প্রথমে কোচিং পেশায় যাওয়ার কথা ভাবলেও, ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ভাবনায় রেখে আবার খেলা শুরু করতে রাজি হয়েছেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক।
Published : 21 Mar 2025, 11:23 PM
আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী আইন লঙ্ঘনের দায়ে ব্রেন্ডন টেইলরের সাড়ে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে আগামী জুলাইয়ে। এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে চান জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক। প্রথমে কোচিং পেশায় যাওয়ার কথা ভাবলেও, ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ভাবনায় রেখে আবার খেলা শুরু করতে রাজি হয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী এই কিপার-ব্যাটসম্যান।
২০২৭ সালের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায় যৌথভাবে হবে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় আসরে খেলার জন্য টেইলরকে রাজি করিয়েছেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিভমোর মাকোনি। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৩৪ টেস্ট, ২০৫ ওয়ানডে ও ৪৫ টি-টোয়েন্টি খেলা টেইলর আগামী ২৫ জুলাই ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর সঙ্গে আলাপে তিনি ধরলেন তার ক্রিকেটে ফেরার ভাবনা।
“আমি এখনও খেলতে চাই এবং আমার বিশ্বাস, খেলোয়াড় হিসেবে আমি প্রভাব রাখতে পারব। গিভমোর আমাকে অনেক সমর্থন করছেন। তিনি আপাতত আমার কোচিং ভূমিকা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘তুমি কি ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলতে পারবে এবং নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারবে?’ তখন (বিশ্বকাপে) আমার বয়স হবে ৪১ বছর।”
আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিধিমালার চারটি ধারা ভাঙার দায়ে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নিষিদ্ধ করা হয় টেইলরকে। সঙ্গে আলাদাভাবে একটি অ্যান্টি-ডোপিং ধারাও ভাঙেন তিনি।
ওই সময়ে টেইলর দাবি করেন, স্পন্সরশিপ ও জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা চালু করার বিষয়ে আলোচনার জন্য ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাকে ভারতে ডেকেছিল এক ব্যবসায়ী। সেখানে ‘ব্ল্যাকমেইল করে’ তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি তিনি আইসিসিকে জানান চার মাস পর।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। এর চার মাস পরই আসে তার নিষেধাজ্ঞার খবর। তখন টেইলর দাবি করেন, প্রস্তাব পেলেও তিনি কোনো ফিক্সিংয়ে জড়িত হননি।
নিষেধাজ্ঞার শর্ত অনুযায়ী, এই সময়ে কোনো স্বীকৃত ক্রিকেট খেলতে পারবেন না বা ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারবেন না টেইলর। তাই হারারেতে একটি অভিজাত স্কুলের সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছেন তিনি।
দুই দশকের বেশি সময় পর আগামী মে মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলবে জিম্বাবুয়ে। সেই ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই খেলতে পারবেন না টেইলর। অগাস্টে ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ফেরার আশা তার।
এরপর সেপ্টেম্বরে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আফ্রিকার আঞ্চলিক বাছাইপর্ব হবে জিম্বাবুয়েতে। এই সংস্করণে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলতে তাকে আরও কিছু কাজ করতে হবে বলে মনে করেন টেইলর।
“নিজেকে অবশ্যই টেস্ট ও ওয়ানডেতে দেখছি আমি। টি-টোয়েন্টি এমন কিছু, যার জন্য সত্যিই নিজের আরও উন্নতির চেষ্টা করতে হবে। তবে এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আমি।”
জিম্বাবুয়ের হয়ে টেইলের ক্যারিয়ার দারুণ সমৃদ্ধ। ওয়ানডেতে ৩৫.৫৫ গড়ে তার রান ৬ হাজার ৬৮৪, দলটির হয়ে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই সংস্করণে তার ১১ সেঞ্চুরি দেশটির রেকর্ড। তাদের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডও তার (১৭টি)।
টেস্টে ৩৬.২৫ গড়ে তার রান ২ হাজার ৩২০, জিম্বাবুয়ের হয়ে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ। এই সংস্করণে তার ৬ সেঞ্চুরির পাঁচটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে। টি-টোয়েন্টিতে তার রান ৯৩৪।
২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিন সংস্করণ মিলিয়ে টেইলর জিম্বাবুয়েকে নেতৃত্ব দেন ৭১ ম্যাচে। প্রথম দফায় জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ছিলেন ২০১১ এর মাঝমাঝি থেকে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর তিনি জাতীয় দল থেকে সরে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট দল নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে তিন বছরের কোলপ্যাক চুক্তি করে। পরে ২০১৭ সালে আবার ফেরেন জাতীয় দলে।
৬ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ও এক ফিফটিতে ৪৩৩ রান করে ২০১৫ বিশ্বকাপের চতুর্থ সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি। এরপর আর বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। গত দুটি আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় তারা।
টেইলর অধীর হয়ে তাকিয়ে আছেন ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় আগামী বিশ্বকাপে।
“ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলা বিশেষ কিছু। গত কয়েকটি বিশ্বকাপে আমাদের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই আশা করি, আমরা সবকিছু বদলে দিতে পারব।”