2024, 04:20 PM
দিনের শেষ বল মিচেল স্টার্কের ব্যাটে লেগে অল্পের জন্য ফিরতি ক্যাচ গেল না বোলার জাসপ্রিত বুমরাহর হাতে। স্টার্কের মুখে তখন চওড়া হাসি। তবে অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুমে কারও মুখে হাসি থাকার কথা নয়! পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে ভারতকে দেড়শর মধ্যে থামিয়ে দেওয়ার স্বস্তি যে তাদের থাকেনি ব্যাটিংয়ে নেমে। জাসপ্রিত বুমরাহর আগুনে বোলিংয়ে একশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় এখন স্বাগতিকরা।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন দাপট দেখালেন দুই দলের বোলাররাই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, পেসাররা। সব মিলিয়ে পার্থে শুক্রবার পড়ল ১৭ উইকেট, সবকটিই পেসারদের ঝুলিতে। ১৯৫২ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনো টেস্টের প্রথম দিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পতনের নজির এটিই।
ভারতকে ১৫০ রানে গুটিয়ে দেওয়া অস্ট্রেলিয়া দিন শেষ করেছে ৭ উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে। এখনও ৮৩ রানে পিছিয়ে আছে তারা।
অপ্টাস স্টেডিয়ামের উইকেটে ঘাস আছে খানিকটা। বাড়তি বাউন্সের সঙ্গে মুভমেন্ট মিলেছে দিনজুড়েই। দিনের শেষ দিকে তা আরও বেড়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম তিনটিসহ ৪ উইকেট নিয়েছেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বুমরাহ, ১০ ওভারে ১৭ রান দিয়ে। মোহাম্মদ সিরাজের শিকার দুটি, অভিষিক্ত হার্শিত রানার একটি।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন জশ হেইজেলউড। স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও মিচেল মার্শের প্রাপ্তি দুটি করে।
ভারতকে অল্পে থামানোর আনন্দ উবে যেতে বেশি সময় লাগেনি অস্ট্রেলিয়ার। তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়ে দলে আসা নতুন টেস্ট ওপেনার ন্যাথান ম্যাকসুয়েনি ব্যর্থ হন প্রথম সুযোগে। বাউন্ডারি দিয়ে যাত্রা শুরুর পর ১০ রান করে তিনি বিদায় নেন বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। ভারত এই সাফল্য পায় রিভিউ নিয়ে।
এক বল পর বুমরাহ উইকেট পেতে পারতেন আরেকটি। কিন্তু স্লিপে মার্নাস লাবুশেনের সহজ ক্যাচ ফেলেন ভিরাট কোহলি। খানিক পর আর ভুল করেননি তিনি। তার হাতে ক্যাচ দিয়ে বুমরাহর দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন উসমান খাওয়াজা।
পরের বলেই শূন্য রানে এলবিডব্লিউ হন স্টিভেন স্মিথ। টেস্ট ক্রিকেটে বুমরাহর আগে স্মিথকে ‘গোল্ডেন ডাক’ এর তেতো স্বাদ দিতে পেরেছিলেন কেবল একজনই- ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেল স্টেইন।
দুটি চার মেরে বিদায় নেন ট্রাভিস হেড। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে প্রথম উইকেটের দেখা পান হার্শিত।
টিকতে পারেননি মিচেল মার্শও। সিরাজের বলে তৃতীয় স্লিপে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন লোকেশ রাহুল। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৫ উইকেটে ৩৮।
১৯৮০ সালের পর ঘরের মাঠে কোনো টেস্টে ৪০ রানের আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ৫ উইকেট হারানোর মাত্র দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ২০১৬ সালে হোবার্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল তারা।
শুরুতেই জীবন পাওয়া লাবুশেনের প্রথম রানের দেখা পেতে লাগে ২৪ বল। অনেকটা সময় এক প্রান্ত আগলে রেখে ৫২ বলে ২ রান করে তিনি ফেরেন সিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে। সিম মুভমেন্টে এলবিডব্লিউ হওয়া ব্যাটসম্যান রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি।
লাবুশেনের এই ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ৩.৮৪। অন্তত ৫০ বল খেলা ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেট এটিই। এক্ষেত্রে আগের সর্বনিম্ন স্ট্রাইক রেট ছিল স্টিভ ও'কিফের ৪.০৮। ২০১৬ সালে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ইনিংসে ৯৮ বলে ৪ রান করেছিলেন তিনি।
কামিন্সকে উইকেটকিপারের ক্যাচ বানিয়ে চতুর্থ শিকার ধরেন বুমরাহ। ৫৯ রানে ৭ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া কোনোমতে কাটিয়ে দেয় দিনের শেষ দুই ওভার।
দিনের শেষটা ভালো হলেও, শুরুটা বিভীষিকাময় ছিল ভারতের। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে দুই সেশনেই গুটিয়ে যায় সফরকারীরা।
সপ্তম উইকেটে রিশাভ পান্ত ও নিতিশ কুমার রেড্ডির ৪৮ রানের জুটি ছাড়া আর কোনো জুটি ২০ পর্যন্তও যেতে পারেনি। অভিষিক্ত নিতিশের ৬ চার ও এক ছক্কায় ৫৯ বলে ৪১ রান তাদের সর্বোচ্চ ইনিংস। পান্ত ৩ চার ও এক ছক্কায় ৭৮ বলে করেন ৩৭ রান।
ইয়াসাসভি জয়সওয়াল ও দেবদুত পাডিক্কাল ফেরেন শূন্য রানে। পড়তি ফর্মে সমালোচনার মুখে থাকা কোহলি যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। শুরুটা ভালো করে, লম্বা সময় উইকেটে কাটিয়ে ৭৪ বলে ২৬ রানে থামেন লোকেশ রাহুল। যদিও তাকে দেওয়া তৃতীয় আম্পায়ারের আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে বেশ।
ধ্রুব জুরেল ও ওয়াশিংটন সুন্দারের দ্রুত বিদায়ে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ৭৩। সেখান থেকে পান্ত ও নিতিশের জুটিতে একশ ছাড়াতে পারে সফরকারীরা।
ব্যাটিংয়ের হতাশা পেছনে ফেলে, বুমরাহর হাত ধরে বোলিংয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল অস্ট্রেলিয়ায় নিজেদের সবশেষ দুটি টেস্ট সিরিজ জয়ী ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৯.৪ ওভারে ১৫০ (জয়সওয়াল ০, রাহুল ২৬, পাডিক্কাল ০, কোহলি ৫, পান্ত ৩৭, জুরেল ১১, ওয়াশিংটন ৪, নিতিশ ৪১, হার্শিত ৭, বুমরাহ ৮, সিরাজ ০*; স্টার্ক ১১-৩-১৪-২, হেইজেলউড ১৩-৫-২৯-৪, কামিন্স ১৫.৪-২-৬৭-২, লায়ন ৫-১-২৩-০, মার্শ ৫-১-১২-২)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২৭ ওভারে ৬৭/৭ (খাওয়াজা ৮, ম্যাকসুয়েনি ১০, লাবুশেন ২, স্মিথ ০, হেড ১১, মার্শ ৬, কেয়ারি ১৯*, কামিন্স ৩, স্টার্ক ৬*; বুমরাহ ১০-৩-১৭-৪, সিরাজ ৯-৬-১৭-২, হার্শিত ৮-১-৩৩-১)