ফরচুন বরিশালকে ১ উইকেটে হারিয়ে সেরা দুইয়ে থাকা নিশ্চিত করল রংপুর রাইডার্স।
Published : 19 Feb 2024, 09:31 PM
রোমাঞ্চের নানা মোড় পেরিয়ে ম্যাচ গড়াল শেষ ওভারে। রংপুর রাইডার্সের প্রয়োজন ২ রান আর ফরচুন বরিশালের চাই শেষ উইকেট। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের দ্বিতীয় বলে এক রান নিলেন শামীম হোসেন। সমতায় ম্যাচ। পরের বল হাসান মাহমুদের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে গেল সীমানায়। রংপুর পেল শ্বাসরুদ্ধকর জয়।
ম্যাচের দুই ইনিংসের গল্প প্রায় একই। দারুণ শুরুর পর মাঝপথে খেই হারায় দুই দলই। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুযুদ্ধে জিতে ন্যুনতম ব্যবধানে জয় পেল রংপুর।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বরিশালের বিপক্ষে রংপুরের জয় ১ উইকেটে। ১৫২ রানের লক্ষ্য তিন বল বাকি থাকতে ছুঁয়েছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটি।
বিপিএল ইতিহাসে ১ উইকেটে জয়ের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। প্রথমবার ঘটেছিল ২০১৩ সালে, টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরে। সেবার বরিশাল বার্নার্সকে হারিয়েছিল সিলেট রয়্যালস।
এ নিয়ে টানা অষ্টম জয় পেল রংপুর। সব মিলিয়ে ১১ ম্যাচে ৯ জয়ে শীর্ষস্থান আরও পোক্ত করল তারা। একইসঙ্গে নিশ্চিত করল সেরা দুইয়ে থেকে প্রথম কোয়ালিফায়ারের টিকেট। যার মানে ফাইনালে ওঠার দুটি সুযোগ পাবে তারা।
সমান ম্যাচে বরিশালের জয় ৬টি। প্লে-অফ খেলার আশা বেঁচে আছে তাদেরও।
রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচটিতে রংপুরের জয়ের নায়ক আবু হায়দার। বরিশালের উড়ন্ত শুরুর পর ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে স্রেফ ১২ রানে ৫ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বরিশাল।
বিপিএল ইতিহাসে বাংলাদেশি বোলারদের সেরা বোলিংও এটি। অনুমেয়ভাবে তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
রংপুরের দারুণ শুরুর পর বরিশালকে ম্যাচে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। পরপর তিন ওভারে তিন উইকেট নিয়ে রংপুরের ওপর চাপ তৈরি করেন অফ স্পিনার। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি যথেষ্ট হয়নি।
ম্যাচের প্রথমভাগে দশ ওভারে ১০০ রান করে বরিশাল। ত্রয়োদশ ওভারে আক্রমণে এসে তিন উইকেট নেন আবু হায়দার। পরে নেন আরও দুটি। এক পর্যায়ে ১২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান করা দলটির রান হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১২৯। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত থামে তারা ১৫১ রানে।
পরে রংপুরের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। পাওয়ার প্লেতে তারা করে ৭৪ রান। প্রায় অর্ধেক রান হয়ে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ায় বরিশাল। ১৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট নেয় তারা।
রংপুরের বিপদ আরও বাড়তে পারত মিরাজের শেষ ওভারে। লং অনে জিমি নিশামের সহজ ক্যাচ ছাড়েন প্রিতম কুমার। ৪ রানে বেঁচে যাওয়া কিউই অলরাউন্ডার ১৭ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের কাছে পৌঁছে দেন। তবু জাগে শঙ্কা। সেটি কাটিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বাধীন দল।
রান তাড়ায় কাইল মেয়ার্সের বলে ছক্কায় রানের খাতা খোলেন ব্র্যান্ডন কিং। পরের ওভারে কেশভ মহারাজের বলে মারেন দুটি ছক্কা। তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মুমিনুল হক। রানের খাতা খোলার আগেই তিনি ফেরেন ড্রেসিং রুমে।
তিন নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান প্রথম বলে মারেন বাউন্ডারি। এরপর সমান তালে ছুটতে থাকেন সাকিব ও কিং। চতুর্থ ওভারে ওবেদ ম্যাককয়ের বলে দুটি চার মারেন কিং। শেষ দুই বলে চারের পর ছক্কা মারেন সাকিব।
মেয়ার্সের পরের ওভারে আসে তিনটি বাউন্ডারি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে ছক্কা মারেন কিং। শেষ বলে প্রতিশোধ নেন মিরাজ। আরেকটি বড় শটের খোঁজে স্টাম্পড হন ২২ বলে ৪৫ রান করান ক্যারিবিয়ান ওপেনার।
