চেক হাতে পেয়ে হাসিমুখে ছবি তুললেও সেই চেক থেকে কোনো টাকা এখনও জমা হয়নি দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটারদের ব্যাংক হিসাবে।
Published : 28 Jan 2025, 02:28 PM
‘ভাই, শরীর খুব ভালো। কিন্তু অন্য কিছু তো ভালো নেই’- কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেই আক্ষেপের সুরে বললেন দুর্বার রাজশাহীর এক ক্রিকেটার৷ বিপিএলের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে নজর রাখা যে কেউ সহজেই বুঝবেন, ‘অন্য কিছু’ আসলে কী! পারিশ্রমিক নিয়ে আরও একবার সমস্যার সম্মুখীন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা।
গত রোববার বিকেলে পারিশ্রমিকের চেক হাতে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছবি আপলোড করে এনামুল হক লিখেছিলেন, ‘All is well’ অর্থাৎ সব ঠিক আছে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সেই চেক থেকে টাকা ক্রিকেটারদের ব্যাংক হিসেবে জমা হয়নি। দলটির ক্রিকেটারদের অভিযোগ আবারও বাউন্স করেছে চেক। কেউ কেউ বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষার কথাও বলছেন।
চেক পাওয়ার দিন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে নাটকীয় জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ চেক পাওয়ার প্রসঙ্গে মজা করে বলেছিলেন, ‘মিরপুরের উইকেটের মতো চেক বাউন্স না করলেই হয়…।” পরে রাতে টিম হোটেলে ফিরে দলের কর্ণধারদের একজনকে কাঁধে তুলে নেচে-গেয়ে উদযাপন করেছিলেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু সেই কর্ণধারদের কাছ থেকে আবার হতাশাই পেতে হলো ক্রিকেটারদের।
বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্বে প্রকাশ্যে আসে রাজশাহীর পারিশ্রমিক সমস্যা। কোনো টাকা না পাওয়ায় গত ১৫ জানুয়ারি অনুশীলন বয়কট করেন দলটির ক্রিকেটাররা। এমনকি ১৭ জানুয়ারির ম্যাচও না খেলার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দেন তারা। পরে বিসিবির হস্তক্ষেপে ও ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করে তাদের ম্যাচ খেলতে রাজি করায় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
সেদিনই পারিশ্রমিকের আরও ২৫ শতাংশ চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করার কথা জানানো হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম থাকতেই এক দফা প্রত্যাখ্যান হয় সেই চেক। পরে ঢাকায় ফিরেও চলতে থাকে এই নাটকীয়তা। পারিশ্রমিকের পরের অংশ না পাওয়ায় গত রোববার ম্যাচ খেলতে মাঠেই আসেননি রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা।
রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে সেদিন নজিরবিহীন ঘটনায় দেশিদের নিয়ে গড়া একাদশে খেলতে নামে রাজশাহী। দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেদিন ১২০ রানের পুঁজিতেও ম্যাচ জিতে নেয় তারা। মাঠে নামার আগেই তাদেরকে দেওয়া হয় আরেকটি চেক।
রাজশাহীর বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনো টাকা জমা হয়নি তাদের ব্যাংক হিসাবে।
দলটির ওপেনার সাব্বির হোসেনসহ একাধিক ক্রিকেটার অবশ্য আশায় আছেন, মঙ্গলবার ব্যাংক বন্ধ হওয়ার আগেই টাকা পেয়ে যাবেন তারা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমক সেই কথা বললেন সাব্বির।
“চেক জমা দিয়েছিলাম কালকে (সোমবার)। তবে টাকা এখনও একাউন্টে আসেনি। ব্যাংক থেকে বলেছিল, আজকে (মঙ্গলবার) পেয়ে যেতে পারি। ব্যাংক বন্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত তো সময় আছে। এর মধ্যেই হয়ে যাবে আশা করি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ক্রিকেটার আবার সেই অপেক্ষায় থাকতে রাজি নন। ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করা হলে নিজ থেকেই তিনি বললেন, বারবার চেক প্রত্যাখ্যান হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন তারা।
