“তারা এটা নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে পারত। তামিম বলতে পারত, সাকিব বলতে পারত, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য,” বলেন তিনি।
Published : 22 Oct 2023, 05:38 PM
প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে না বলে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিরোধ মেটাতে পারতেন বলে মনে করেন সাবেক ক্রিকেটার ইশতিয়াক আহমেদ।
তিনি বলেছেন, “তারা এটা নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে পারত। তামিম বলতে পারত, সাকিব বলতে পারত, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য। কিন্তু সেটা ঘটেনি।”
বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলে তামিম ইকবালের না থাকা এবং পরে ফেইসবুক লাইভে এসে তার কথা বলা এবং বেসরকারি একটি টেলিভিশনে সাকিবের সাক্ষাৎকারে যেসব বক্তব্য এসেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় ইশতিয়াক বলেন, “সাকিব ও তামিম দীর্ঘ যাত্রার সঙ্গী। আমি হলে, বাইরে এসে এমনটা বলতাম না।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড আউট’ এ অংশ নিয়ে সাকিব-তামিম প্রসঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্রিকেটের নানা দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এই বিশ্লেষক।
ইংরেজিতে এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ (https://www.facebook.com/bdnews24) এবং ইউটিউব চ্যানেলে (https://www.youtube.com/@bdnews24) সম্প্রচার করা হয়।
ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “হালকাভাবে বললে তারা (সাকিব ও তামিম) পার্টনারস ইন ক্রাইম। তারা এটা ভালোভাবেই জানত যে, তারা যদি নিজেদের মধ্যে সমাধা করার সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে তারা করতে পারত। এমন পর্যায়ে বিতর্ক এমন মাত্রায় যেত না।”
দুই বন্ধুর ব্যক্তিগত বিরোধের কারণেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তুমি ১৭ কোটি মানুষের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছ, যারা ক্রিকেটের অন্ধ ভক্ত, যারা তোমাদের ভালোবাসে, তোমাদের বন্দনা করে, তারা তোমাদের এমন উচ্চতায় তুলে ধরেছে।
“তোমরা সুপারস্টার, তোমরা উভয়েই তা জান। তোমরা দেশের জন্য যা করেছ, তা তারা (ভক্তরা) স্বীকার করে, দেশ তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু এটা কি তোমাদের এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির অধিকার দেয়?”
বিশ্বকাপ দল থেকে তামিমকে বাদ দেওয়ার পেছনে খেলায় পারফর্মেন্সের তুলনায় ‘সাকিব ও কোচের সঙ্গে মতবিরোধ’ বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন ইশতিয়াক।
তিনি বলেন, “হয়ত কেবল অধিনায়ক বা কোচ, তারা হয়ত চাননি সে দলে থাকুক। তার মানে এই নয় যে, তাকে জায়গা থেকে সরানো যাবে না। অনেক বড় খেলোয়াড়কেও সরানোর ঘটনা আছে।”
অস্ট্রেলিয়ার দল থেকে স্টিভ ওয়াহকে বাদ দেওয়া এবং বাজে খেলার মধ্যে অধিনায়ক মার্ক টেইলারকে রেখে দেওয়ার উদাহরণ টানেন ইশতিয়াক আহমেদ।
ক্রিকেটীয় এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কারণে বিতর্ক বেশি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তারা যেন নির্বাচকদের থেকেও বেশি বোঝে এবং তারাই দল নির্বাচনের কর্তৃপক্ষ ও অধিকারী। মিডিয়ার সম্পৃক্ততা দরকার, কোনো খেলাতেই আমরা মিডিয়া ছাড়া পারব না, তবুও মনে হয় বাংলাদেশ দল নির্বাচনের বিষয়ে তারা বাড়াবাড়ি করেছে।
অবশ্য এমন যে অতীতেও ঘটেছে, সে কথাও বলেন কিছুদিন ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা ইশতিয়াক।
“১৯৯৯ সালে নান্নুকে আনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল, কেননা মিডিয়া তাকে সমর্থন দিয়েছিল, এটা আপনি অন্য কোনো দেশে দেখবেন না।”
তামিমকে একাদশ থেকে সরানোর ক্ষেত্রে ক্রিকেট বোর্ড আরও ভালোভাবে বার্তা দিতে পারত কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি তাই মনে করি। বোর্ডের বুঝতে পারা উচিত ছিল, এখানে দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে মতভিন্নতা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।”
তামিমকে মিডল অর্ডারে খেলানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ইশতিয়াক। নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ম্যাচে তামিমের ৪৪ রান করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “মিডল অর্ডারে ধারাবাহিকতা আছে। ধারাবাহিকতাহীনতা থাকলে সেটা আছে ওপেনিংয়ে।
“তামিমই একমাত্র খেলোয়াড় যে ধারাবাহিকভাবে ওপেনিংয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। তাহলে কি এমন হল, তাকে মিডল অর্ডারে খেলতে হবে?... যেভাবে তামিম বলেছে তাকে বাদ দেওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। আমি মনে করি, সে যেটা ভেবেছে সেভাবে কথা বলেছে; তাতে কিছু যুক্তি রয়েছে।”
তবে বাংলাদেশ দল নিয়ে এই বিতর্ক বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন না ইশতিয়াক।
তিনি বলেন, “কোনো কোনো খেলোয়াড় তামিমের অনুপস্থিতি অনুভব করবে। তবে এটা ঠিক, এটা পেশাদারদের খেলা, প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজেদের সেরাটা এখানে দেবে।
“শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তারা যে রকম অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে, আমি মনে করি, তারা সেটা অব্যাহত রাখবে। আমি মনে করি, যখন তারা দড়ি টপকে বাংলাদেশের জন্য খেলতে মাঠে নামবে, সেটাকে সাকিব-তামিমের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা ক্রিকেটের বাইরে যা কিছু ঘটেছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।”
(প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)