ফর্মে ফেরার ম্যাচে সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন এনামুল হক, দারুণ বোলিংয়ে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বার ম্যান অব দা ম্যাচ আলাউদ্দিন বাবু।
Published : 17 Dec 2024, 03:24 PM
ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই নিয়মিত পারফরমারদের একজন এনামুল হক। জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য একদম মিইয়ে ছিলেন তিনি। অবশেষে জ্বলে উঠলেন তিনি সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে। আলাউদ্দিন বাবুও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন অনেক দিন ধরে। খুব ধারাবাহিক হতে পারেননি সেভাবে কখনোই। তবে এই আসরে তিনি অন্যরকম। দারুণ বোলিংয়ের পথ ধরে আরও একবার ম্যান অব দা ম্যাচ হলেন এই অলরাউন্ডার।
দুজনের পারফরম্যান্সের হাত ধরে জিতেছে তাদের দলও। এনামুলের সেঞ্চুরির পর বোলারদের পারফর্যান্সে ঢাকা বিভাগকে ২১ রানে হারিয়েছে খুলনা বিভাগ। আলাউদ্দিন বাবু ও অন্য বোলারদের দাপটে বরিশাল বিভাগকে ৭ উইকেটে হারিয়ে টানা পঞ্চম জয়ের স্বাদ পেয়েছে রংপুর বিভাগ।
১১ বছর পর সিলেটেই এনামুলের সেঞ্চুরি
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সিলেটে বিজয় দিবস ক্রিকেটে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ১০৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন এনামুল হক। এতদিন সেটিই ছিল তার একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। এত বছর পর সেখানে আরেকটি যোগ হলো একই মাঠেই।
ইনিংস শুরু করতে নেমে শেষ বল পর্যন্ত খেলে ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন এনামুল। তার ৬৭ বলের ইনিংসে চার ১০টি, ছক্কা ৫টি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনাকে ৪১ রানের উদ্বোধনী জুটি এনে দেন এনামুল ও ইমরুল কায়েস।
আগের দুই ম্যাচে ৮ ও ১৪ রান করা ইমরুল এবারও ফেরেন ১৪ রানে। যদিও নাজমুল ইসলাম অপুর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে বেশ অসন্তুষ্ট দেখা গেল তাকে। তবে টিভি রিপ্লেতে আউট বলেই মনে হয়েছে।
তিনে নামা আজিজুল হাকিম তামিম একবার জীবন পেয়েও ১৭ বলে করেন ১৮। তাইবুর রহমানের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে মোহামমদ মিঠুন ফেরেন শূন্যতে।
সেখান থেকে দলকে শেষ পর্যন্ত টেনে নেন এনামুল ও নুরুল হাসান সোহান। ৫২ বলে ৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন।
৩৮ বলে ফিফটি করার পর এনামুল মন্থর হয়ে পড়েন অনেকটা। ১৬ ওভার শেষে তার রান ছিল ৫২ বলে ৬৩। পরের চার ওভারে ঝড় তুলে শতরানে পৌঁছে যান তিনি।
শেষ ওভারের আগে তার রান ছিল ৮৮। ইকবাল হোসেন ইমনের করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক পেয়ে বাউন্ডারি পান তিনি ব্যাটের কানায় লেগে। পরের বলে রিভার্স র্যাম্প খেলার চেষ্টায় ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি বলে। চতুর্থ বলে নেন দুটি রান। পরের বলে শর্ট ডেলিভারিতে পুল করে ছক্কা মেরে পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে।
অধিনায়ক সোহান অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ৩৪ রান করে। খুলনা ২০ ওভারে তোলে ১৮০ রান।
ঢাকা রান তাড়ায় ধুঁকতে থাকে শুরু থেকেই। দুই ওপেনার জাওয়াদ আবরার (১০ বলে ১১) ও রনি তালুকদার (১১ বলে ৭) বিদায় নেন দ্রুতই। অধিনায়ক সাইফ হাসানও করতে পারেননি ভালো কিছু (১৩ বলে ১০)।
ঢাকাকে চেপে ধরেন খুলনার বাঁহাতি স্পিনার জায়েদ উল্লাহ। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই অভিষিক্ত ২১ বছর বয়সী স্পিনার ৪ ওভারে কেবল ১৩ রানে নেন ৩ উইকেট।
চারে নেমে ২২ বলে ১৯ রান করে যখন আউট হলেন আরিফুল ইসলাম, ত্রয়োদশ ওভারে ঢাকার রান তখন ৪ উইকেটে ৭২।
সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণে দলকে খেলা জমিয়ে তোলার চেষ্টা করেন তাইবুর রহমান ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। তবে শুরুর ব্যাটসম্যানরা পরিস্থিতি এতই কঠিন করে তুলেছিলেন যে, এই দুজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়েও আসলে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি ঢাকা।
টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ফিফটিতে ৫ ছক্কায় ৪১ বলে ৬৩ রান করেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ তাইবুর রহমান। মাহিদুল অপরাজিত থাকেন ৪ ছক্কায় ২৩ বলে ৪১ রান করে।
পাঁচ ম্যাচে খুলনার এটি দ্বিতীয় জয়, ঢাকার চতুর্থ পরাজয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা বিভাগ: ২০ ওভারে ১৮০/৩ (এনামুল ১০১, ইমরুল ১৪, আজিজুল ১৮, মিঠুন ০, সোহান ৩৪*; ইমন ৪-০-৪৩-০, সাকিল ৪-০-৪২-০, নাজমুল অপু ৪-০-৩৪-২, তাইবুর ৪-০-২৮-০, শুভাগত ২-০-১১-০, সাইফ ২-০-১৪-০)।
ঢাকা বিভাগ: ২০ ওভারে ১৫৯/৪ (জাওয়াদ ১১, রনি ৭, সাইফ ১০, আরিফুল ১১, তাইবুর ৬৩*, মাহিদুল ৪৩*; আল আমিন ৪-০-৩৬-১, নাহিদুল ৪-০-১৩-০, জায়েদ ৪-০-১৩-৩, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-৩৮-০, আজিজুল ২-০-২৫-০, জিয়াউর ২-০-৩২-০)।
ফল: খুলনা বিভাগ ২১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক।
আলাউদ্দিনের চার, রংপুরের পাঁচে পাঁচ
টুর্নামেন্টে রংপুর বিভাগের প্রথম ম্যাচে দুই উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছিলেন আলাউদ্দিন বাবু। এবার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে চার উইকেট শিকার করলেন তিনি কেবল ৯ রান দিয়ে।
অপ্রতিরোধ্য রংপুর বিভাগের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বরিশাল বিভাগ। সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে বরিশাল গুটিয়ে যায় ১০৮ রানে। রংপুর জয় পায় ১৩ বল বাকি রেখে।
বরিশালের শুরুটা খুব খারাপ ছিল না। ইফতিখার হোসেন ইফতি ও মইনুল ইসলাম শুরুর জুটিতে চার ওভারে তোলেন ২৯ রান। পাওয়ার প্লেতে আসে ২ উইকেটে ৪১ রান। তবে অষ্টম ওভার থেকে চতুর্দশ ওভারের মধ্যে ৬ উইকেট হারায় তারা ১৮ রানের মধ্যে।
পরে লেয়ার অর্ডারে কামরুল ইসলাম রাব্বি ও রুয়েল মিয়া খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে দলকে একশ পার করান।
রান তাড়ায় দুই অভিজ্ঞ তানবির হায়দার ও নাঈম ইসলাম ভালো কিছু করতে না পারলেও জিততে বেগ পেতে হয়নি রংপুরকে। ওপেনিংয়ে ৫ ছক্কায় ৪৪ ব ৫৩ রান করেন চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ান। ১৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের প্রথম ফিফটি এটি।
পরে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অধিনায়ক আকবর আলি ঠাণ্ডা মাথায় দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন।
পাঁচ ম্যাচের সবকটি জিতে শীর্ষে রংপুর, সমান ম্যাচে বরিশালের হার তিনটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বরিশাল বিভাগ: ১৯.২ ওভারে ১০৮ (ইফতি ২৫, মইনুল ১৪, অনিক ৬, ফজলে রাব্বি ১৫, সালমান ১০, সোহাগ ২, মইন ১, তানভির ০, কামরুল ১৫*, রুয়েল ১১, মেহেদি ০; এনামুল ৪-০-৩২-০, মুকিদুল ৪-০-২২-২, আলাউদ্দিন ৪-০-৯-৪, তানভির ১-০-৬-০, সাকলাইন ৩.২-০-২৭-২, আরিফ ২-০-৫-১, আরিফুল ১-০-৬-০)।
রংপুর বিভাগ: ১৭.৫ ওভারে ১০৯/৩ (রিজওয়ান ৫৩, তানবির ২, নাঈম ১৬, আল মামুন ২১*, আকবর ১৬*; কামরুল ২-০-১২-০, তানভির ৪-০-১৬-০, মইনুল ৩-০-২৯-১, রুয়েল ১-০-১১-০, মেহেদি ২-০১২-০, সোহাগ ২.৫-০-১৭-০, মইন ৩-০-১১-১)।
ফল: রংপুর বিভাগ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আলাউদ্দিন বাবু।