“শরীর খুব ভালো। কিন্তু অন্য কিছু তো ভালো নেই। আপনারাও নিশ্চয়ই জেনে গেছেন টাকা যে এখনও পাইনি। চেক আবার বাউন্স করেছে। আর তো আশা দেখছি না। ব্যাংকে ফোন করে যে খোঁজ নেব, সেটাও কেমন একটা লাগছে।”
“মালিকপক্ষ আসলে কী করতে চাচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। বারবার এই একই অবস্থা হচ্ছে। আমার তো মনে হয়, ব্যাংক থেকে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে বলে দেবে এসব ব্যক্তির লেনদেনে সমস্যা আছে। তখন দেখা যাবে, উল্টো আরও ঝামেলায় পড়ে যাব।”
রংপুরকে দুইবার হারানোর পর সোমবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে জেতে রাজশাহী। ওই ম্যাচে মাঠে আসেন দলটির পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটার। তবে একাদশে রাখা হয় শুধু রায়ান বার্ল ও আফতাব আলমকে।
প্রথম পর্বের ১২ ম্যাচ শেষে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফের খুব কাছাকাছি দলটি। তবে সেরা চারে তারা থাকবে কি না, সেটি জানতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। আর প্লে-অফে জায়গা পেলে তাদের পরবর্তী ম্যাচ সোমবার।
এখন আপাতত টিম হোটেলে অবস্থান করছেন ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করে ঢাকায় ফিরে হোটেল নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল তাদের। রোববার ম্যাচের আগে সকালে দা ওয়েস্টিন ছেড়ে শেরাটন হোটেলে পাঠানো হয় তাদের।
প্রথম পর্বের সব ম্যাচ খেলে ফেলার পর পারিশ্রমিক সমস্যায় এখন আর যেন বাধ মানছে না ক্রিকেটারদের। তাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মালিকপক্ষের কাছে স্পষ্ট বার্তা জানতে চাইবেন বলে জানান এক ক্রিকেটার।
“আর তো বেশি দিন বাকি নেই টুর্নামেন্টের। এখন ছেড়ে দিলে পরে তো কিছুই পাব না। তাই আমরা সবাই (ক্রিকেটাররা) মিলে বসব যে আসলে কী করা যায়। এরপর মালিকপক্ষের কাছে সমাধান চাইব। আর তো উপায় দেখছি না।”
নতুন করে চেক বাউন্সের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে রাজশাহীর ম্যানেজার ও জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার মেহরাব হোসেন জানান, তিনি নিজেও ভুক্তভোগী।
"গেম ডেভেলপমেন্টের মিটিং ছিল। তাই সকালেই আমি মাঠে চলে এসেছি। ঘটনাটা কী, আমার জানা নেই। টিম হোটেলে গিয়ে কথা হলে আমি জানতে পারব। কোনো ক্রিকেটার আমাকে এখনও পর্যন্ত কিছু জানায়নি। যেহেতু তারা কিছু বলেনি, তাই এখন মন্তব্য করতে চাই না।"
"আমি নিজেও এখনও পাইনি টাকা। মালিকপক্ষ আমাকে একটা তারিখ দিয়েছে। সেই দিনের অপেক্ষায় আছি। তবে অন্যান্য ক্রিকেটার বা বাকিদের ২৫ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। গত পরশু আরও ২৫ শতাংশ অর্থের চেক দেওয়া হয়েছে।"
দুর্বার রাজশাহীর অপারেশন ইন-চার্জ জায়েদ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি’ বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।
সোমবার সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচের পর টি-স্পোর্টসে রাজশাহীর কর্নধার শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবসময়ই বোনাস দিই। শিগগিরই ঘোষণা শুনবেন।’ তবে তার এই কথা শুনে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান দলটির এক ক্রিকেটার, ‘বোনাস রেখে দিতে বলেন। আমাদের প্রাপ্য টাকা আগে দিক তারা।’
বিপিএলে পারিশ্রমিক সমস্যা সমাধানে শনিবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইতিবাচক খবরের আশ্বাস দেন গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য ও বিসিবি পরিচালক মাহবুব আনাম। এরপর ৭২ ঘণ্টা হতে চলল, সেই সমস্যাও চলছেই।