সাত ওভারে ৮০ পেরিয়ে সহজ জয় দেখতে থাকে রংপুর। যা সহজ হতে দেননি মিরাজ। তার পরের ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন ১৫ বলে ২৯ রান করা সাকিব। পরের ওভারে সোহানকে ফেরান মহারাজ। মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং লেগে ক্যাচ দেন মেহেদি।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি টম মুরস। নিশাম এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। কামরুল ইসলামের বলে বাউন্ডারি মারেন কিউই অলরাউন্ডার। পরের ওভারে ম্যাককয়ের বলে ছক্কা মেরে লক্ষ্যমাত্রা ২০ রানের কমে নামান তিনি। পরের বলে ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন নিশাম।
অষ্টাদশ ওভারে প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। পরের বলে তাকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমান ম্যাককয়। ওই ওভারে আর রান নিতে পারেনি রংপুর।
দুই ওভারে ৩ রানের সমীকরণে মেয়ার্সের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন নয় নম্বরে নামা শামীম হোসেন। পরের বলে ডিপ কভারে ক্যাচ দেন বল হাতে চমক দেখানো আবু হায়দার। শেষ চার বল দেখেশুনে কাটিয়ে দেন শেষ ব্যাটসম্যান হাসান মাহমুদ। পরে সাইফের শেষ ওভারে বাকি কাজ সারেন শামীম ও হাসান।
এর আগে ম্যাচের প্রথম বলে প্রিটোরিয়াসকে বাউন্ডারিতে শুরু করেন তামিম ইকবাল। এক বল পর আরেকটি চার মারেন তিনি। হাসানের বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন অভিজ্ঞ ওপেনার। চতুর্থ ওভারে মেহেদির বলে ছক্কার পর মারেন চার।
তবে বেশি দূর যেতে পারেননি বরিশাল অধিনায়ক। পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসে তামিমকে ফেরান সাকিব। প্রথম বলে মুমিনুলের হাতে ধরা পড়েন ২০ বলে ৩৩ রান করা তামিম।
এরপর দলকে এগিয়ে নেন মেয়ার্স। দারুণ সঙ্গ দেন প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা টম ব্যান্টন। দ্বিতীয় বলে সাকিবকে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন মেয়ার্স। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সাকিবের বলেই ছক্কা ওড়ান তিনি। পরে নিশামকে জোড়া ছক্কা মারেন মেয়ার্স। প্রিটোরিয়াসের বলে মারেন পরপর দুটি চার।
অন্য প্রান্তে ব্যান্টনও রানের চাকা সচল রাখলে দশম ওভারে একশ ছুঁয়ে ফেলে বরিশাল। দ্বাদশ ওভার থেকে তাদের পেছানোর শুরু। নিশামের বলে পুল করতে গিয়ে ওপরের কানায় লেগে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ব্যান্টন।
পরের ওভারে আবু হায়দারের তিন উইকেট। প্রথম বলে মুশফিকুর রহিমকে কট বিহাইন্ড করেন তিনি। এক বল পরে বোল্ড সৌম্য সরকার। পঞ্চম বলে ফিরতি ক্যাচে তিনি ফেরান মেয়ার্সকে। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ২৭ বলে ৪৬ রান করেন ক্যারিবিয়ান তারকা।
স্রেফ ১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বরিশালকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন বাঁহাতি পেসার। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বরিশাল। পরের দুই ওভারে মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেটও নেন আবু হায়দার। শেষ দিকে সাইফ ও ম্যাককয়ের চেষ্টায় কোনোমতে দেড়শ স্পর্শ করে বরিশাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৫১/৯ (তামিম ৩৩, ব্যান্টন ২৬, মেয়ার্স ৪৬, মুশফিক ৫, সৌম্য ০, মাহমুদউল্লাহ ৯, মিরাজ ৩, সাইফউদ্দিন ১০, মহারাজ ১, ম্যাককয় ১২*, কামরুল ১*; প্রিটোরিয়াস ২-০-২৫-০, মেহেদি ৪-০-৩০-০, হাসান ৪-০-৩১-২, সাকিব ৪-০-২৫-১, নিশাম ২-০-২৭-১, আবু হায়দার ৪-০-১২-৫)
রংপুর রাইডার্স: ১৯.৩ ওভারে ১৫৫/৯ (কিং ৪৫, মুমিনুল ০, সাকিব ২৯, মেহেদি ৭, সোহান ২, মুরস ১৭, নিশাম ২৮, প্রিটোরিয়াস ১৩, শামীম ৪*, আবু হায়দার ০, হাসান ৪*; মেয়ার্স ৪-০-৩১-২, মহারাজ ৪-০-৩১-১, ম্যাককয় ৪-০-৩৪-৩, মিরাজ ৪-১-২৪-৩, সাইফ উদ্দিন ২.৩-০-২৩-০, কামরুল ১-০-১১-০)
ফল: রংপুর রাইডার্স ১ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আবু হায়দার