বিপিএলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ছক্কা মারার বেশ কটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তানজিদ হাসান, তার সামনে এখন ক্রিস গেইলের ছক্কার কীর্তি।
Published : 22 Jan 2025, 08:33 PM
শরিফুল ইসলামের শর্ট বল অন সাইডে পাঠিয়ে ৮৮ থেকে ৯০ রানে পৌঁছে গেলেন তানজিদ হাসান। ইনিংসের বাকি তখনও ১১ বল। কিন্তু সেঞ্চুরি করার সুযোগ পেলেন না বাঁহাতি ওপেনার। ওই ২ রানেই যে শেষ ম্যাচ। তিন অঙ্ক ছুঁতে না পারলেও ছক্কার রেকর্ড ঠিকই গড়েছেন তিনি। উড়ন্ত পথচলায় তার নিশানায় এখন ক্রিস গেইলের এক কীর্তি।
চিটাগং কিংসের বিপক্ষে বুধবারের ম্যাচে ৩ চারের সঙ্গে ৭টি ছক্কা মেরে ৫৪ বলে ৯০ রানের ইনিংস খেলেন তানজিদ। ১৪৯ রানের লক্ষ্যে তার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সহজেই ম্যাচ জিতে যায় ঢাকা ক্যাপিটালস।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে চিটাগং আর কিছু রান করতে পারলে হয়তো আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেতেও পারতেন তানজিদ। সিলেটে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন ১০৮ রানের ইনিংস।
বিপিএলে গেইল ছাড়া আর কারও নেই এক আসরে দুটি সেঞ্চুরির কীর্তি। ২০১২ সালে বরিশাল বার্নার্সের হয়ে মাত্র পাঁচ ম্যাচে দুটি শতক করেন 'ইউনিভার্স বস।' পরে ২০১৭ সালে রংপুর রাইডার্সের জার্সিতেও দুবার তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন তিনি।
খুব কাছাকাছি গেলেও সেই রেকর্ড ছোঁয়া হয়নি তানজিদের। তবে এটি নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই ঢাকার ওপেনারের। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বললেন,শেষ পর্যন্ত খেলতে পেরেই তিনি তৃপ্ত।
“এরকম (চিটাগং আরও বেশি রান করলে সেঞ্চুরি হতো) মনে হয়নি। যা হয়েছে তাতেই খুশি। হয়তো (সেঞ্চুরি) হতেও পারত। তবে এটা (সেঞ্চুরি) আমার হাতে নেই। খেলাটা শেষ করতে পেরেছি, এটাই নিজের কাছে ভালো লেগেছে।”
গেইলের জোড়া সেঞ্চুরির রেকর্ড ছোঁয়ার সময় এখনও অবশ্য আছে তানজিদের। টুর্নামেন্টে আরও অন্তত দুটি ম্যাচ খেলবে ঢাকা। শতরানের কীর্তির পাশাপাশি ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির আরেকটি রেকর্ডও এখন ২৪ বছর বয়সী ওপেনারের সামনে।
চিটাগংয়ের বিপক্ষে ৭ ছক্কা মেরে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিপিএলের এক আসরে সর্বোচ্চ ছয়ের রেকর্ড নিজের করেছেন তানজিদ। গত আসরে ১৪ ইনিংসে ২৪ ছক্কা মারা তাওহিদ হৃদয়কে এবার ১০ ইনিংসেই টপকে গেছেন তিনি।
সব মিলিয়ে বিপিএলে এক আসরে ছক্কার রেকর্ডেও সবার ওপরে গেইল। ২০১৭ সালে ১১ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে বেরিয়ে ৪৭ বার সীমানার ওপারে যায় বল। ওই কীর্তি ছুঁতে আরও ১৮টি ছক্কা প্রয়োজন তানজিদের।
ঢাকা প্লে-অফে উঠতে পারলে সর্বোচ্চ পাঁচ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন তানজিদ। বেশ কঠিন হলেও একদম অসম্ভব নয় গেইলের রেকর্ড ছোঁয়া বা তাকে টপকে যাওয়া।
তবে তানজিদ অবশ্য রেকর্ড নিয়ে বেশি ভাবতে চান না। নিজের সহজাত খেলার পথ ধরে প্রাপ্তির ঠিকানা খুঁজে নিতে চান তিনি।
“কখনও এভাবে (রেকর্ড গড়া) চিন্তা করিনি। সামনে আর দুইটা ম্যাচ আছে। সেগুলো কীভাবে ভালোভাবে শেষ করতে পারি, সেটাই পরিকল্পনায় থাকবে। সবাই সেভাবেই চিন্তা করছে। যদি এর মধ্যে (রেকর্ড) হয়ে যায়, হয়েও যেতে পারে। তবে আমি স্বাভাবিকভাবে যে পরিকল্পনায় খেলি, সেভাবেই খেলার চেষ্টা করব।”
বিপিএলের গত আসরেও ছক্কা মারার সামর্থ্যে নজর কেড়েছিলেন তানজিদ। সেবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ১২ ইনিংসে তিনি করেছিলেন ৩৮৪ রান। সব মিলিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন ২০টি। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে এবার তিনি গড়েছেন বিপিএলের একাধিক আসরে অন্তত ২০ ছক্কা মারার কীর্তি।
সব মিলিয়ে বিপিএল ক্যারিয়ারে মাত্র ২৪ ইনিংসে ৫০টি ছক্কা হয়ে গেছে তানজিদের। কোনো সংশয় ছাড়াই বলে দেওয়া যায়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টুর্নামেন্টের ছক্কার ফিফটিতে তিনিই দ্রুততম।
বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যানের জন্য এমন অবলীলায় অবিরাম ছক্কা মেরে যাওয়া বিরল সামর্থ্যই বটে। তবে তানজিদের কাছে এটিই তার স্বাভাবিক ব্যাটিং।
“এটার (টানা ছক্কার) কোনো রহস্য নেই। আমি সহজাতভাবে এরকম খেলি। অনুশীলনে চেষ্টা করি নিজের যেটা শক্তির জায়গা, সেটা নিয়ে কাজ করার এবং খেলায় যে ভুলগুলো করি সেগুলো নিয়ে কাজ করার। তো এটার কোনো রহস্য নেই। আমি আমার সহজাত খেলা খেলি।”
ছক্কার রেকর্ড গড়া তানজিদ এখন পর্যন্ত ১০ ইনিংসে ৪৬.৬৬ গড় ও ১৪৩.৮৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন আসরের সর্বোচ্চ ৪২০ রান। সামনের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ওপেনারের এমন ছন্দে থাকা বাংলাদেশ দলের জন্যও দারুণ খবর।
সংস্করণ ভিন্ন হলেও ওই টুর্নামেন্টে একই খেলার ধরন বজায় রাখতে চান তানজিদ।
“ওটা ভিন্ন ফরম্যাট। এখানে যেমন পাওয়ার প্লেতে খুব দ্রুত রান তুলতে হয়, সেখানে হয়তো আরেকটু বেশি সময় পাওয়া যায়। তো আমি চেষ্টা করছি পাওয়ারপ্লে তে খেললেও নিজেকে কিছুটা সময় দেওয়ার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও যখন খেলব, নিজেকে কিছুটা সময় দিয়ে যদি খেলতে পারি, নিজের জন্য ভালো।”