মোহাম্মদ আলির পাঁচ উইকেটের পর তাওহিদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ইনিংসে বিশাল ব্যবধানের জয়ে বিপিএলের ফাইনালে পৌঁছে গেল গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল।
Published : 03 Feb 2025, 10:18 PM
ফাহিম আশরাফ পাকিস্তানের ফিরে গেছেন জাতীয় দলের ডাকে। রয়ে গেছেন মোহাম্মদ আলি। দলের সফলতম বোলারকে হারানোর অভাবটা বুঝতে দিলেন না স্বদেশি পেসার। আইএল টি-টোয়েন্টি খেলে ফিরে এসে সুইংয়ের জাদু দেখালেন কাইল মেয়ার্স। ফর্মে ফেরার জন্য তাওহিদ হৃদয় বেছে নিলেন এই দিনটিকেই। সবকিছুর যোগফল, বড় জয়ে ফাইনালে বরিশাল।
বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে চিটাগং কিংসকে ৯ উইকেটে বিধ্বস্ত করে শিরোপা ধরে রাখার শেষ ধাপে পৌঁছে গেল ফরচুন বরিশাল।
বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা এই নিয়ে চার মৌসুমের মধ্যে তৃতীয়বার পা রাখল ফাইনালে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার চিটাগংকে ১৪৮ রানে আটকে রেখে জয়ের কাজ এগিয়ে রাখে বরিশাল।
স্রেফ ছয় জন ব্যাটসম্যান নিয়ে একাদশ সাজানো দলটির হয়ে ক্যারিয়ার সেরা ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন শামীম হোসেন। ওপেনার পারভেজ হোসেন করেন ৩৬। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯ রান আসে অতিরিক্ত থেকে। বাকি ৯ ব্যাটসম্যান মিলে করতে পারেন মোট ২৫ রান।
নতুন বলে সুইংয়ের ঝলকে দুই উইকেট নেন মেয়ার্স। পাঁচ উইকেট নিয়ে বিপিএল অভিষেক রাঙিয়ে তোলেন মোহাম্মদ আলি। এক ওভারেই চার উইকেটে নিয়ে গড়েন রেকর্ড।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে রান তাড়ায় বরিশাল জিতে যায় ১৬ বল বাকি রেখে। শেষের কাছে এসে মৌসুমের প্রথম ফিফটির দেখা পান হৃদয়। ৫৬ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন তিনি।
মেয়ার্সের সুইংয়ে বরিশালের শুরু
সত্যিকারের সুইং বোলিং এবারের বিপিএলে খুব একটা দেখা যায়নি। কাইল মেয়ার্সের সুইং করানোর ক্ষমতা সহজাত। সেই ঝলক তিনি দেখালেন আরেকবার। নতুন বলে যতটা সুইং তিনি করালেন, এমন সুইং এবারের বিপিএলে আর দেখা যায়নি।
ম্যাচের প্রথম ডেলিভারিতে কিপার ও স্লিপের মাঝ গলিয়ে মেয়ার্সকে চার মারেন খাওয়াজা নাফে। পরের বলটিই বিশাল সুইং করে পিচ করার আরও ভেতরে ঢুকে ছোবল দেয় স্টাম্পে। নিজের পরের ওভারে তিনি ফেরান গ্রাহাম ক্লার্ককে (৬)। শর্ট কাভারে ডাইভিং ক্যাচ নেন দাভিদ মালান।
নতুন বলে টানা চার ওভার শেষ করেন দেন মেয়ার্স। দুটি উইকেট নেন ২৪ রান দিয়ে।
টুর্নামেন্টের শুরুতে বরিশালের হয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেলে আইএল টি-টোয়েন্টি খেলতে চলে গিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান এই অলরাউন্ডার। সেখান থেকে সোমবার সকালে ঢাকায় ফিরে সন্ধ্যায় তিনি বল হাতে ভোগালেন চিটাগংকে।
চাপে চিটাগং
মেয়ার্সের জোড়া ধাক্কার পর আরও দুটি ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে পড়ে চিটাগংয়ের ইনিংস। মোহাম্মদ আলিকে পুল করে সীমানায় হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন (১)। ইবাদত হোসেনের বলে যাচ্ছেতাই এক শটে বোল্ড হন পাকিস্তানি হায়দার আলি (৭)।
চিটাগং চার উইকেট হারায় ৩৪ রানে।
পারভেজ-শামীম বন্ধন
৫০ বলে ৭৭ রানের জুটি গড়ে চিটাগংকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন পারভেজ হোসেন ইমন ও শামীম হোসেন। মূলত শামীমের আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই এগিয়ে যায় চিটাগং। জুটিতে পারভেজের রান ছিল ২২ বলে ২৬, শামীমের ২৮ বলে ৪৯।
পারভেজের শুরুটা ছিল অস্বস্তিময়। মেয়ার্সের সুইংয়ের কোনো জবাবই পাননি তিনি, পরাস্ত হন বারবার। পাওয়ার প্লেতে তার রান ছিল ১৪ বলে ১০।
শামীম অবশ্য শুরু থেকেই সহজাত পথে ছুটতে থাকেন। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই মোহাম্মদ নাবিকে ছক্কা মারেন তিনি রিভার্স সুইপে। মাহমুদউল্লাহ আক্রমণে আসার পর উড়িয়ে মারেন এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে। এছাড়া বাউন্ডারি তো আসতে থাকে নিয়মিতই।
নাবির এক ওভারে দুটি ছক্কায় জেগে ওঠার ইঙ্গিত দেন পারভেজও। তবে আগের ম্যাচে ৭৫ রান করা ব্যাটসম্যান এ দিন আর ইনিংস বড় করতে পারেননি। রিশাদ হোসেনের প্রথম ওভারে স্লগ করে আউট হন ৩৬ বলে ৩৬ রান করে।
শামীম-শো
পারভেজের বিদায়ের পর ব্যাটিং জানা তেমন কেউ আর অবশিষ্ট ছিল না চিটাগংয়ের। বলতে গেলে একাই দলকে এগিয়ে নেন শামীম। ষষ্ঠ উকেটে ২৬ বলে ৩২ রানের জুটি গড়ে ওঠে, সেখানে সৈয়দ খালেদ আহমেদের অবদান ছিল ৮ বলে ১!
উইকেটের চার পাশে দুর্দান্ত সব শট খেলার পাশাপাশি স্ট্রাইকও ধরে রাখেন তিনি দারুণ দক্ষতায়।
আলির ঝুলিতে পাঁচ
১৯তম ওভারটি শুরু করার আগে তিন বোলারে ২২ রান দিয়ে আলির উইকেট ছিল একটি। কিন্তু এই ওভারটায় ভোজবাজির মতো বোলিং ফিগার বদলে দেন এই পেসার।
ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে স্লোয়ারে বোল্ড করেন তিনি খালেদকে। তৃতীয় ডেলিভারিতে রিভার্স স্কুপ খেলে শেষ হয় শামীমের দুর্দান্ত ইনিংস। ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৭ বলে তিনি করেন ৭৯ রান।
ওভারের পঞ্চম ডেলিভারি নিজেই দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন আরাফাত সানিকে। শেষ বলে আবার স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড আলিস আল ইসলাম।
পিএল এক ওভারে চার উইকেট আগে দেখা যায়নি কখনোই। আলির টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে পাঁচ উইকেটও এটিই প্রথম।
অনায়াস রান তাড়া
চিটাগং কিংসের বোলিং আক্রমণ এমনিতে দুর্দান্ত। কিন্তু ব্যাটিং উইকেটে স্রেফ ১৪৯ রানের পুঁজি নিয়ে তারা বেগ দিতে পারেনি বরিশালের ব্যাটসম্যানদের।
তামিম ইকবাল ও তাওহিদ হৃদয় উদ্বোধনী জুটিতেই দলকে এগিয়ে নেন অনেকটা দূর। দুজনের কারও রানের গতি অবশ্য খুব ভালো ছিল না। তবে ৫২ বলে ৫৫ রানের জুটি দলকে গড়ে দেয় ভিত।
খালেদকে শাফল করে পুল খেলে অধিনায়ক তামিম আউট জন ২৬ বলে ২৯ রান করে।
পরের জুটিতেই কাজ শেষ করে দেন হৃদয় ও দাভিদ মালান। ৫২ বলে ৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মালান ক্রিজে গিয়েই দারুণ কিছু শটে দলের রানের গতির বাড়িয়ে দেন। হৃদয় তখনও পর্যন্ত সাবধানী পথেই এগোচ্ছিলেন। রানে ফিরতে মরিয়া চেষ্টা তার ফুটে উঠছিল। এবারের বিপিএলে প্রথমবার ফিফটিতে পা রাখেন তিনি ৪৫ বলে।
এরপর বাউন্ডারি পর বাউন্ডারিতে পরের ১১ বলেই তিনি করেন ৩২ রান। মালান অপরাজিত থেকে যান ২২ বলে ৩৪ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং কিংস: ২০ ওভারে ১৪৯/৯ (নাফে ৪, পারভেজ ৩৬, ক্লার্ক ৬, মিঠুন ১, হায়দার ৭, শামীম ৭৯, খালেদ ১, সানি ১, শরিফুল ৪, আলিস ০*, ফার্নান্দো ১; মেয়ার্স ৪-০-২৭-২, আলি ৪-০-২৪-৫, ইবাদত ৪-০-৩৪-১, নাবি ৩-০-৩০-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১০-০, রিশাদ ২-০-১২-১, তানভির ২-০-৯-০)।
ফরচুন বরিশাল: (তামিম ২৯, হৃদয় ৮২*, মালান ৩৪*; ফার্নান্দো ৩-০-১৩-০, শরিফুল ৪-০-৪৯-০, আলিস ৪-০-৩৭-০, খালেদ ৪-০-৩৪-১, সানি ২-০-১১-০, শামীম ০.২-০-৫-০)।
ফল: ফরচুন বরিশাল ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ আলি।