অনুশীলনে প্রচুর ঘাম ঝরালেও মাঠে নেমে ক্রিকেটাররা কেন পারছেন না, উত্তর খুঁজে ফিরছেন বাংলাদেশ কোচ।
Published : 18 Dec 2022, 07:44 PM
চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনের লাঞ্চ বিরতি যখন হওয়ার কথা, রাসেল ডমিঙ্গো তখন সংবাদ সম্মেলনে। তার চোখেমুখে রাজ্যের অন্ধকার। শেষ দিনের খেলা শেষ ৪৯ মিনিটেই। তবে বাংলাদেশের কোচের মন পুড়ছে দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিং বিপর্যয়ে। হতাশাটা স্পষ্ট যেমন তার চেহারায়, তেমনি ফুটে উঠল কণ্ঠেও। এমনিতে নানা সময় ম্যাচ হারার পরও আশার কথা অনেক সময় শোনা যায় তার কাছ থেকে। কিন্তু এবার হতাশার কথাই বললেন বারবার।
ডমিঙ্গোর হতাশার মূল কারণ ব্যাটসম্যানদের বারংবার ব্যর্থতা। এই বছরের শুরুর নিউ জিল্যান্ড সফরে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে অসাধারণ সেই জয়ের পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কেবলই নিম্নমুখি। সেই ব্যর্থতার মূল দায় ব্যাটিং ইউনিটের। এ বছর ১৬টি পূর্ণাঙ্গ ইনিংসের ১০টিতেই বাংলাদেশ আড়াইশ ছুঁতে পারেনি!
তবে ডমিঙ্গোর হতাশা চরমে পৌঁছেছে এবার চট্টগ্রাম টেস্টে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্রেফ ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়া মানতেই পারছেন না তিনি। অনুশীলনে এত কষ্ট করার পরও কেন মাঠে গিয়ে ক্রিকেটাররা পারছেন না, এটার কারণ খুঁজে ফিরছেন বাংলাদেশ কোচ।
“আমি খুবই হতাশ। ছেলেদের তা বলেছিও। প্রথম ইনিংসে সত্যি বলতে, আমার হৃদয় ভেঙে গেছে কিছুটা। আমি জানি, ওরা চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেক কষ্ট করছে। যেমন, ইবাদত ফিল্ডিং নিয়ে কঠিন পরিশ্রম করছে। কিন্তু মাঠে গিয়ে ক্যাচ ছেড়ে দিচ্ছে। তারা সবাই অনুশীলনে চেষ্টার কমতি রাখছে না, কিন্তু মাঠে গিয়ে চাপের মধ্যে পারছে না, কোচ হিসেবে এটা আমার জন্য হতাশাজনক। ছেলেদের জন্যই হতাশার এটি।”
দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতে শতরানের জুটি গড়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পারে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত খুব বড় স্কোর না হলেও ৩২৪ পর্যন্ত যেতে পারে দল। কিন্তু পরাজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে তো প্রথম ইনিংসেই। সেটিই বারবার পোড়াচ্ছে ডমিঙ্গোকে।
“পাঁচদিন ধরে আমরা আমরা যেভাবে নিজেদের মেলে ধরেছি, তাতে আমি হতাশ। গতকালকে (শনিবার) ব্যাট হাতে কিছুটা দৃঢ়তা আমরা দেখা পেরেছি। এটা ছিল সন্তোষজনক। তবে এই উইকেটে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে আউট হওয়া উচিত হয়নি আমাদের।”
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের উইকেট এবার অন্য বেশির ভাগ সময়ের মতো ব্যাটিং স্বর্গ ছিল না। স্পিনারদের জন্য সহায়তা ছিল কিছুটা। তবে ১৫০ রানে অল আউট হওয়ার মতো ভয়ঙ্কর উইকেট ছিল না মোটেও। বিশেষ করে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো ছিল যে দিন, সেই দ্বিতীয় দিনেই মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। সেদিন শেষ সেশনে ৬ উইকেট হারায় দল।
কোচের মতে, সর্বনাশ যা হওয়ার, হয়ে গেছে সেখানেই।
“আমরা চেয়েছিলাম লড়াই করতে। ভারত যদিও ভালো দল। তবে আারও একবার, একটি বাজে সেশনই ম্যাচে আমাদের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছে। ৪০০ রান ভালো স্কোর, তবে চট্টগ্রামে এটা সামলানো যায় (কাছাকাছি যাওয়া যায়)। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে অল আউট হওয়া উচিত হয়নি আমাদের। সবচেয়ে হতাশাজনক ছিল, ব্যাটসম্যানদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুর্বলতা।”
এবার চট্টগ্রাম বলেই হয়তো ব্যাটিংয়ের এই ধস আলাদা করে চোখে লাগছে। তবে ব্যাটিংয়ের এই দুর্দশা চলছে আদতে তো ম্যাচের পর ম্যাচ ধরেই। ব্যর্থতার এই দায়টা ব্যাটসম্যানদেরই দিলেন কোচ।
“টপ অর্ডারের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি প্রবল। দুঃসময় থেকে বের হওয়ার কোনো পথই তারা বের করতে পারছে না। শীর্ষ পাঁচ-ছয়ে বেশ কজন ক্রিকেটার আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো খেলেনি বা ধারাবাহিক হতে পারেনি। তরুণরা আমাদের হয়ে খুব বেশি টেস্ট খেলেনি।”