২০২১ সালের চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশকে ২১০ রানের অসাধারণ যে ইনিংস খেলেছিলেন কাইল মেয়ার্স, বিপিএলের গত আসরের মতো এবারও সেটিকেই তার জার্সি নম্বর করে দিয়েছে ফরচুন বরিশাল।
Published : 05 Jan 2025, 09:22 PM
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে কাইল মেয়ার্সের জার্সি নম্বর ৭১। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নানা লিগসহ সব জায়গাতেই তার জার্সি নম্বর ওই একই। শুধু বিপিএলে খেলতে এলেই বদলে যায় তার জার্সি নম্বর। গত আসরে ‘২১০’ নম্বর জার্সি পরে খেলেছিলেন তিনি। এবারও তার জার্সিতে শোভা পাচ্ছে এই নম্বরই। কারণটি বুঝতে কারও সমস্যার হওয়ার কথা নয়। তবু নিশ্চিত হতে তাকে আরেকবার জিজ্ঞেস করা হলো। তিনিও হাসিমুখে জানালেন, তার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তগুলোর একটির স্মারক এই জার্সি।
মেয়ার্স ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারীমাত্রই তা জানা থাকার কথা। ২০২১ সালে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই দলে ছিলেন আনকোরা মেয়ার্স। চট্টগ্রাম টেস্টে শেষ ইনিংসে ক্যারিবিয়ানদের প্রয়োজন ছিল ৩৯৫ রান। পাঁচে নেমে ২০ চার ও ৭ ছক্কায় ২১০ রানের রেকর্ডগড়া অসাধারণ ইনিংস খেলে দলকে স্মরণীয় জয় এনে দিয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার।
তার সেই কীর্তিকেই জার্সিতে ধারণ করার ব্যবস্থা করেছে বরিশাল। গত আসরে তাকে দেওয়া হয়েছিল ‘২১০’ খচিত জার্সি। এবারও করা হলো সেটির পুনরাবৃত্তি।
সেই জার্সি গায়ে দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এবার। তৃতীয় ম্যাচটি খেলবেন সিলেটে। এর আগে অনুশীলন শেষে রোববার জানালেন জার্সি নম্বর নিয়ে তার ভালো লাগার কথা।
“এটা আমার সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি সেটি। আমার দলই এই জার্সি নম্বর আমাকে দিয়েছে এবং এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। এই দেশে যখনই আসি, আমি ভালো করি। এটা দলের পক্ষ থেকে ভালো একটা সৌজন্য।”
টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাড়া জাগালেও এখন তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে। অভিষেকের ওই ডাবল সেঞ্চুরির পর ২০২২ সালে আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪৬ রানের ইনিংস খেলেন সেন্ট লুসিয়ায়। তবে ১৮ টেস্টে ৯৪৯ রান ও ৩৪ উইকেট নিয়ে থমকে আছে তার টেস্ট ক্যারিয়ার।
টেস্ট পারফরম্যান্সের ভাটার টান ছিল। কিন্তু তার চেয়েও বড় কারণ, টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর প্রতি তার নিজের টান ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেন্দ্রীয় চুক্তিতেই সই করেননি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বাধাহীন খেলার কারণেই। সবশেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেছে প্রায় দুই বছর আগে।
তবে তার দাবি, টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগ তার মরেনি। বরং সুযোগ পেলে আগ্রাসী ঘরানার ক্রিকেট খেলেই আবার সাদা পোশাকের ক্রিকেট রাঙাতে চান।
“আমি বলতে পারি… হ্যাঁ, এখনও আগ্রহী (টেস্ট) খেলতে। ভালো খেলা এটি। আমার ক্যারিয়ারের জন্য যা সবচেয়ে ভালো, সেটিই করছি এখন। তবে টেস্টে এখনও আগ্রহ আছে আমার। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজটি দারুণ আকর্ষণীয় ছিল। টেস্ট ক্রিকেট এখন যেভাবে খেলা হচ্ছে, ব্যাটাররা যেভাবে দাপট দেখাচ্ছে, আমার মনে হয়, আমার এখনও সুযোগ আছে (টেস্ট) খেলার।”
এখন তার ক্রিকেট জগতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। বরিশালের হয়ে এবার ৫টি ম্যাচ খেলতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। এরপর চলে যাবে এসএ টোয়েন্টিতে খেলতে। গত আসরে ৬ ম্যাচ খেলে বরিশালের শিরোপা জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন। ৪০.৫০ গড়ে ২৪৩ রান করেছিলেন প্রায় ১৫৮ স্ট্রাইক রেটে, ওভারপ্রাত ছয়ের কম রান দিয়ে উইকেট নিয়েছিলেন ৯টি। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ফাইনালেও তিনি ছিলেন ম্যান অব দা ম্যাচ।
তবে এবার শুরুটা তার ভালো হয়নি। দুই ম্যাচে রান করেছেন ৬ ও ১৩। প্রথম ম্যাচে দুটি উইকেট নিলেও রের ম্যাচে পাননি একটিও।
মেয়ার্স অবশ্য স্রেফ দুটি ম্যাচ দিয়ে ভালো-মন্দের বিচার করতে নারাজ।
“মাত্র দুটি ম্যাচ গেল। এখনই বলতে চাই না যে আমার শুরুটা ভালো হয়নি। প্রতি ম্যাচেই তো রান করা সম্ভব নয়। আশা করি, মোমেন্টাম পাব সামনে ম্যাচে। গতবার এসেছিলাম টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি। এবছর এসেছি শুরুতে, কন্ডিশন তাই ভিন্ন। তবে যেটা বললাম, মাত্রই দুটি ম্যাচ গেল। একটুও দুর্ভাবনা নেই আমার। নিজের কাজেই মনোযোগ দিচ্ছি, দলের হয়ে কাজটি করতে চাই।”
মেয়ার্সের দল বরিশালের শুরুটাও হয়েছে ভালোমন্দ মিশিয়ে। প্রথম ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীকে দারুণ রানতাড়ায় হারালেও পরের ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরে গেছে তারা রংপুর রাইডার্সের কাছে।
টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে এমন পারফরম্যান্সকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন মেয়ার্স। এই সময়টায় বরং সঠিক সমন্বয় খুঁজে পাওয়াকে জরুরি মনে করেন ৩২ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
“নতুন মৌসুম, দলও নতুন। দারুণ একটি দল পেয়েছি আমরা। আমরা যেভাবে খেলতে চাই, গত ম্যাচে তা হয়নি। তবে ক্রিকেটে এরকম হয়ই। সেরা দলও কখনও কখনও ভেঙে পড়ে। ব্যাপারটা হলো স্রেফ নিজেদের ভুলগুলো অনুধাবন করে দ্রুত শুধরে নেওয়া।”
“এরকম টুর্নামেন্টে কিছু ভুল করা স্বাভাবিক, বিশেষ করে শুরুর দিকে। অধিনায়ক যেমন বলেছেন, আমরা এখনও চেষ্টা করছি সবচেয়ে শক্তিশালী দল বাছাই করতে, সেরা সমন্বয় খুঁজে পেতে এবং কীভাবে আমরা খেলতে চাই, তা বুঝতে। গত বছরের কিছু ক্রিকেটার এবারও আছে, পাশাপাশি নতুন অনেকেও আছে। ভারসাম্যটা তাই খুঁজে নিয়ে সেরা দল বেছে নিয়ে সেরা ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করতে হবে।”
সিলেট পর্বের প্রথম দিনেই মেয়ার্সরা খেলবেন আবার দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে।